ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

লে. কর্নেল ডাঃ নাসির উদ্দিন আহমদ

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন

প্রকাশিত: ০০:১০, ১৭ মে ২০২২

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন

আজ ১৭ মে। বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস। এবারের এ দিবসটির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে- সঠিকভাবে রক্তচাপ মাপুন, নিয়ন্ত্রণ করুন, সুস্থ থাকুন দীর্ঘদিন। বিশ্বব্যাপী ১২০ কোটিরও বেশি মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। স্ট্রোক, হৃদরোগ, কিডনি বিকল হয়ে যাওয়ার পেছনে উচ্চ রক্তচাপ অনেকাংশে দায়ী। উচ্চ রক্তচাপ একটি নীরব ঘাতক। উচ্চ রক্তচাপের কারণ- শতকরা ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের কারণ অজানা। হরমোন ঘটিত কিছু রোগব্যাধি, কিডনির রোগ, স্টেরয়েড জাতীয় এবং অন্যান্য কিছু ওষুধ শতকরা ৫ থেকে ১০ ভাগ রক্তচাপের জন্য দায়ী। এছাড়া গর্ভকালীন অবস্থায় সাময়িক সময়ের জন্য কেউ কেউ উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হতে পারে। তবে অনেকগুলো উপাদান উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। বয়স, স্থূলতা, অতিরিক্ত চর্বি ও লবণ জাতীয় খাবার গ্রহণ, বংশগত ধারা, আয়েশি যাপিত জীবন, অতিরিক্ত মানসিক অভিঘাত উচ্চ রক্তচাপের অন্যতম প্রধান ঝুঁকি। লক্ষণ ও ক্ষতিকর প্রভাব- সাধারণত উচ্চ রক্তচাপের তেমন কোন লক্ষণ প্রকাশ পায় না। কখনও কখনও উচ্চ রক্তচাপের কারণে মাথাব্যথা, নাক থেকে রক্তক্ষরণ, ঝাপসা দৃষ্টি, বুক ধরফর ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়। রক্তচাপ খুব বেড়ে গেলে বমি, বুকে ব্যথা, অস্থিরতা, শারীরিক দুর্বলতা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়। এটি নিরবে নিভৃতে রক্তনালি এবং হৃদপি-ের ক্ষতি সাধন করে থাকে। ফলে হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়। হার্ট ফেইলরের পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে রক্তচাপ। অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ চোখের সবচেয়ে সংবেদনশীল স্তর রেটিনা ক্ষতি সাধন করে। ফলে দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে আসে। কিডনি ফেইলরের পেছনে উচ্চ রক্তচাপ অনেকাংশে দায়ী। এজন্য উচ্চ রক্তচাপকে বলা হয় নীরব ঘাতক। রক্তচাপ নির্ণয়- হৃৎপি- যখন সঙ্কুচিত হয় তখন রক্তনালীতে যে চাপ অনুভূত হয় সেটা হচ্ছে সিস্টোলিক রক্তচাপ। আর হৃৎপি- যখন প্রসারিত হয় তখন রক্তনালীতে চাপ কমে আসে। সেটি হচ্ছে ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ। সিস্টোলিক ও ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ যথাক্রমে ১৪০ এবং ৯০ মি মি পারদের বেশি হলে তাকে বলা হয় উচ্চ রক্তচাপ। রক্তচাপ নির্ণয় করা অত্যন্ত সহজ। এটির জন্য হাসপাতাল কিংবা ল্যাবরেটরিতে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ঘরে বসেই রক্তচাপ মাপক যন্ত্রের সাহায্যে যে কেউ এটি নির্ণয় করতে পারেন। তবে অনেকেই সঠিকভাবে রক্তচাপ পরিমাপ করতে পারেন না। সেজন্য অভিজ্ঞ কারও কাছ থেকে এটি নির্ণয়ের পদ্ধতি জেনে নেয়া অত্যন্ত জরুরী। সাময়িক রক্তচাপ বৃদ্ধি- কখনও সাময়িক সময়ের জন্য রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে। পরিমাপ করে একবার রক্তচাপ বেশি পেলেই উচ্চ রক্তচাপ বলা যৌক্তিক হবে না। বিশেষত অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসকের সামনে এলে কারও কারও মানসিক উদ্বিগ্নতার কারণে রক্তচাপ সাময়িক সময়ের জন্য স্বল্পমাত্রায় বেড়ে যেতে পারে। এটা কে বলা হয় হোয়াইট কোট হাইপারটেনশন। এমনটি হওয়া বিচিত্র নয়। সেজন্য একবার ডাক্তারের চেম্বারে এসে রক্তচাপ বেশি পেলেই তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসা শুরু করে দেয়া অনুচিত। সেজন্য রক্তচাপ একাধিকবার মেপে যদি এটি সার্বক্ষণিক বেশি পাওয়া যায় তাহলে কেবলমাত্র ওষুধ শুরু করতে হবে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে করণীয়- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য সাধারণ কিছু নিয়মাবলী অবশ্যই মেনে চলতে হবে। যাপিত জীবনের মাঝে আনতে হবে পরিবর্তন। লবণ গ্রহণ সীমিত করতে হবে। দৈনন্দিন লবণ গ্রহণের পরিমাণ হবে দেড় গ্রাম। চর্বি জাতীয় খাবার গ্রহণে সচেতন হতে হবে। তবে মাছের চর্বি উচ্চ রক্তচাপের জন্য উত্তম। শরীরের অতিরিক্ত ওজন ঝেটে বিদায় করতে হবে। খাদ্য তালিকায় স্থান দিতে হবে শাকসবজি, বাদাম, ফলমূল ইত্যাদি। নিয়মিত শরীর চর্চার ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। সপ্তাহে অন্তত ৫ দিন ১৫০ মিনিট জোর কদমে হাঁটার অভ্যাস করতে হবে। মানসিক অভিঘাত থেকে মুক্ত থাকার জন্য প্রার্থনা, মেডিটেশন, ইয়োগা, পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো, বাইরে ঘুরতে যাওয়া ইত্যাদি করা যেতে পারে। ঘুমাতে হবে প্রতিদিন অন্তত ছয় থেকে সাত ঘণ্টা। ধূমপান এবং এ্যালকোহল সম্পূর্ণ বর্জন করতে হবে। এ সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে প্রয়োজনীয় ওষুধ শুরু করতে হবে। যে কোন প্রকারে রক্তচাপকে অবশ্যই কাক্সিক্ষত সীমানার মাঝে রাখতে হবে। নয়ত বিপদ। লেখক : মেডিসিন স্পেশালিস্ট ও এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট, সিএমএইচ, ঢাকা। চেম্বার : আল রাজী হাসপাতাল (২য় তলা) ফার্মগেট, ঢাকা। ০১৭৫৬১৭৩৭৬৫, ০১৭২৬০৫০৯১২
×