ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

লালমনিরহাটে ব্যতিক্রমী চিত্র

বৈরী আবহাওয়ায় ধান কাটতে এগিয়ে এসেছেন নারী শ্রমিকরা

প্রকাশিত: ২৩:১৯, ১৭ মে ২০২২

বৈরী আবহাওয়ায় ধান কাটতে এগিয়ে এসেছেন নারী শ্রমিকরা

নিজস্ব সংবাদদাতা, লালমনিরহাট ॥ ধান কাটা কৃষি শ্রমিকের সঙ্কট নিরসনে এগিয়ে এসেছেন নারী শ্রমিকরা। কোমর পানিতে নেমে নারী শ্রমিকরা ধান কাটার কাজ করছে। বৈরী আবহাওয়ায় এ অবস্থায় মহাবিপাকে কৃষক পরিবার। জেলার ৫ উপজেলা আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা, পাটগ্রাম ও লালমনিরহাট সদরসহ পার্শ্ববর্তী কুড়িগ্রাম এবং রংপুর অঞ্চলে ধানকাটা মাড়াইয়ের কাজে কৃষি শ্রমিকের সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। অতিরিক্ত পারিশ্রমিক দিয়েও ধানকাটা মাড়াইয়ের কাজে কৃষি শ্রমিক মিলছে না। এক বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমির ধান কাটা মাড়াইয়ের কাজে পারিশ্রমিক নিচ্ছে স্থান ভেদে সাড়ে ৩ হাজার টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা। সেই তুলনায় ধানের বাজার মন্দা। খোসা শুকনো কাঁচা ধানের মণ মাত্র সাড়ে ৭শ’ টাকা। বাজারে শুকনো ধান পাওয়া যাচ্ছে না। কাঁচা ধান কেনার ব্যবসায়ী পাওয়া যায় না। পানির দামে ফড়িয়া মহাজনদের কাছে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষক। এ অবস্থায় প্রতিটি গ্রামের বিস্তীর্ণ সোনালি পাকা ধানের খেত কাটার অপেক্ষায় পড়ে রয়েছে। যে দিকে চোখ যায় শুধু ধানের খেত আর খেত। মাঠে ঘাটে রাস্তায় উঠানে ধান মাড়াইয়ের দৃশ্য চোখে পড়বে। বাড়ির সবচেয়ে বয়োবৃদ্ধ ও শিশু সেও ধান মাড়াইয়ের কাজে হাত লাগিয়ে পরিবারকে সহায়তা করার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। পুরোদমে বোরো পাকা ধান কাটার মৌসুম শুরু হয়ে গেছে। ফসলের মাঠে একই সময় ধান পাকে। ধানের চারা রোপণে দুই/চার দিন কম-বেশি হয়। তাই ধান পাকেও দুই/ চার দিন কম বেশি সময় নিয়ে। যখন দূর হতে পাকা ফসলের মাঠ দেখে মনে হয় সোনা মাঠে পড়ে আছে। উত্তরাঞ্চল এক সময় সস্তায় কৃষি শ্রমিক মিলত। এখন সে দিন নেই। এখন ধান কাটা মাড়াই করার জন্য প্রয়োজনী কৃষিশ্রমিক ধানকাটা মৌসুমে পাওয়া যায়না। দিন দিন কৃষিশ্রমিক সঙ্কট তীব্র হচ্ছে। ইতোমধ্যে ধানকাটা মাড়াই করার কাজ প্রায় অর্ধেক যান্ত্রিকীকরণ হয়ে গেছে। তবুও শ্রমিক সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে পারা যায়নি। তবে আশার আলো হয়ে দেখা দিয়েছে গ্রামীণ কৃষি শ্রমিকের বাজারে নারী শ্রমিকগণ কায়িক শ্রমের কাজে ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত হচ্ছেন। এবারে গ্রামে বুক পানিতে নেমে নারীদের ধানকাটার কাজ করতে দেখা গেছে। যা কৃষিতে সুখবর হয়ে আনবে। এবারে রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম জেলায় ধান কাটা মৌসুমে কৃষিশ্রমিক সঙ্কট দেখা দেয়ার প্রধান কারণ চৈত্র ও বৈশাখ মাসে হঠাৎ আগাম বন্যায় হাওড় অঞ্চলে পাকা ধান তলিয়ে যায়। সেই তলিয়ে যাওয়া ধান কাটতে এ অঞ্চলে কৃষি কাজ করা দিনমজুর অতিরিক্ত মজুরির আশায় হাওড়ে ধান কাটার কাজে গেছে। তারা এখনও হাওড়ের ধান কেটে ফিরে আসেনি। ধামরাইয়ে এক মণ ধানের দামে এক শ্রমিকের মজুরি ॥ সংবাদদাতা ধামরাই ঢাকা থেকে জানান, ইরি ও বোরো ধানের নবান্ন উৎসবকে ঘিরে কৃষকের চোখে মুখে এখন হাসির ঝিলিক। কিন্তু বৈরী আবহাওয়া ও শ্রমিক সঙ্কটের কারণে কৃষকের সেই হাসি এখন ম্লান হয়ে যাচ্ছে। কারণ এক মণ ধানের দামেও একজন ধানকাটা শ্রমিক পাওয়া যায় না। ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নে ইরি ও বোরো ধান চাষ করা হয়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার পোকামাকড়ের বালা কম থাকায় ফলন ভাল হয়েছে। ফলন ভাল হলেও শ্রমিকের দাম চড়া হওয়ায় দিশাহারা হয়ে পড়েছে কৃষক। মান্দায় ১৬ বিঘা জমির ধান নষ্ট হচ্ছে জমিতেই ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা নওগাঁ থেকে জানান, নওগাঁর মান্দায় ১৬ বিঘা জমিতে রোপণ করা বোরো ধান নষ্ট হচ্ছে জমিতেই। পাকার পর সময়মত কেটে ঘরে না তোলায় ধান গাছগুলো মাটিতে নুয়ে পড়েছে। বর্তমানে তাতে চারা গজিয়ে সবুজ আকার ধারণ করেছে। এতে চলতি মৌসুমে ওই জমি থেকে অন্তত ৩০০ মণ ধান উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার মৈনম ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামে। গাইবান্ধায় মাঠ ভর্তি সোনালি ধান নিয়ে উদ্বিগ্ন ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা গাইবান্ধা থেকে জানান, উত্তরের জেলা গাইবান্ধায় এবার বোরো মৌসুমে ৭ লাখ ৭ হাজার ১৭৬ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষকদের পরিচর্যায় মাঠের ধান পেকে গেছে। সোনালি বর্ণে আর শীষে ধানগুলো কৃষকের উঠানে যাওয়ার অপেক্ষায়। এতে কৃষকের মুখে হাসি দেখা গেলেও শ্রমিক সঙ্কট, কালবৈশাখী ঝড় ও বৃষ্টির আশঙ্কায় কৃষকের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে গাইবান্ধা জেলার ৭টি উপজেলায় এক লাখ ২৭ হাজার ৭৮০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের ধান চাষ হয়েছে। এতে চাল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে চার লাখ ৪১ হাজার ৪৫১ মেট্রিক টন। তবে হিট শক ও পোকামাকড়সহ বিভিন্ন কারণে কিছু ফসল নষ্ট হলেও সার্বিক ফলন ভাল হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি অফিস। মাগুরায় বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে পাকা ধান ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা মাগুরা থেকে জানান, মাগুরায় কয়েক দিনের মুষলধারে বৃষ্টিপাতে নিচু মাঠের কাটা পাকা ধান তলিয়ে যায়। ফলে কৃষক বিপাকে পড়ে। বৃষ্টিতে বিচালি নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষক জানান, পাকা ইরি বোরো ধান কেটে মাঠে রাখা হয়েছিল তা পানিতে তলিয়ে যায়। আবহওয়া ভাল হওয়ার পর মাঠ থেকে ধানের আঁটি রোদে শুকানো হচ্ছে।
×