ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

অধ্যাপক ডাঃ কামরুল হাসান খান

শুধু ওমিক্রন নয় করোনার সব ভ্যারিয়েন্টে নজরদারি

প্রকাশিত: ২১:৩৮, ২৩ জানুয়ারি ২০২২

শুধু ওমিক্রন নয় করোনার সব ভ্যারিয়েন্টে নজরদারি

গোটা বিশ্বে নতুন করে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে করোনা সংক্রমণ- কোথাও তৃতীয় ঢেউ, কোথাও চতুর্থ ঢেউ। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন। গত ১৪ জানুয়ারি ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বে শনাক্ত হয়েছে ৩৩ লাখ ৯৪ হাজার ৭৮৫ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছে ৮ হাজার ৩৯২ করোনা আক্রান্ত রোগী। যুক্তরাষ্ট্রে-ইউরোপের করোনার প্রকোপ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। গত চব্বিশ ঘণ্টায় আক্রান্তের মর্মান্তিক মাইলফলক স্পর্শ করেছে দেশটি। এ সময়ে সে দেশে ১৩ লাখ ৩৫ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। একই সময়ে মারা গেছেন এক হাজার চারজন। হাসপাতালে রোগীর উপচেপড়া ভিড়। সব মিলিয়ে সঙ্কটময় মুহূর্ত পার করছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন। এদিকে ভারতে গত চব্বিশ ঘণ্টায় নতুন করে প্রায় আড়াই লাখ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শেষ ২৪ ঘণ্টায় ৩৮০ জন মারা গেছেন। শনাক্তের হার ১৩.১১%। ভারতের ২৭টি রাজ্যে ৫ হাজার ৪৪৮ জনের করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে। ওমিক্রনের সংক্রমণ আগামী ৬ থেকে ৮ সপ্তাহের মধ্যে ইউরোপের অর্ধেক অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়বে বলে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের একটি গবেষণা কেন্দ্রের বরাত দিয়ে সংস্থাটির ইউরোপ অঞ্চলের পরিচালক ডাঃ হ্যান্স ক্লুগ এক ব্রিফিংয়ে এ সতর্কতা উচ্চারণ করেন। তিনি আরও বলেছেন, ডেল্টার উপস্থিতির মধ্যেই ইউরোপের পূর্ব থেকে পশ্চিমে দেখা যাবে ওমিক্রন ঢেউ। ওমিক্রনে গুরুতর অসুস্থতার হার কম হলেও হাসপাতালে রোগী বেশি হওয়ায় চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে এই অঞ্চলের সরকারগুলো। কারণ, বছরের প্রথম সপ্তাহে ইউরোপের ৫৩টি দেশে করোনা শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ৭০ লাখ। হ্যান্স ক্লুগ এও বলেছেন, ওমিক্রনে মৃত্যুহার কম হওয়ায় খুব শিগগিরই এই ভাইরাসের চিকিৎসা সাধারণ ফ্লুর মতো হয়ে উঠবে। বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৪ হাজার ৩৭৮ জন হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১৬ লাখ ৯ হাজার ৪২ জন ছাড়িয়েছে। মৃত্যুবরণ করেছেন ২৮ হাজার ১২৯ জন। সকাল ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা সংক্রমিত ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে মোট ২৯ হাজার ৮৭৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ। সারাদেশে সরকারী ও বেসরকারী ব্যবস্থাপনায় ৮৫২টি ল্যাবে ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ হয়েছে । ইউরোপীয় মেডিসিন এ্যাজেন্সি বলেছে, ইউরোপ মহাদেশজুড়ে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের ছড়িয়ে পড়া কোভিড-১৯ কে ‘মহামারী থেকে স্থানীয় রোগে’ (এনডেমিক ডিজেস) পরিণত করছে। মানবজাতিকে এই রোগকে সঙ্গে নিয়েই বসবাস করতে হবে। এদিকে রেড ক্রস বলেছে, ওমিক্রনে দক্ষিণ এশিয়ার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ার হুমকিতে আছে। ডব্লিউএইচও বলেছে, করোনাভাইরাসের বিবর্তন হতে থাকা ধরনের বিরুদ্ধে বারবার বুস্টার ডোজ দেয়া কোন ভাল কৌশল হতে পারে না। বরং গরিব দেশগুলোকে টিকার প্রথম ডোজ পেতে আরও চেষ্টা চালাতে হবে। মানুষ যখনই নতুন স্বাভাবিকতা (নিউনরমাল) থেকে বেরনোর চেষ্টা করছে, তখনই নোভেল করোনাভাইরাসের নতুন কোন ধরন বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ‘সর্বশেষ’ বাধার নাম ওমিক্রন। অন্যান্য ধরনের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি গতিতে ছড়িয়ে পড়ায় ওমিক্রন নিয়ে দুশ্চিন্তা যেমন আছে, তেমনি আছে স্বস্তির কারণও। সবচেয়ে বড় সাহসের জায়গা হলো, এটি ডেল্টার মতো প্রাণঘাতী নয়। ডেল্টায় আক্রান্ত হলে যেখানে প্রতি ১০০ জনে ২ থেকে ৩ জনের মৃত্যু হয়, সেখানে ওমিক্রনে মৃত্যুর হার ০.০৩ শতাংশ। অর্থাৎ ওমিক্রনে আক্রান্ত প্রতি ৩২৯০ জনের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়। ওমিক্রনে আক্রান্তদের হাসপাতালে ভর্তির হারও কম; ০.৩৯ শতাংশ। গবেষকরা বলছেন, একটি জনগোষ্ঠীর কতজন ওমিক্রনে আক্রান্ত হবে, তা অনেকটাই নির্ভর করবে ওই জনগোষ্ঠীর এ্যান্টিবডির ওপর। অর্থাৎ, করোনার সর্বশেষ ঢেউয়ে যদি অনেক মানুষ আক্রান্ত হয়ে থাকে, তা হলে ওমিক্রন খুব একটা আঘাত হানতে পারবে না। দক্ষিণ আফ্রিকার সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ আবদুল করিম গত মাসে ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেছে, ওমিক্রনের আগে করোনার অন্যান্য ধরনে আক্রান্ত হওয়ায় দক্ষিণ আফ্রিকার ৭০ শতাংশ মানুষের শরীরে এ্যান্টিবডি ছিল। এ কারণে ওমিক্রন খুব একটা ক্ষতি করতে পারেনি। করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট প্রতিরোধে কার্যকর টিকা আগামী মার্চ মাসে প্রস্তুত হবে বলে আশা প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠান ফাইজার। গত সোমবার প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আলবার্ট বোরলা এ তথ্য জানিয়েছেন। বোরলা আরও জানান, আগামী মার্চে এই ভ্যাকসিনটি প্রস্তুত হয়ে যাবে। আক্রান্ত হওয়ার পর গুরুতর অসস্থ হয়ে পড়া ঠেকাতে বিদ্যমান দুই ডোজ টিকার প্যাকেজটি এবং একটি বুস্টার ডোজ এখনও মানুষকে যথেষ্ট সুরক্ষা দিচ্ছে। এদিকে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনবিসির সঙ্গে পৃথক এক সাক্ষাতকারে মডার্নার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্টেফান ব্যানসেল জানিয়েছেন, তারা করোনা টিকার একটি বুস্টার ডোজ তৈরির কাজ করছেন। এটি শেষ হলে টিকার ওই বুস্টার ডোজটি ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টসহ ভাইরাসের অন্য আরও সম্ভাব্য ধরনগুলোর বিরুদ্ধে কার্যকর হবে। করোনাভাইরাসের বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে তা নিয়মিত রূপান্তরিত হয়। এই রূপান্তরের প্রক্রিয়ায় ইতোমধ্যে বিশ্বে ভাইরাসটির অনেক ধরনের (ভ্যারিয়েন্ট) উৎপত্তি হয়েছে। এই ধরনগুলোর উৎপত্তি, বৈশিষ্ট্য, বিস্তার, সংক্রমণের ক্ষমতা, রোগের তীব্রতাসহ নানা বিষয়ে বৈচিত্র্য লক্ষণীয়। করোনার কোন কোন ধরন উৎপত্তির পর তা দ্রুত সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে। দীর্ঘ সময় ধরে আধিপত্য বজায় রাখছে। কখনও কখনও কোনটি আগের ধরনকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। আবার কোন কোন ধরন অপেক্ষাকৃত কম এলাকায় ছড়াচ্ছে। তুলনামূলক কম সময় এর প্রতাপ থাকছে। চীনের উহানে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। দ্রুতই চীন থেকে করোনা ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বে। ২০২০ সালের ১১ মার্চ করোনাকে বৈশ্বিক মহামারী ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। ২০২১ সালের মে মাসে করোনাভাইরাসের ধরনগুলোর নামকরণের উদ্যোগ নেয় ডব্লিউএইচও। সংস্থাটির ভাষ্যমতে, করোনার বিভিন্ন ধরন নিয়ে বিভ্রান্তি কমানোর পাশাপাশি যোগাযোগ সহজ করতেই এ উদ্যোগ। নামকরণের জন্য গ্রিক বর্ণমালার অক্ষর ব্যবহার করেছে ডব্লিউএইচও। এখন বিশ্বে সবচেয়ে দ্রুত ছড়াচ্ছে করোনার ওমিক্রন ধরন। গ্রিক বর্ণমালার পঞ্চদশ বর্ণ দিয়ে ধরনটির নামকরণ করা হয়েছে। ওমিক্রনের দাপটের মধ্যে সম্প্রতি সাইপ্রাসে করোনার একটি মিশ্র ধরন শনাক্ত হয়েছে। করোনার অতি সংক্রামক ডেল্টা ও ওমিক্রনের সংমিশ্রণের নতুন এই ধরনটির নাম স্থানীয় গবেষকেরা দিয়েছেন ‘ডেল্টাক্রন’। এই ধরনটি সম্পর্কে এখনো বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি। যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অ্যান্থনি ফাউসি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের সংস্পর্শে আসতে পারেন সবাই। তবে এর বিপরীতে আশার কথাও বলেছেন ফাউসি। তিনি বলেছেন, যারা টিকা নিয়েছেন, তারা এখনও ভাল অবস্থানে রয়েছেন। তিনি বলেন, ওমিক্রনের সংক্রমণ ক্ষমতা অস্বাভাবিক। শেষমেশ হয়তো এটি সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে। যারা টিকা নিয়েছেন, বুস্টার ডোজ নিয়েছেন, তারা এর সংস্পর্শে আসতে পারেন। তাদের মধ্যে অনেকেই আক্রান্ত হতে পারেন। তবে কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া টিকা নেয়া যারা আক্রান্ত হবেন, তাদের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া কিংবা মারা যাওয়ার আশঙ্কা কম। তবে যারা টিকা নেননি, তাদের বিষয়ে সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেছেন তিনি। বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের হার অস্বাভাবিক গতিতে বাড়ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে সংক্রমণের হার প্রায় ২২৩% শতাংশ বেড়েছে । সেই সঙ্গে বেড়ে চলছে হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তির সংখ্যা। তবে সংক্রমিতদের মধ্যে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনে আক্রান্তের হার ১৫ শতাংশ। বাকি ৭৫ শতাংশ রোগী অন্যান্য ধরনে আক্রান্ত। জার্মানির গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জার (জিআইএসএআইডি) তথ্য অনুযায়ী, গত বুধবার পর্যন্ত দেশে মোট ৩৩ জন ওমিক্রন আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকেও প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক মানুষ দেশে প্রবেশ করছেন। তাদেরও পরীক্ষার আওতায় আনা জরুরী। এ ক্ষেত্রে বন্দরগুলোতে র‌্যাপিড পিসিআর মেশিন বসাতে হবে। পরীক্ষায় যারা কোভিড-১৯ পজিটিভ হবেন তাদের করতে হবে কোয়ারেন্টিন। তাছাড়াও মানুষকে সচেতন করতে হবে বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে হবে। বিদেশ থেকে আসা নাগরিকদের এ্যান্টিজেন পরীক্ষা এরইমধ্যে বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। চলতি বছরের মার্চ মাসের মধ্যে দেশের ৭০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার। এ জন্য টিকাদান বাড়াতে দেশব্যাপী ৭১৮টি স্থায়ী এবং ৬০৫৮টি অস্থায়ী কেন্দ্রে টিকা দেয়া হচ্ছে। তবে নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এসব কেন্দ্রের পাশাপাশি এক লাখ ২৪ হাজার ৪৯৭টি অস্থায়ী কেন্দ্র টিকাদান শুরু করা হয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে যে ব্যক্তি যে টিকাই পেয়ে থাকেন না কেন, বুস্টার হিসেবে দেয়া হবে ফাইজার মডার্না, ফাইজার অথবা এ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা। দেশে এ পর্যন্ত এ্যাস্ট্রাজেনেকা, ফাইজার, মডার্না, সিনোফার্ম, সিনোভ্যাক মিলে টিকা এসেছে ২৩ কোটি ৫৯ লাখ ৪১ হাজার ২৯০ ডোজ। এর মধ্যে প্রথম ডোজ টিকা পেয়েছেন ৭ কোটি ৯০ লাখ ২ হাজার ২৪৩ জন। দুই ডোজ টিকা পেয়েছেন ৫ কোটি ৪৮ লাখ ৬৬ হাজার ১৭১ জন। বুস্টার ডোজ পেয়েছেন ৪ লাখ ২৮ হাজার ৫৯৬ জন। সব মিলিয়ে দেশে এ পর্যন্ত ১৩ কোটি ৪২ লাখ ৯৭ হাজার ১০ ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে। বর্তমানে মজুদ টিকার পরিমাণ ১০ কোটি ১৬ লাখ ৪৪ হাজার ২৮০ ডোজ। গত ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশে টিকা এসেছে ২৩ কোটি ৫৯ লাখ ৪১ হাজার ২৯০ ডোজ। আমরা জানি, ওমিক্রন একেবারেই কম মরণঘাতী। অন্যদিকে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট মরণঘাতী হিসেবে প্রমাণিত। সংক্রমণ বৃদ্ধির সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুর হার। সে কারণে আমাদের সব ভ্যারিয়েন্ট থেকে সতর্ক থাকতে হবে। বাংলাদেশে হাজার হাজার কোভিড শনাক্তের মধ্যে ওমিক্রন মাত্র ৩৩ জন এবং ভারতে লাখ লাখ শনাক্ত রোগীর মধ্যে ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে মাত্র ৫ হাজার ৪৮৮ জন। যেহেতু মৃত্যুর হারও বাড়ছে, সেক্ষেত্রে সব ভ্যারিয়েন্টের ওপর নজর রাখতে হবে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে করোনার নিয়ন্ত্রণ সীমা ৫% ছাড়িয়ে ১০% শতাংশ অতিক্রম করে দ্রুত গোটা দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে তাই একে প্রতিরোধ করার জন্য সবাই মিলে সকল কার্যকর ব্যবস্থা দ্রুত গ্রহন করতে হবে। নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে জীবন, অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জনজীবন সবই মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দেশের প্রত্যেক নাগরিকের সরকার ঘোষিত ১১ দফা স্বাস্থ্য বিধিনিষেধ যথাযথভাবে পালন করতে হবে। নইলে ব্যক্তি থেকে পরিবার-সমাজ সবাই অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ধরন বিপজ্জনক, বিশেষ করে যারা টিকা নেননি তাদের জন্য। গত বুধবার এসব তথ্য জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সংস্থাটি বলেছে, বিশ্বজুড়ে করোনার ওমিক্রন ধরনের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে।তবে সংক্রমণ থেকে বাঁচতে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। ডেল্টার চেয়ে ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগীর অসুস্থতা তুলনামূলক কম হলেও ওমিক্রন বিপজ্জনক। বিশ্বের বহু মানুষ করোনার টিকা নেননি। তাই নিশ্চিন্ত হওয়ার কোন সুযোগ নেই। দেশবাসীর নিজেকে, পরিবারকে করোনার ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করার জন্য এখন সরকার ঘোষিত ১১ দফা বিধিনিষেধ পালনের পাশাপাশি যে বিষয়গুলোর ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে- ১) মাস্ক ব্যবহার। বর্তমান সংক্রমণ পরিস্থিতিতে লেভেল-৩ মাস্কিং অনুসরণ করা বাঞ্ছনীয়। অফিস একা থাকলে এবং নিজের বাড়িতে কেবল মাস্ক খোলা যাবে। এছাড়া আর কোথাও মাস্ক খোলা যাবে না। ২) করোনা পরীক্ষা বাড়াতে হবে। ৮৫২টি করোনা পরীক্ষা কেন্দ্রকে সক্রিয় করতে হবে। প্রয়োজনে আরও বাড়াতে হবে। ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। বাংলাদেশে এ সময়ে সাধারণ মানুষ ঠা-াজনিত রোগে ভুগে। সে কারণে খুব গুরুত্ব দেয় না এবং করোনা পরীক্ষায় অনীহা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ৩) পরীক্ষার মান নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যেহেতু অতিমাত্রায় পরীক্ষার ফল পজিটিভ হচ্ছে, তাই করোনা পরীক্ষার সকল স্তরে মান নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ৪) পরীক্ষার পর রোগ শনাক্ত হলে দ্রুত কোয়ারেন্টিন বা আইসোলেসনের ব্যবস্থা করতে হবে। ৫) টিকা কার্যক্রম জোরদার এবং ত্বরান্বিত করতে হবে। টিকা গ্রহণকারীদের সংক্রমণের হার খুব কম। ৬) চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রণোদনার ব্যবস্থা এবং উৎসাহিত করতে হবে। ৭) জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে এবং নিরন্তর উদ্বুদ্ধ ও উৎসাহিত করতে হবে। করনাকালের বিগত দুই বছরের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, এমন অনেক দেশ আছে যারা কেবল যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদের জীবনযাপন স্বাভাবিক রেখেছে। আমাদেরও সে পথে হাঁটতে হবে। নইলে লকডাউন আবারও পিছিয়ে দেবে আমাদের সকল উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা। যে কোন নতুন আইন বা বিধিনিষেধ আরোপে সব সময় কিছুটা অসুবিধা হয়। ধৈর্য ধরে জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করতে পারলে তা সুদূরপ্রসারী কাজে দেয়। আমাদের সকলের সম্মিলিত অভিজ্ঞতা প্রয়োগ করে নিশ্চয়ই আমরা এ সঙ্কট মোকাবেলা করতে পারব। মনে রাখতে হবে? এটা একটি রোগ, যা যে কাউকে আক্রান্ত করতে পারে। তাই প্রতিরোধ করার দায়িত্বটা যার যার তার তার। সরকার যথেষ্ট সময়োচিত দায়িত্ব পালন করছে। সহযোগিতার হাত বাড়ানো। আমাদের সকলের নিজেদের স্বার্থেই অপরিহার্য। দেশের একটি পরিবারকেও যেন আর স্বজন হারানোর কষ্ট ভোগ করতে না হয়। লেখক : সাবেক উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়
×