ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ক্রাইস্টচার্চে বড় হারে স্বপ্ন ভঙ্গ টাইগারদের

প্রকাশিত: ২৩:১১, ১২ জানুয়ারি ২০২২

ক্রাইস্টচার্চে বড় হারে স্বপ্ন ভঙ্গ টাইগারদের

মোঃ মামুন রশীদ ॥ শেষটা সুন্দর হলো না, হতাশার এক পরাজয়ে সিরিজ জয়ের ইতিহাস গড়ার সুযোগ হাতছাড়া করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। মাউন্ট মঙ্গানুই থেকে ক্রাইস্টচার্চ- বদলে গেছে ফল। ৮ উইকেটে জয়ের পর, ইনিংস ও ১১৭ রানে হার। সিরিজটা তাই ১-১ সমতায় শেষ করে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ট্রফি ভাগাভাগি করেছে বাংলাদেশ। এ কারণেই অধিনায়ক মুমিনুল হকের কণ্ঠে নেই হতাশা, বরং আছে নিকট ভবিষ্যতেই বিদেশের মাটিতে সিরিজ জয়ের প্রত্যয়। তাছাড়া ফলোঅনে পড়ার পরও লিটন কুমার দাস যে ঝাঁঝের সঙ্গে ব্যাট চালিয়ে মাত্র ১১৪ বলে ১০২ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলেছেন তা চোখ ধাঁধিয়ে দিয়েছে অনেকের। তার পাশাপাশি আর কেই জ্বলেননি এতটা তাই ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টে রস টেইলরও ৮ বছর পর বল হাতে নিয়ে পেলেন উইকেট। হেরেও ইতিবাচক অনেককিছুই দেখছেন মুমিনুল। আর সিরিজের বিষয়টি বিবেচনায় এটি অভাবনীয় এক সাফল্যই বাংলাদেশের জন্য। কারণ বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চ্যাম্পিয়নের সঙ্গে প্রথমবার সিরিজ হার এড়ানোর গৌরব, কিউইদের বিপক্ষে প্রথমবার টেস্ট জয়ের কীর্তি এবারই গড়েছে টাইগাররা। তাই শুক্রবার মুমিনুলরা আগের যে কোন নিউজিল্যান্ড সফরের চেয়ে এবার মাথা উঁচিয়েই ফিরবেন দেশে। সফরকারী দল হিসেবে ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালে শুধু পাকিস্তানেরই ইনিংস ব্যবধানে হারের রেকর্ড আছে। গত বছর জানুয়ারিতেই তারা এ মাঠে হেরে যায় ইনিংস ও ১৭৬ রানের বড় ব্যবধানে। অথচ বাংলাদেশ দল এর আগে ২০১৭ সালে যখন এই মাঠে খেলে, হেরে যায় ৯ উইকেটে। ৫ বছর পর সেখানে খেলতে নামার আগে অনেক উজ্জীবিত, আত্মবিশ্বাসী ও প্রত্যয়ী ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। সেটি যে কোনবারের চেয়ে অনেক বেশি। কারণ এবার সিরিজের প্রথম টেস্ট ৮ উইকেটে জেতার অবিস্মরণীয় কীর্তিতে উদ্ভাসিত ছিল। সেই আত্মবিশ্বাসটা থমকে যায় প্রথম ইনিংসে নিউজিল্যান্ডের রানোৎসবে। নিজেদের পছন্দমতো এবং নিজেদের পরিচিত উইকেট ছিল না বে ওভালে। কিন্তু হ্যাগলি ওভালে সবকিছু ছিল যুতসই, ৬ উইকেটে ৫২১ রান করেছে তাই তারা। এমন উইকেটে বাংলাদেশের পেসারদের বোলিংয়ের অভিজ্ঞতা নেই। কোন লেংন্থে বল করে, কিভাবে বাউন্সার ছেড়ে ব্যাটারদের আটকানো যাবে সেই কৌশলটাও রপ্ত ছিল না। আর সবুজ ঘাসের গতিময় ও বাউন্সি উইকেটে ব্যাট চালিয়েই অভ্যস্ত কিউই ব্যাটাররা সফল হয়েছেন দারুণভাবে। এত বড় ইনিংসের ভার এবং কিউই পেসারদের মানানসই নিখুঁত বোলিংয়ে প্রথম ইনিংসে ১২৬ রানেই গুটিয়ে বাংলাদেশ দল আরও বড় চাপে পড়ে যায়। ফলোঅনে আটকে ম্যাচের তৃতীয় দিন ৩৯৫ রানের বিশাল বোঝা নিয়ে আর কতদূরই বা যাওয়া সম্ভব। তবু চেষ্টাটা করেছেন বাংলাদেশী ব্যাটাররা। আগের দিনের ব্যর্থতা ভুলে খুবই ধৈর্য নিয়ে শুরু করেও সাদমান ইসলাম ২১ (৪৮ বল), মুমিনুল ৩৭ (৬৩) ও নাইম শেখ ২৪ (৯৮) সাজঘরে ফিরেছেন কিউই ফিল্ডারদের দুর্দান্ত ক্যাচে। নাজমুল হোসেন শান্ত, লিটন দাস ও নুরুল হাসান সোহান ¯্রােতের বিপরীতে ব্যাট চালিয়েছেন। তাদের ব্যাটে ছিল আগুনের ফুলকি। শান্ত ৩৬ বলে ৫ চার, ১ ছক্কায় ২৯ এবং সোহান ৫৪ বলে ৭ চারে ৩৬ রানে আউট হন দারুণ ক্যাচে। এদের ছাড়িয়ে গেছেন লিটন। মাত্র ৬৯ বলে ফিফটি পাওয়া এ উইকেটরক্ষক ব্যাটার ১০৬ বলে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি তুলে নেন। এটি বিদেশের মাটিতে তার প্রথম শতক। হ্যাগলি ওভালে প্রথম বাংলাদেশী এবং শ্রীলঙ্কার দিমুথ করুণারতেœর পর দ্বিতীয় এশিয়ান হিসেবে সেঞ্চুরি হাঁকান তিনি। ষষ্ঠ উইকেটে সোহানের সঙ্গে মাত্র ১০৪ বলে ১০১ রানের জুটি দারুণ কিছুরই ইঙ্গিত দিচ্ছিল। কিন্তু সোহানের বিদায়ের আগে ইয়াসির রাব্বি (২) ও মেহেদি হাসান মিরাজ (৩) দ্রুতই সাজঘরে ফেরায় লড়াইটা একাই করেছেন লিটন। তিনিও ১১৪ বলে ১৪ চার, ১ ছক্কায় ১০২ রানে বিদায় নিলে ২৭৮ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। যবনিকাটা ঘটিয়েছেন টেইলর, তিনি ৩ বল করতেই এবাদত হোসেন (৪) টম লাথামকে ক্যাচ দিয়েছেন। ইনিংস ও ১১৭ রানে হেরে যায় বাংলাদেশ। কাইল জেমিসন ৪ ও নেইল ওয়াগনার ৩ উইকেট নেন। এ নিয়ে কিউইদের বিপক্ষে অষ্টমবার ইনিংস ব্যবধানে পরাজয় বরণ করল বাংলাদেশ। ৩ দিনেই হেরে যাওয়াতেও হতাশা নেই মুমিনুলের। তিনি বলেছেন, ‘এখন আমি ও দলের সবাই এখন বিশ্বাস করতে পারছি, আমাদের সামর্থ্য আছে। বিদেশে গিয়ে টেস্ট ম্যাচ জেতা যায়। এখন একটা টেস্ট জিতলাম, পরে আরেকটা টেস্ট জিতব, এভাবে এক সময় আমরা সিরিজ জিতব। তো ওই বিশ্বাসটা মনে হয়, সবার ভেতরে আনা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল।’ এখন এই বিশ্বাস নিয়েই অদূর ভবিষ্যতে বিদেশের মাটিতেও টেস্ট সিরিজ জেতার আশা মুমিনুলের। বিদেশের মাটিতে ২০০৯ সালে প্রথমবার সিরিজ জয় করে বাংলাদেশ দল। সেবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় সারির দলকে ২-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করে। এরপর জিম্বাবুইয়েতে গত বছর একমাত্র টেস্ট জিতেছে। এছাড়া কখনও সিরিজের ট্রফি নিয়ে ঘরে ফেরা হয়নি বিদেশ থেকে। সম্ভাবনাও তৈরি হয়নি কখনও। ২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কায় এবং ২০১৩ সালে জিম্বাবুুইয়েতে ১-১ সমতায় সিরিজের ট্রফি ভাগাভাগি করেছে শুধু সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট জিতে। কিন্তু ২০০৯ সালের পর এই প্রথম কিউইদের বিপক্ষে সিরিজ জেতার মোক্ষম সুযোগ তৈরি হয়। ক্রাইস্টচার্চ টেস্ট ড্র করলেই হতো। কিন্তু তা করতে পারেনি বাংলাদেশ দল। তবে কিউইরা এই প্রথম বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ জিততে ব্যর্থ হলো। আর বাংলাদেশ দল বিদেশের মাটিতে এ নিয়ে চতুর্থবার সিরিজ হারেনি (কমপক্ষে ২ ম্যাচের)। ৩ সিরিজ ড্র এবং একটি
×