ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঘটনার সত্যতা স্বীকার

বিয়েতে রাজি না হওয়ায় মা-মেয়েকে হত্যা, ঘাতক গ্রেফতার

প্রকাশিত: ২২:১১, ১০ জানুয়ারি ২০২২

বিয়েতে রাজি না হওয়ায় মা-মেয়েকে হত্যা, ঘাতক গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দীর্ঘ পাঁচ বছরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল জামালপুরের মেলান্দহের গোবিন্দপুর এলাকার মোছাঃ আকলিমা আক্তার স্বপ্নার (৩২) সঙ্গে অটোরিক্সাচালক আনোয়ার হোসেনের। মাস তিনেক আগে সে নারায়ণগঞ্জ থেকে রিক্সা বিক্রি করে নিজ এলাকায় চলে যায়। উদ্দেশ্য ছিল স্বপ্নাকে বিয়ে করার। কিন্তু বিয়েতে রাজি ছিলেন না স্বপ্না। এরই মধ্যে একাধিকবার ইচ্ছের বিরুদ্ধে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে আনোয়ার। সবশেষ ১ জানুয়ারি ধর্ষণের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে স্বপ্না ও তার মাকে বটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। ডাবল মার্ডারের এ ঘটনায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ছায়া তদন্ত শুরু করে। তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় শনিবার রাতে আনোয়ারকে শনাক্ত ও নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ গ্রেফতার করে সিআইডির এলআইসি শাখার একটি টিম। রবিবার দুপুরে মালিবাগে সিআইডির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির এলআইসি শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর বলেন, ১ জানুয়ারি জামালপুর জেলার মেলান্দহ উপজেলার গোবিন্দপুরে একটি বাড়ির আলাদা ঘর থেকে মা মোছাঃ জয়ফুল বেগম (৫০) ও মেয়ে আকলিমা আক্তার ওরফে স্বপ্নার গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। জয়ফুল বেগমের ওমান প্রবাসী দুই ছেলে হাসান চৌধুরী (২৮) ও খালেক চৌধুরী (২৬) সেই দেশ থেকে কল করে মা-বোনকে না পেয়ে মামা মানিক মিয়াকে তাদের বাড়িতে পাঠান। পরে মানিক মিয়া গিয়ে তার বোন ও ভাগ্নির গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় মানিক মিয়া অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মেলান্দহ থানায় মামলা দায়ের করেন। মুক্তা ধর বলেন, সিআইডি তদন্তে নেমে বিভিন্ন তথ্য ও উপাত্ত বিচার বিশ্লেষণ করে আনোয়ারের যোগসূত্র পায়। পরে শনিবার রাতে তাকে গ্রেফতার করা হয়। হত্যার ঘটনার নেপথ্যের কারণ সম্পর্কে মুক্তা ধর বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার আনোয়ার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে। সিআইডিকে জানিয়েছে, প্রায় পাঁচ বছর আগে নারায়ণগঞ্জে অবস্থানকালে স্বপ্নার সঙ্গে পরিচয় হয়। এরপর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দীর্ঘদিন ধরে আনোয়ার স্বপ্নার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করলেও স্বপ্নার জোরালো অসম্মতির কারণে তা সম্ভব হয়নি। প্রায় ২০/২৫ দিন ধরে আনোয়ার স্বপ্নার বড় ভাই জহুরুল চৌধুরীর বাড়িতে দালান নির্মাণের কাজ করে আসছিল। ১ জানুয়ারি রাতে স্বপ্না আনোয়ারকে ডেকে বলেন, তার ও তার মায়ের তীব্র মাথাব্যথা করছে। তিনি যেন কাজ শেষ করে তাদের জন্য ওষুধ নিয়ে আসেন। কাজ শেষে সন্ধ্যার পর আনোয়ার স্বপ্নাদের বাড়ি গিয়ে গল্প করতে থাকে। একপর্যায়ে স্বপ্না ও তার মায়ের রাতের খাবার শেষ হলে আনোয়ারের কাছে মাথাব্যথার ওষুধ চান। আনোয়ার অসৎ উদ্দেশ্যে তার সঙ্গে নিয়ে আসা ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যে একই কক্ষে ঘুমিয়ে পড়েন মা-মেয়ে। তখন আনোয়ার তার অবৈধ ইচ্ছা চরিতার্থ করার হীন উদ্দেশ্যে অচেতন স্বপ্নাকে পাশের কক্ষে নিয়ে যেতে চায়। একপর্যায়ে স্বপ্না জেগে যান। আনোয়ার জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক করার চেষ্টা করলে স্বপ্না বাধা দেন। আনোয়ার ব্যর্থ হয়ে ঘরে থাকা গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত ধারালো বটি দিয়ে স্বপ্নাকে হত্যা করে। এ সময় মা জয়ফুল বেগমও জেগে গেলে তাকেও কুপিয়ে হত্যা করে দরজা বন্ধ করে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় আনোয়ার।
×