ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আন্দোলন স্থগিত পরে নতুন কর্মসূচী

বৃষ্টি উপেক্ষা করে রাজপথে শিক্ষার্থীরা

প্রকাশিত: ২৩:০৯, ৭ ডিসেম্বর ২০২১

বৃষ্টি উপেক্ষা করে রাজপথে শিক্ষার্থীরা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বৃষ্টি উপেক্ষা করে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের স্মরণে মুখে কালো কাপড় বেঁধে সোমবারও রাজধানীর সড়কে নামেন শিক্ষার্থীরা। রামপুরা ব্রিজের ওপর অভিনব এমন প্রতিবাদ, মানববন্ধন করেছেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এসময় বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে মৌন প্রতিবাদ জানিয়েছেন তারা। মানববন্ধন থেকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে চলা আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী খিলগাঁও মডেল কলেজের শিক্ষার্থী সোহাগী সামিয়া কর্মসূচী চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। তবে আবহাওয়া ঠিক না হওয়া পর্যন্ত আপাতত আন্দোলন স্থগিত রাখার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। আবহাওয়া ঠিক হওয়ার পর সিটি কর্পোরেশনের ময়লার গাড়ির চাপায় নিহত নটর ডেম কলেজের ছাত্র নাঈম হাসানের কলেজ থেকে রামপুরায় বাস চাপায় নিহত একরামুন্নেসা স্কুল এ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী মঈনুদ্দিনের স্কুল পর্যন্ত সাইকেল র‌্যালি, মোমবাতি প্রজ্বালন ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সমাবেশ করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এদিকে, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত গ্রীন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী মাহাদি হাসান লিমনের ঘাতক গাড়ি চালকের বিচারের দাবি জানিয়ে মিরপুরে প্রতীকী কফিনসহ ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে মিছিল করেছেন তার সহপাঠীরা। রামপুরার মানববন্ধনে সোহাগী সামিয়া বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে আমরা আজ (মঙ্গলবার) কোন কর্মসূচী রাখছি না। যতদিন পর্যন্ত এই বৈরী আবহাওয়া থাকবে ততদিন পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন স্থগিত থাকবে। তবে বৈরী আবহাওয়া কেটে গেলে আবার কর্মসূচী চালিয়ে যাব। সে ক্ষেত্রে আমাদের কিছু সুনির্দিষ্ট কর্মসূচী আছে। একটি হচ্ছে- মঈনুদ্দিনের স্কুল থেকে নাঈমের কলেজ পর্যন্ত সাইকেল র‌্যালি ও নাঈমের কলেজে মোমবাতি প্রজ্বালন করব। অপরটি হচ্ছে ছাত্র-শিক্ষক সবাই মিলে একটি সমাবেশ করব। মুখে কালো কাপড় বেঁধে মানববন্ধনের বিষয়ে সোহাগী সামিয়া বলেন, এই যে এত সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে কিন্তু প্রশাসন বরাবরই নীরব ভূমিকা পালন করছে। প্রশাসনের এই নীরবতার প্রতিবাদে আমরা মুখে কালো কাপড় বেঁধে নীরব আন্দোলন পালন করছি। এর প্রথম কারণ হচ্ছে- আজ পর্যন্ত সড়কে যারা নিহত হয়েছেন, দুর্ঘটনায় তাদের প্রতি শোক প্রকাশ করার জন্য আমরা কালো কাপড় বেঁধেছি। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে- সরকারের নীরব ভূমিকার প্রতিবাদে আমরা আন্দোলন করছি। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী মোঃ আলী তুষার বলেন, অনিয়মের বলি হয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে এই প্রতিবাদী মানববন্ধন পালন করা হচ্ছে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, সরকার এখনও আমাদের দাবি মানেনি। কোন প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি। মালিক সমিতি হাফ ভাড়ার মৌখিক ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু আমরা প্রজ্ঞাপন জারি চাই। যতদিন সেটা না হচ্ছে, আন্দোলন চলবে। এদিকে সোমবার দুপুর ১টার দিকে মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বরে অবস্থান নেন লিমনের সহপাঠী ও গ্রীন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। তারা প্রতীকী কফিনসহ ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে সড়কে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী পালন করেন। নিরাপদ সড়কেরও দাবি জানিয়েছেন তারা। কর্মসূচী চলাকালে অল্প সময়ের জন্য মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বরে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেলেও শিক্ষার্থীদের তৎপরতায় আবার যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। এসময় শিক্ষার্থীরা সেখানকার ফুটওভার ব্রিজের নিচে অবস্থান নিয়ে সড়কে যান চলাচলের সুযোগ করে দেন। শিক্ষার্থীরা বলেন, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীর মাধ্যমে লিমনের মৃত্যুতে জড়িত ঘাতক চালকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়ে আমরা সড়কে নেমেছি। আমাদের দাবি নিরাপদ সড়ক। যেন সড়ক দুর্ঘটনায় আর কোন মায়ের বুক খালি না হয়। কোন শিক্ষার্থীসহ যে কোন মানুষ যেন সড়ক দুর্ঘটনার শিকার না হয়। তারা বলেন, আমরা একটি নীরব মিছিল নিয়ে আমাদের ইউনিভার্সিটি থেকে মিরপুর-১০ নম্বর পর্যন্ত এসেছি। কোন বিশৃঙ্খলা করিনি, শুধু দাবি নিয়ে সড়কে নেমেছি। মাহাদি হাসান লিমনের মৃত্যুতে দায়ী ট্রাক চালকসহ তার সহকারীকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে বিচার যেমন আমরা চাই, তেমনি নিরাপদ সড়ক চাই। ইচ্ছা করলে আমরা আন্দোলন করতে পারতাম, কিন্তু জনভোগান্তির কথা মাথায় রেখে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী পালন করেছি। উল্লেখ্য, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর গত ৭ নবেম্বর থেকে ঢাকাসহ সারাদেশে বাসের ভাড়া ২৬ থেকে ২৭ শতাংশ বাড়ানো হয়। পরিপ্রেক্ষিতে ১৮ নবেম্বর অর্ধেক ভাড়ার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে ২৪ নবেম্বর ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ময়লার গাড়ির চাপায় নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসান নিহত হন। পরে রামপুরায় মঈনুদ্দিন নামের এক শিক্ষার্থী অনাবিল পরিবহনের বাসের চাপায় নিহত হন। গত শুক্রবার রাতে নিহত হন গ্রীন ইউনিভার্সিটির ছাত্র মাহাদি হাসান লিমন। তাই সড়কে শিক্ষার্থী মৃত্যুর প্রতিবাদ, নিরাপদ সড়কের দাবি, অর্ধেক ভাড়াসহ ১১ দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা।
×