ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাড়ছে জঙ্গীপনার প্রশিক্ষণ

৩৪ রোহিঙ্গা শিবিরে মূর্তিমান আতঙ্ক আল ইয়াকিন গ্রুপ

প্রকাশিত: ২৩:৩২, ২৮ নভেম্বর ২০২১

৩৪ রোহিঙ্গা শিবিরে মূর্তিমান আতঙ্ক আল ইয়াকিন গ্রুপ

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হচ্ছে আশ্রয় শিবিরগুলো। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় গত চার বছরে বহু রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী-ডাকাত বন্দুকযুদ্ধে নিহত এবং গ্রেফতার হয়েছে। তারপরও থেমে নেই অস্ত্রধারীদের সন্ত্রাসী কর্মকা-। কারণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সংখ্যা সর্বোচ্চ ৩ হাজার। ৩৪ শিবিরে রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১২ লাখ। রাতের বেলায় গোপনে রোহিঙ্গা যুবকদের জঙ্গীপনার প্রশিক্ষণ চলছে। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডজনখানেক জঙ্গী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান করছে বলে জানা গেছে। তারাই গভীর রাতে যুবকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে জঙ্গী বানাচ্ছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনে পালিয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের দ্রুত সময়ে নিজের দেশে না ফেরালে তাদের ঘিরে সহজেই জঙ্গীবাদের বিস্তার ঘটার আশঙ্কার কথা বলে দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। সূত্র জানিয়েছে, উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন আশ্রয় ক্যাম্পে আল-ইয়াকিন নামধারী তথা আরসা ক্যাডারদের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। পাহাড়ী অঞ্চল ও ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় ডাকু প্রকৃতির কিছু রোহিঙ্গাদের লাগামহীন অপকর্মে শিবিরগুলো সন্ত্রাসের অভয়ারণ্যে পরিণত হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সফল অভিযানে গত চার বছরে সর্দারসহ বহু ডাকাত ও সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে রোহিঙ্গাদের অস্ত্র তৈরির একাধিক কারখানা। যৌথ বাহিনী নিরলসভাবে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। তারপরও একের পর এক জন্ম নিচ্ছে নতুন সন্ত্রাসী গ্রুপ। সাধারণ ভুক্তভোগী রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কথিত আরসা নেতা নুরুল আলম ওরফে মাস্টার জুবায়ের, কালা সেলিম, জকির, ৩ শীর্ষ ডাকাত নিহত হওয়ার পর স্বল্প সময়ের মধ্যে বেশ কয়েকটি ছোট ছোট গ্রুপের উত্থান হয়েছে। টেকনাফে হাসান গ্রুপ সাম্প্রতিক সময়ে বাহিনীটি শালবাগান, মোচনী নয়াপড়া ও লেদা রোহিঙ্গা শিবিরে মূর্তিমান আতঙ্ক হিসেবে দেখা দিয়েছে। এ বাহিনী বেশ কয়েকটি অপহরণ, মুক্তিপণ বাণিজ্য ও প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দেখিয়েছে। যা স্থানীয় ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপটি। টেকনাফে সন্ত্রাসী গ্রুপের প্রধান ওই হাসান শালবাগান আনসার ক্যাম্পে হামলা, অস্ত্র লুট ও আনসার কমান্ডার আলী হোসেন হত্যা মামলায় দীর্ঘদিন কারাভোগের পর জামিনে বের হয়ে এসে নতুন করে সন্ত্রাসী বাহিনী গঠন করেছে। পুরাতন ডাকাত বাহিনীর যেসব সদস্য দীর্ঘ এক বছর ধরে আত্মগোপনে ছিল, তাদের সংগঠিত করে গড়ে তুলেছে নতুন সশস্ত্র এই বাহিনী। সশস্ত্র বাহিনী গঠনের পর বর্তমানে ভয়ঙ্কর ডাকাত সর্দার ও আল ইয়াকিন গ্রুপের প্রথম সারির ক্যাডার এই হাসান ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। জেল ফেরত হাসানের বিরুদ্ধে অর্ধ ডজন মামলা রয়েছে। ডাকাত নুরুল আলমের ছোট ভাই ও কালা সেলিম বাহিনীর তৎকালীন সেকেন্ড ইন কমান্ড ও একাধিক মামলার আসামি সদ্য জেল ফেরত নুর কামাল, শীর্ষ ডাকাত মোঃ হাসেম, ডাকাত ভুলো, ইসমাইল, মুনিয়া, মাঙ্গাইয়া ও রাসেলসহ ২০-২৫ জন নতুন পুরাতন ডাকাত যোগ দিয়ে রোহিঙ্গা শিবিরে আবারও আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের পাহারা দিয়ে তারা জঙ্গীপনার প্রশিক্ষণ নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
×