ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আরিফুল ইসলাম সাকিব

তোমাদের জন্য বই ॥ রূপকথার গল্প

প্রকাশিত: ২০:৪২, ২০ নভেম্বর ২০২১

তোমাদের জন্য বই ॥ রূপকথার গল্প

‘রাজকুমার ও ইগলপাখি’ রূপকথার গল্পের বই। লিখেছেন তরুণ শিশুসাহিত্যিক জহির টিয়া। এটি লেখকের প্রথম বই। অমর একুশে বইমেলা-২০২১ এ প্রকাশিত হয়। বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় প্রকাশনী ‘অক্ষরবৃত্ত প্রকাশন’ হতে। চমৎকার পাঁচটি গল্প দিয়ে সাজানো বইটি সচিত্র, হার্ডবোর্ড বাঁধাই করা সম্পূর্ণ চার রঙা। রূপকথার গল্প মানে ছেলে ভুলানো অবাস্তব কল্পিত সব উদ্ভট কাহিনী। শৈশব স্মৃতিচারণেও নাড়া দেয় প্রতিটি ব্যক্তির হৃদয়ে। রূপকথার গল্প মানেই লোভনীয় কিছু। ভিন্ন স্বাদের মনোহরণ করার গল্প। এসব গল্প শুনতে ও পড়তে ভালবাসে না, এমন মানুষ পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। কল্পনার রাজ্যে হারিয়ে যাওয়া শিশুমনে আনন্দের বড় খোরাক। বিচিত্রময় এই জগতকেও হার মানায় এসব গল্প। দাদা-দাদি, নানা-নানির মুখের কাল্পনিক গল্পগুলো কতই না তৃপ্তিকর নাতি-নাতনির কাছে। বর্তমান আধুনিক যুগে এসেও এর স্বাদ এখনও অতুলনীয়। এখনও গ্রাম-গঞ্জে মানুষের মুখে মুখে রূপকথার গল্প শোনা যায়। শুধু আমাদের দেশে নয়, বিশ্বের প্রতিটি দেশেই এমন কল্পকাহিনী ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। বিশ্বসাহিত্যে রূপকথার গল্প এক বিশাল ভা-ার দখল করে আছে। এই বইয়ের প্রতিটি গল্পেই আছে নাটকীয় স্বাদ, কৌতূহল জাগানো আকর্ষণীয় জগত। বইয়ের প্রথম গল্পটি বইয়ের নামেই ‘রাজকুমার ও ইগলপাখি’। এই গল্পে লেখক বেশ চমৎকার শব্দ চয়নের দক্ষতা দেখিয়েছেন। গল্পের রাজকুমার হরিণ শিকারে বনে যায়। যাওয়ার আগে রাজপ্রাসাদে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সে বনের গভীরে প্রবেশ করবে না। কিন্তু এক হরিণের সৌন্দর্যে তার মন এমনভাবে আঁকড়ে ধরেছিল যে, সে একা আছে ভুলে গিয়ে বনের গভীরে ঢুকে পড়ে। হরিণের সঙ্গে লুকোচুরি করতে করতে ক্লান্ত অবস্থায় এক বটগাছের নিচে ঘুমিয়ে পড়ে রাজকুমার। পরবর্তীতে এক বাঘের ধাওয়া খায় এবং সেখান থেকে এক ইগলপাখি তাকে উদ্ধার করে। লেখক খুব মজার একটি গল্প উপহার দিয়েছেন আমাদের। বইয়ের দ্বিতীয় গল্প ‘রাফিজ ও মৎস্যকুমারী’। এই গল্পটিতে মৎস্যকুমারী এবং রাফিজ চরিত্র দিয়ে গল্পকার শিশুদের মাঝে চমৎকার একটি ম্যাসেজ দিয়েছেন। সাধারণত কোন গোষ্ঠী কিংবা জাতির মধ্য থেকে কারও অমানবিক আক্রমণের শিকারে হলে, তখন তার পুরো গোষ্ঠীকে আমরা তার অপরাধের জন্য খারাপ চোখে দেখি। কিন্তু এটি কি সঠিক চিন্তাধারা? গল্পকার এই ম্যাসেজটিই এখানে তাঁর গল্পে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। বইয়ের তৃতীয় গল্পটি ‘শিপলু ও লালপরি’। শিপলু বাড়ি থেকে প্রতিদিন সকালে বের হয় স্কুলে যাওয়ার জন্য। কিন্তু নিমতলায় আসলে সে উধাও হয়ে যায়। আবার স্কুল ছুটি হলে নিমতলা থেকে বাড়ি ফেরে। কিন্তু সে স্কুলে যায় না। তাহলে সে কোথায় উধাও হয়ে যায়? অদ্ভুদ! বড় অদ্ভুত! এমনই এক রহস্যময় গল্পটি। আমার কাছে খুবই ভাল লেগেছে। এই বইয়ের আরও একটি চমৎকার গল্প হচ্ছে ‘অকৃতজ্ঞ রাজা ও বুদ্ধিমান শেয়াল’। এই গল্পে রাজা চরিত্রে অকৃতজ্ঞের ফল কী করুণ হয় তা লেখক খুব সুন্দরভাবেই ফুটিয়ে তুলেছেন। রাজা ছিল এতিম। শেয়াল মশাই তাকে আদর-যতœ দিয়ে বড় করেছেন এবং তার কাছে কিছু গুপ্তধন ছিল তা রাজাকে দিয়ে এক রাজপ্রাসাদ গড়ে। এক সময় সেই শেয়ালকেই রাজ্য থেকে বের করে দেয়। এতে শেয়াল তার পাহাড়সম কষ্ট নিয়ে তার পুরনো গর্তে আবার ফিরে আসে। অতঃপর শেয়াল একদিন তার পালিত এক শেয়ালকে দিয়ে রাজ্যের সব গুপ্তধন চুরি করে নিয়ে এলো। এতে ধীরে ধীরে রাজা ধ্বংস হলো আর জয় হলো শেয়ালের। অসাধারণ কল্পনা শক্তি দিয়ে গল্পটি উপহার দিয়েছেন লেখক। বইয়ের শেষ গল্প ‘মৌরাজ্য মনু’ অতি মনোমুগ্ধকর। মনু নামের একজন শিশু মৌমাছির রাজ্যে গেল। কী কী অবলোকন করল। সেই বর্ণনা দারুণভাবে উপস্থাপন করেছেন লেখক। সবমিলিয়ে শিশু-কিশোর উপযোগী শিক্ষণীয় একটি দারুণ বই।
×