ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভোলার স্বীকারোক্তি চার্জশীটের পথ সুগম করেছে

প্রকাশিত: ২২:০৪, ২৫ অক্টোবর ২০২১

ভোলার স্বীকারোক্তি চার্জশীটের পথ সুগম করেছে

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে সংঘটিত চাঞ্চল্যকর মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার চার্জশীট প্রদানের পথ সুগম হয়েছে আসামি এহতেশামুল হক ভোলার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে। কিলিং স্কোয়াডের জন্য অস্ত্র ও গুলির যোগানদাতা ভোলা তার জবানবন্দীতে পরিষ্কার জানিয়েছে, মুছাকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়েই স্ত্রী মিতুকে খুন করায় বাবুল আক্তার। এখনও পর্যন্ত মিতু হত্যাকান্ডের পর থেকে মুছা পুলিশের খাতায় পলাতক। তবে তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই জানিয়েছে, মুছা ও কালুকে গ্রেফতারের চেষ্টা তারা অব্যাহত রেখেছে। দিন যতই গড়াচ্ছে স্ত্রী হত্যাকারী বাবুল আক্তারের কূটকৌশল যা মঞ্চ নাটককেও হার মানায় তা তদন্তে সুস্পষ্টভাবে উঠে আসছে। পিবিআই বলেছে, বাবুল আক্তার যাতে আইনের কোন ধরনের ফাঁকফোকরে পার পেয়ে যেতে না পারে সে বিষয়ে তৎপরতা নিয়ে চার্জশীট প্রদান করবে। মিতুহত্যা মামলার আসামি ভোলাকে গত শুক্রবার যশোরের বেনাপোল থেকে গ্রেফতার করেছে পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন)। মিতুহত্যা মামলার অন্যতম তিন আসামির মধ্যে অস্ত্র সরবরাহের দায়িত্ব ছিল ভোলার। পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পুলিশ নাঈমা সুলতানা জনকণ্ঠকে বলেন, জবানবন্দীতে ভোলা চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য দিয়েছে। বাবুল আক্তারের নির্দেশেই মিতুকে হত্যা করেছে বলে সে জানিয়েছে। এছাড়া হত্যাকান্ডে মুছার ভূমিকা কী ছিল, ভোলার সঙ্গে কীভাবে জড়িত, মুছা ও তাদের ভূমিকা কী ছিল এসব বিষয়ে নানা তথ্য দিয়েছে। শনিবার বিকেলে এহতেশামুল হক ভোলা চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম মোঃ শফি উদ্দিনের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে। আদালত সূত্রে জানা গেছে, বাবুলের সোর্স ভোলা তার জবানবন্দীতে উল্লেখ করেছে, মুছার মাধ্যমেই ২০০৮ সাল থেকেই বাবুল আক্তারের সঙ্গে তার পরিচয়। মূলত একটি মামলায় তার নাম অব্যাহতি দিতেই বাবুলের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে উঠে। এরপর থেকে বিভিন্ন তথ্য দিত ভোলা। ডবলমুরিং থানা এলাকার অবৈধ অস্ত্রের সন্ধান দিয়েছিল ভোলা। সেটির মাধ্যমেই বাবুল পদক পেয়ে প্রশংসিত হয়। পরে বাবুলের নির্দেশেই মুছাকে তার প্রতিষ্ঠানের চাকরি দেয় ভোলা। জবানবন্দীতে ভোলা আরও উল্লেখ করে, বাবুল আক্তার তার স্ত্রী নিয়ে পারিবারিক সমস্যায় আছে। এই তথ্যটি প্রথম জানায় মুছা। মিতুকে খুন করতে হবে বলে মুছাকে জানায় বাবুল। মুছা এ বিষয়ে তাকে জানালে প্রথমে রাজি হয়নি। এমনকি স্বয়ং মুছাও প্রথমে রাজি ছিল না। তাকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে স্ত্রী কিলিং মিশনের দায়িত্ব দেয়া হয়। এরমধ্যে ভোলা রাজি না হওয়ার বিষয়টি বাবুলের কানে পৌঁছায়। পরে ঝামেলা হবে বলেও হুমকি দেয়। এরপর মুছাকে অস্ত্র ও গুলি সরবরাহ করে ভোলা। বাবুল আক্তারের দেয়া টাকায় মুছা অস্ত্র ও গুলি সংগ্রহ করে ভোলার কাছ থেকে। সূত্রমতে, ভোলা তার জবানবন্দীতে আরও জানিয়েছে, মিতু হত্যার পর মুছা তার সঙ্গে বিকালে দেখা করে। তবে সকালে যখন মিতু হত্যার খবর মিডিয়ায় দেখে, তখন মুছাকে কল দিলে সে ফোন ধরেনি। বিকালে দেখা করতে এসে অস্বাভাবিক আচরণ করে। এমনকি সে বারবার বলতে থাকে যদি মিতু ভাবিকে না মারতাম, বাবুল আক্তারই ক্রসে দিত। বাবুলের স্ত্রী মিতুকে কিলিং মিশনের নেতৃত্বদাতা হিসেবে অভিযুক্ত কামরুল ইসলাম শিকদার মুছা বাবুল আক্তারের বিশ্বস্ত সোর্স। এই মুছা বাবুল আক্তারের বাসায় বাজার করে দিত। এমনকি বাবুলের যে কোন অনুষ্ঠানেও উপস্থিত থাকত। অপরদিকে মুছার বাসায় যাতায়াত ছিল বাবুলের। সিএমপির গোয়েন্দা বিভাগে কর্মরত থাকাকালীন সময়ের সোর্স মুছাকে বাবুল আক্তার ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদের সময় চেনেন না বলে জানায়। তবে পিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতারের পর বাবুল চলতি বছরের ১২ মে রিমান্ডে মুছাকে চেনার কথা স্বীকার করেন। মিতুহত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, শনিবার জবানবন্দী শেষে আদালত ভোলাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। তার কাছ থেকে আমরা বিভিন্ন তথ্য পেয়েছি। ভোলা জবানবন্দীতে উঠে আসা বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত দিয়ে তদন্ত কার্যক্রম চলছে। পিবিআই সূত্রে জানা গেছে, আসামি ভোলা ভারতে পালিয়ে যেতে চেয়েছিল। তবে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে বেনাপোল থেকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে গ্রেফতারে চট্টগ্রামের কয়েকজনের তথ্য সংগ্রহ করতে হয়েছে পিবিআইয়ের। এমনকি কিলিং মিশনে অংশ নেয়া মুছা-কালুর বিষয়ে জানতে মরিয়া পিবিআই। এরমধ্যে ভোলা পালিয়ে গেলে মামলাটির গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হারাত। তার জবানবন্দীতে মামলাটির গুরত্বপূর্ণ বেশ তথ্য এসেছে। তারমধ্যে মিতুর স্বামী সাবেক এসপি বাবুল যে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে তার স্ত্রীকে খুন করতে নির্দেশ দিয়েছে তা উঠে এসেছে। বাবুলের নির্দেশেই স্ত্রী মিতুকে হত্যা করার বিষয়টি ভোলার জবানবন্দীতে উঠে আসায় বাবুলের বিরুদ্ধে তদন্ত সংস্থার চার্জশীট প্রদানের পথ সুগম হয়েছে । আগামী সপ্তাহে মাগুরা যাচ্ছে তদন্তকারী কর্মকর্তা ॥ আগামী সপ্তাহের দিকে যেকোন সময় বাবুল আক্তারের ছেলে মেয়েকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই মাগুরা যাবে। সেখানে বাবুলের ভাইয়ের বাসায় রয়েছে বাবুলের ছেলেমেয়ে। আদালতের নির্দেশনা মেনেই তার ছেলেমেয়েকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। বাবুলের সন্তানদের চট্টগ্রামে এনে মিতুহত্যার ঘটনাস্থলে আনারও পরিকল্পনা রয়েছে বলে পিবিআই সূত্রে নিশ্চিত করা হয়েছে। বাবুল-মিতুর ছেলের বর্তমান বয়স ১২ এবং মেয়ের বয়স ৮। প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে মহানগরীর জিইসি মোড়ে কুপিয়ে ও গুলি করে মিতুকে হত্যা করা হয়।
×