ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ২৩:৫৩, ২২ অক্টোবর ২০২১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ মা, তোর বদনখানি মলিন হলে আমি নয়ন জলে ভাসি। বাংলা মায়ের মুখখানা এখন যারপরনাই মলিন। সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় বাঙালীর মাথা স্পষ্টতই হেঁট হয়ে আছে। সেই কবে ১৯৭১ সালে এ দেশ স্বাধীন হলো! তার আগে দীর্ঘ লড়াই সংগ্রাম। নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধ। সাম্প্রদায়িক পাকিস্তানকে ছুড়ে ফেলা। ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান। বিপরীতে বাঙালীর চাওয়া ছিল অসাম্প্রদায়িক একটি রাষ্ট্র, যে রাষ্ট্রে সব ধর্ম বর্ণের মানুষের সমঅধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করা হবে। রাষ্ট্রের কোন ধর্ম থাকবে না। ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্রে সকল ধর্মের মানুষ বিনা বাধায় নিজ নিজ ধর্ম পালন করবেন। অথচ সেই মৌল নীতির ওপরই কিনা কুঠারাঘাত হানা হলো সম্প্রতি। উগ্রবাদীরা একেক সময় একেক ছুঁতো নিয়ে সামনে আসে। ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় কুমিল্লার এক মণ্ডপে মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরান রেখে আসা হলো। পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে হামলা চালানো হলো মÐপে। কুমিল্লায় হামলা ঠেকানো গেল না। উল্টো তা অত্যন্ত সুকৌশলে ছড়িয়ে দেয়া হলো দেশের আরও কয়েকটি স্থানে। সাম্প্রদায়িকতার ইতিহাস যেমন পুরনো, তেমনি এর বর্তমান ট্রেন্ডটিও আমাদের জানা। কিন্তু পুলিশ বা প্রশাসন তার কিছুই জানত না! ফলে দুর্গোৎসবের আনন্দের পরিবর্তে কান্নার রোল উঠল রংপুরে। তাদের বসতবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, গোলায় রাখা ধান, কারও কারও উপার্জনের একামাত্র অবলম্বন সেলুন আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হলো। এমন নিষ্ঠুর আক্রমণে হিন্দুরা শুধু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তা নয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বহু যতত্ন লালন করে চলা বিবেকবান মানুষের মন ভেঙ্গে খান খান হয়ে গেছে। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া প্রগতিশীল একটি দল এখন ক্ষমতায়। এত পুলিশ র‌্যাব তাদের, এত গোয়েন্দা- সবাই ব্যর্থ। দেশের কোথায় নেই সরকারী দল আওয়ামী লীগ? কী করল দলটির নেতাকর্মীরা? উগ্র মৌলবাদীদের গুরুত্বপূর্ণ কয়েক নেতা এখন কারাগারে। তাদের পক্ষে ফেসবুকে চলছে অপপ্রচার। গুজবের পর গুজব। সাম্প্রদায়িক উস্কানি। তদুপরি সামনে জাতীয় নির্বাচন। ষড়যন্ত্রের নানা আলামত পাওয়া যাচ্ছিল নিয়মিতই। তার পরও পূজায় নিরাপত্তা বাড়ানো গেল না। আজ দেশের সে কী বদনাম! সেক্যুলার রাষ্ট্র বলে যে বড়াই সে বড়াই আর করা যাচ্ছে কই? প্রগতিবাদী মানুষ তাই ভীষণ কষ্টে আছে। অবশ্য এ কষ্ট নিয়ে কেউ ঘরে বসে নেই। বরং গোটা দেশজুড়েই চলছে প্রতিবাদ। বিশেষ করে বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহর ঢাকায় প্রতিদিনই বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করা হচ্ছে। শাহবাগ থেকে শুরু করে টিএসটি, অপরাজেয় বাংলা, জাতীয় প্রেসক্লাব সর্বত্রই ধর্ম ব্যবসায়ীদের রুখে দেয়ার শপথ। কোথাও বক্তৃতা হচ্ছে। কোথাও মানববন্ধন। মৌন মিছিল। নাট্যাভিনয়, কবিতার ভাষায়ও সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে। দাবি তোলা হচ্ছে ৭২-এর সংবিধানে ফেরার। সব দেখে পুনরায় আশাবাদী হয়ে ওঠে মন। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ তো, ঘুরে দাঁড়াবেই। ঢাকার প্রতিবাদ প্রতিরোধের ঢেউ দেশের প্রতি প্রান্তে ছড়িয়ে যাক। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর কালে স্বরূপে ফিরুক মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ। বাণিজ্যমেলার হ্যাপা থেকে মুক্তি \ এমনিতেই যানজটে নাকাল রাজধানীবাসী। তার ওপর আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার মতো বড় একটি আয়োজন। এ আয়োজনের কারণে বছরের নির্দিষ্ট একটি সময়ে শেরে বাংলা নগর, আগারগাঁও, শ্যামলী, মিরপুর, মোহাম্মদপুরসহ আশপাশের এলাকার যানজট বিচ্ছিরি আকার ধারণ করত। এ যানজট মানুষজটের প্রভাব পড়ত গোটা শহরে। তবে বাণিজ্যমেলার হ্যাপা থেকে শেষতক মুক্তি মিলছে রাজধানীবাসীর। আগেই জানা গিয়েছিল, মেলাটি সরিয়ে পূর্বাচলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেখানে বিশাল জায়গাজুড়ে প্রদর্শনী কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। মেলাও সেখানেই আয়োজন করা হবে। কিন্তু করোনাকালীন সঙ্কটের কারণে সেটি সম্ভব হচ্ছিল না। অবশেষে বৃহস্পতিবার প্রদর্শনী কেন্দ্রটির উদ্বোধন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি এর উদ্বোধন করেন। এর ফলে সামনের মেলাটি যে সেখানেই হবে তাতে কোন সন্দেহ রইল না। প্রদর্শনী কেন্দ্রটির নামকরণ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্র। ২০ একর জমির ওপর ২৪ হাজার ৩৭০ বর্গমিটার জায়গায় গড়ে তোলা প্রদর্শনী কেন্দ্রটি আধুনিক দৃষ্টিনন্দন। এখানে আরও স্বাচ্ছন্দ্যে মেলাটি আয়োজন করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। শুধু বাণিজ্যমেলা নয়, এখানে আরও নানা মেলা উৎসব ইত্যাদি আয়োজন করার কথা রয়েছে। আর তা হলে কিছুটা স্বস্তি মিলবে রাজধানীবাসীর। প্রভাব পড়তে শুরু করেছে হেমন্তের \ সে কী গরমাগরম অবস্থা চলছিল। শরতের শেষকটা দিন ভ্যাপসা গরমে বেশ ভুগতে হয়েছে রাজধানীবাসীকে। তবে হেমন্ত শুরু হওয়ার পর পরিস্থিতি কিছুটা বদলাতে শুরু করেছে। ষড়ঋতুর বাংলাদেশে দুই মাস পর পর রূপ বদলায় প্রকৃতি। সে ধারাবাহিকতায় কার্তিকের প্রথম দিন বাংলায় এসেছে হেমন্তল²ী। শীতের বাহন বলা হয় হেমন্তকে। অর্থাৎ হেমন্তই হাত ধরে নিয়ে আসবে শীতকে। এরই মাঝে লক্ষণগুলো স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। গত কদিনের বৃষ্টিতে গরম কিছুটা কমেছে। ঠাণ্ডার অনুভূতিও হচ্ছে শেষ রাতে। ভোরে ঝরছে শিশিরও। সামনের দিনগুলোতে আরও জোরালো হবে হেমন্তের প্রভাব। না গরম না ঠাণ্ডা পরিবেশে স্বস্তি ফিরে পাবে রাজধানীবাসী। হ্যাঁ, এ আশা করাই যায়।
×