ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ইভ্যালি পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণে পাঁচ সদস্যের বোর্ড গঠন

প্রকাশিত: ২৩:১৭, ১৯ অক্টোবর ২০২১

ইভ্যালি পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণে পাঁচ সদস্যের বোর্ড গঠন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গ্রাহক ঠকানোর অভিযোগে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি পরিচালনা, নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য আপীল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের বোর্ড গঠন করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার এই বোর্ড গঠন করে আদেশ দেন। বোর্ডের অপর সদস্যরা হলেন-সাবেক সচিব মোহাম্মদ রেজাউল আহসান, সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুবুল কবির, চার্টার্ড এ্যাকাউন্ট্যান্ট ফখরুদ্দিন আহম্মেদ ও সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ। আদালতে রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এ এম মাসুম ও সৈয়দ মাহসিব হোসেন। যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদফতরের রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এ কে এম বদরুজ্জামান। বাণিজ্য মন্ত্রণলায়ের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী তাপস কান্তি বল। আদালত খোলার এক মাস পর পরবর্তী দিন রাখা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে বোর্ড প্রথম বোর্ড মিটিং করে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করবে। আদালতে বিচারপতি বলেন, কোম্পানি সংক্রান্ত ফৌজদারি অপরাধের বিচার প্রচলিত আইন অনুযায়ী হবে। এ আদালত শুধু কোম্পানি সংক্রান্ত বিষয়গুলো দেখবে। এই কমিটির কাজ প্রসঙ্গে হাইকোর্ট বলেন, আদালতের আদেশ পাওয়ার পরপরই তারা (কমিটি) বোর্ড মিটিংয়ে বসবেন। কোথায় কী আছে সবকিছু বুঝে নেবেন। কোম্পানি যেভাবে চলে, সেভাবে প্রথমে বোর্ড মিটিং বসবে। তাদের (বোর্ড) দায়িত্ব হলো টাকাগুলো কোথায় আছে, কোথায় দায় আছে, তা দেখা। আদালত আরও বলেন, যদি দেখা যায়, কোন একটি মিটিং করা সম্ভব হচ্ছে না, তখন কোম্পানি কোর্টের সুয়োমুটো ক্ষমতা আছে। আদালত বোর্ড গঠন করে দিতে পারেন। এখন এই বোর্ড গঠন করে দেয়া হলো। কমিটি বসে বিষয়গুলো দেখবে। অডিট লাগবে, তারা অন্য কাজগুলোও দেখবেন। এরপর সবকিছু করার পর বোর্ড যদি দেখে কোম্পানিটি চলার যোগ্যতা নেই, তখন অবসায়নের জন্য প্রসিড করবে। কোম্পানি অবসায়ন চেয়ে আবেদনকারী আবেদন করেছে। তখন আবেদনকারীর সঙ্গে বোর্ডও বসবে, কোম্পানিটি অবসায়ন করতে হবে। আর যদি বলে চালানো সম্ভব, তাহলে কোম্পানিটি চলবে। আদালতের লিখিত আদেশ পাওয়ার পরই বোর্ড মিটিং করে নির্ধারিত আদালতে অগ্রগতি প্রতিবেদন দেবে এই কমিটি। আইনজীবী সৈয়দ মাহসিব হোসেন পরে বলেন, এই রিট আবেদনে পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে ইভ্যালির ব্যবসা ও ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণে নিতে আরজি জানানো হয়েছিল। এর প্রেক্ষিতে গত ২২ সেপ্টেম্বর আদালত ইভ্যালির সম্পদ বিক্রি ও হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। ‘সেদিন আদালত বলেছিলেন, পরিচালনা পর্ষদ গঠনের আরজি বিবাদীদের উপস্থিতিতে বিবেচনা করা হবে। এর আগে ১৩ অক্টোবর ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি পরিচালনার জন্য হাইকোর্ট যে কমিটি গঠনের কথা বলেছেন তার জন্য তিন জন সাবেক সচিবের নাম পাঠায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গত ১২ অক্টোবর ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি পরিচালনার জন্য কমিটি করে দেয়ার কথা বলেন হাইকোর্ট। একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, একজন সচিব, চার্টার্ড এ্যাকাউন্ট্যান্ট ও একজন আইনজীবীকে কমিটিতে রাখার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন আদালত। শুনানিতে আদালত আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, কোম্পানির দুজন সদস্য, দুজনই কারাগারে। কীভাবে বোর্ড মিটিং হবে? বোর্ড মিটিং করতে গেলেও তা করা যাচ্ছে না। বোর্ড মিটিং না করতে পারলে টাকা কোথায় কী আছে, সে বিষয়েও জানা যাচ্ছে না। সাবেক বিচারপতি, সচিব ও চার্টার্ড এ্যাকাউন্ট্যান্টসহ চার জন রাখা যেতে পারে। বেসরকারী কোম্পানিতে চার জনের বেশি সদস্যের দরকার নেই। গত ৩০ সেপ্টেম্বর ইভ্যালির সব নথি তলব করেছিলেন হাইকোর্ট। সে অনুযায়ী ১১ অক্টোবর বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চে সব নথি দাখিল করেন জয়েন্ট স্টক কোম্পানির রেজিস্ট্রার। তার আগে ২২ সেপ্টেম্বর ইভ্যালির স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি ও হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট। প্রসঙ্গত, একজন ক্রেতা ইভ্যালিতে পণ্য অর্ডার করার পাঁচ মাস পরও তা বুঝে না পাওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক গবর্নর, ই-ক্যাব, ভোক্তা অধিকারে বার বার অভিযোগ করেন। কিন্তু তাতে কোন প্রতিকার না পাওয়ায় ইভ্যালির অবসায়ন চেয়ে হাইকোর্টে একটি আবেদন করা হয়। ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে ইভ্যালির সব ধরনের সম্পদ বিক্রি-হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন আদালত। একইসঙ্গে ইভ্যালিকে কেন অবসায়ন করা হবে না, তা জানতে চেয়ে নোটিস জারি করেন আদালত। আবেদনে ইভ্যালি লিমিটেড, রেজিস্ট্রার জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ এ্যান্ড ফার্মস, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট, কনজুমার রাইটস প্রটেকশন ব্যুরো, নগদ, বিকাশ, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন, ই-ক্যাব এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, বেসিস, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্য সচিবকে বিবাদী করা হয়।
×