ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর ঢাবি ক্যাম্পাস

প্রকাশিত: ২২:২৭, ১৮ অক্টোবর ২০২১

শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর ঢাবি ক্যাম্পাস

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ করোনায় বিপর্যস্ত দীর্ঘ ১৮ মাস পর রবিবার সশরীরে ক্লাসে অংশ নিতে পেরেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ক্লাসে ফিরতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন তারা। পাশাপাশি সৃষ্ট সেশনজট দূর করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে প্রত্যাশা তাদের। এদিকে ক্লাস পরিদর্শনে গিয়ে ঢাবি উপাচার্য সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, সশরীরে পাঠদান ও পরীক্ষার মাধ্যমে বিশ^বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হলো। রবিবার সকাল ৮ টা থেকে বিভিন্ন বিভাগ, ইনস্টিটিউটে ক্লাস শুরু হয়। ফলে এর আগে থেকেই শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস। বিভিন্ন অনুষদের শ্রেণীকক্ষে প্রবেশমুখে হাত স্যানিটাইজ করা এবং তাপমাত্রা মাপা হয়। এসময় সকল শিক্ষার্থীর মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করা হয়। কলা ভবন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, কার্জন হলসহ বিভিন্ন একাডেমিক ভবন প্রাঙ্গণে শিক্ষার্থীদের সচেতনতা বাড়াতে নির্দেশিকা সংবলিত ফেস্টুন বসানো হয়েছে। ধাপে ধাপে গ্রন্থাগার, আবাসিক হল, সশীরের ক্লাস শুরুর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার, ক্যাফেটেরিয়া, টিএসসিসহ পুরো ক্যাম্পাসে আবারও করোনাপূর্ব স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে এসেছে। দীর্ঘদিন পর শ্রেণীকক্ষে বসে ক্লাস করতে পেরে আনন্দ প্রকাশ করে ফারসী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষার্থী তাইয়্যেবা তাবাসসুম বলেন, এতদিন পর সবাইকে একসঙ্গে দেখতে পেয়ে বেশ খুশি হয়েছি। ক্লাস চলাকালীন স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কর্তৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছে। অনেকের মাস্ক না থাকায় তাদের মাস্ক দেয়া হয়েছে। ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান কলাভবনের বিভিন্ন শ্রেণীকক্ষ ও পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। কলা অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক ড. সৈয়দ আজিজুল হক, ঢাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোঃ নিজামুল হক ভূইয়া এবং প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী এসময় তার সঙ্গে ছিলেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং শারীরিক ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে শিক্ষার্থীরা শ্রেণীকক্ষে উপস্থিত হওয়ায় উপাচার্য সন্তোষ প্রকাশ করেন। শ্রেণীকক্ষ পরিদর্শনে গিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরতে পেরে খুবই উচ্ছ্বসিত। তারা যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাসে অংশগ্রহণ করছে এটা সমগ্র জাতির জন্য অনুকরণীয়। একটি বিষয় খুবই আশাব্যঞ্জক যেসব শিক্ষার্থী ক্লাসে অংশগ্রহণ করেছে সকলেই ভ্যাকসিনেটেড। সবাই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন। এখানকার শিক্ষার্থীদের ক্লাসে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে অংশগ্রহণ দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং করোনা পরিস্থিতি উন্নতিতে সহায়তা করবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের লস রিকভারি প্ল্যান রয়েছে। সে অনুযায়ীই আমরা কাজ করছি। কারণ, আমরা চাচ্ছি শিক্ষার্থীদের যে সময়টুকু নষ্ট হয়েছে সে সময়টুকু যেন আমরা পুনরুদ্ধার করতে পারি। কম সময়ে অধিক কাজ করে, শ্রেণী কার্যক্রম পরিচালনা, পরীক্ষা গ্রহণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে সময় সাশ্রয়ী পদক্ষেপ গ্রহণ আমাদের লস রিকভারি প্ল্যানের মধ্যে রয়েছে। গত ৫ অক্টোবর মাস্টার্স ও অনার্স চতুর্থ বর্ষ এবং ১০ অক্টোবর অনার্স প্রথম দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষের জন্য আবাসিক হল খুলে দেয়া হয়েছিল। হলে ওঠার পূর্বশর্ত হিসেবে সকল শিক্ষার্থীকে করোনার অন্তত এক ডোজ টিকা নিতে হয়েছে। যারা বিভিন্ন কারণে টিকা গ্রহণ করতে পারেনি তাদের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে সহজেই শিক্ষার্থীরা টিকা নিতে পারবেন। উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরী সভায় গতকাল রবিবার থেকে সশরীরে ক্লাস শুরুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ঢাবি প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কোন বিভাগ বা ইনস্টিটিউট চাইলে সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ ক্লাস অনলাইনে নিতে পারবে। বাকি ৬০ শতাংশ ক্লাস সশরীরে নিতে হবে। সেশনজটের ক্ষতি পোষাতে সেমিস্টার ও বার্ষিক কোর্স পদ্ধতিতে সময় কমিয়ে নিয়ে আসার কথা জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
×