স্টাফ রিপোর্টার ॥ বেশ কয়েক দিন ধরে সারাদেশেই বেশ গরম অনুভূত হচ্ছে। ভ্যাপসা গরমে সীমাহীন কষ্ট পাচ্ছে মানুষ। আজ রবিবার থেকে শরত শেষে হেমন্তের শুরু। এ সময় শীতের আগমনী বার্তা পাওয়ার কথা থাকলেও গরমে টেকা দায়। দিনের বেলার তাপের সঙ্গে সঙ্গে রাতেও পাল্লা দিয়ে থাকছে।
আশ্বিনের শেষ, অর্থাৎ অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময়ে এত গরমের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, প্রতিবছর দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু দেশ অতিক্রম করার সময় বৃষ্টি ঝরায়। কিন্তু এবার খুব একটা বৃষ্টি না হওয়ায় বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি। তাই বেশি গরম অনুভূত হচ্ছে।
৩০ বছরের গড় তাপমাত্রাকে স্বাভাবিক তাপমাত্রা বলেন আবহাওয়াবিদরা। এ হিসেবে বেশ কয়েক দিন ধরে দিন ও রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ১ থেকে ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস বেশি ছিল। বৃষ্টি না হওয়ায় আর্দ্রতা বেশি। স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি তাপমাত্রা থাকায় এবার বছরের এ সময়ে তাপমাত্রা বেশি অনুভূত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।
আবহাওয়া অফিস জানায়, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ থাকায় গরম অনুভূত হচ্ছে। নিম্নচাপের কারণে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়, জলীয় বাষ্প ও মেঘ থাকে বেশি। বাতাসে সুপ্ত তাপ বেশি থাকে এবং গরম বেশি অনুভূত হয়।
জানা গেছে, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু এখন বাংলাদেশ অতিক্রম করছে। দেশে বিরাজ করার সময় সাগর থেকে তা মেঘ নিয়ে এসেছে। কিন্তু তা বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়েনি। এ কারণে সূর্যের তাপ ভূপৃষ্ঠে এলেও মেঘের কারণে তা ওপরের দিকে ফেরত যেতে পারছিল না, অর্থাৎ আটকে ছিল। কয়েক দিন ধরে সারা দেশেই তাপপ্রবাহ বিরাজ করছে।
গত এক সপ্তাহের আর্দ্রতার পরিসংখ্যান বলছে, পুরো সময়ই বরিশাল, চট্টগ্রাম ও খুলনার দু-একটি জায়গায় খুব সামান্য বৃষ্টি ছাড়া কোথাও তেমন বৃষ্টিপাত হয়নি। ১২ অক্টোবর সকাল নয়টার দিকে বাতাসে আর্দ্রতা ছিল তুলনামূলকভাবে বেশি। আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুসারে, সেদিন ঢাকা বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ আর্দ্রতা ছিল গোপালগঞ্জে ৮৩ শতাংশ। অন্য জায়গার মধ্যে সর্বোচ্চ আর্দ্রতা ছিল নেত্রকোনায় ৮০, ফেনীতে ৯৩, শ্রীমঙ্গলে ৭৭, বদলগাছীতে ৮৭, সৈয়দপুরে ৮০, কুমারখালীতে ৮২ ও ভোলায় ৮৪ শতাংশ।
আবহাওয়াবিদদের মতে, শীতের সময় আর্দ্রতা ৮০ শতাংশ পর্যন্ত থাকলেও ঠা-া লাগে। কিন্তু গরমের সময় ৬০ শতাংশ আর্দ্রতায়ও প্রচ- গরম লাগে। কারণ, একে তো তাপমাত্রা বেশি থাকে, তার ওপর ঘাম না শুকানোয় গরম লাগে আরও বেশি। এ ছাড়া সপ্তাহখানেক ধরে সারাদেশে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ১ থেকে ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস বেশি ছিল বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদেরা। গরম লাগার এটিও একটি কারণ।
আবহাওয়া অধিদফতরের সারাদেশের ৪৩টি পর্যবেক্ষণাগারের সব কটিতেই স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। আবহাওয়াবিদ মোহাম্মদ শাহীনুল ইসলাম বলেন, বছরের অক্টোবর-নবেম্বরে বৃষ্টি থাকলে তাপমাত্রা সহনশীল থাকে। আর বৃষ্টি না থাকলে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায়। একনাগাড়ে বৃষ্টি না হলে এই গরম কমে না। মোহাম্মদ শাহীনুল ইসলাম আরও বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব মৌসুমি বায়ু অক্টোবরের শেষার্ধের প্রথম দিকে বাংলাদেশ থেকে পুরোপুরি বিদায় নিতে পারে। এর সঙ্গে সঙ্গে শীতের আগমনী বার্তা শুরু হবে।
আবহাওয়া পূর্বাভাস অনুসারে, কাল থেকে সারা দেশেই কমবেশি বৃষ্টি হবে। তখন তাপমাত্রা কমতে পারে।