ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অচেনা শরত, তীব্র গরম মেঘেরও পালাবদল

প্রকাশিত: ২৩:০২, ৯ অক্টোবর ২০২১

অচেনা শরত, তীব্র গরম মেঘেরও পালাবদল

সমুদ্র হক ॥ এখন আর আকাশের মেঘ দেখে কিছুই বলা যায় না। নিকট অতীতে বলা যেত। আবহাওয়ার দ্রæত পরিবর্তনের পালায় মেঘের আচরণও বিরূপ। শরতের মেঘেরও পালাবদল ঘটছে দ্রæত। এই সাদা মেঘের ভেলা। ফের বৃষ্টি। তারপর চিটমিটে অসহনীয় গরম। শরতের শেষ প্রান্তের এমন আবহাওয়া দেখেননি প্রবীণ ও মধ্যবয়সীরা। শেষের বেলার শরতের দিনের চিত্র রাতের চিত্র পরিবর্তনের। দুপুরের দাবদাহের রেশ টেনে নিয়ে যায় রাতের অনেকটা সময়। মধ্যরাতের পর অবশ্য একটু শীতল। তবে অল্প সময়ের জন্য। তারপর ধেয়ে আসে প্রকৃতির তাপ। এই চিত্র শরতের চির চেনা পরিচিতি দেয় না। বগুড়ার প্রবীণ ব্যক্তি খায়রুল স্মৃতি মেলে বললেন- ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বরের শেষে পারিবারিক এক অনুষ্ঠানে শীতল অনুভূত হয়। তখন ছিল আশি^ন মাস। শরতকাল। একেবারে স্নিগ্ধ শরতের আভা ছিল আকাশে। বিকেলের পর কুয়াশা। সন্ধ্যায় শিশিরের মৃদু টুপটাপ বুঝতে অসুবিধা হতো না। প্রায় তিন যুগ পর সেই শরত কোথায় হারিয়ে গেল। জলবায়ু বিশেষজ্ঞগণের কথা : দেশগুলো উষ্ণ পৃথিবীর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। বগুড়ার কেন্দ্রস্থল সাতমাথায় বেলা একটার দিকে দেখা যায় রোদের তীব্রতায় জনচলাচল অনেকটা কমে গিয়েছে। ঘামে পুরুষদের জামা ভেজার চিহ্ন ফুটে ওঠে। মাস্ক পরে হাঁসফাঁস করতে গিয়ে কেউ কোভিড সুরক্ষা না করে খুলে ফেলে। নারীদের মাথায় ওড়না ও অবগুণ্ঠনে (মাথায় কাপড় দিয়ে) হাঁটতে দেখা যায়। নবাববাড়ি সড়কে গাছের নিচে গেঞ্জি গায়ে অবসন্ন দেহে দেখা যায় রিক্সা চালকদের। যাত্রীরা ‘এই খালি’ (এই রিক্সা) হাঁক দিলে হাত নেড়ে অপরাগতা জানায়। পথচারীদের স্বগোক্তি ‘আশি^ন মাসত ইঙ্কে অদ ক্য বা (আশি^ন মাসে এত রোদ কেন)’। পথের ধারের দোকানিদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দেয়া প্রচারের বড় ছাতার নিচে বেচাকেনা করতে দেখা যায়। কেউ চারধারে বাঁশ এঁটে ওপরে চাদর বিছিয়েছে। বেলের শরবত ও আইসক্রিম বিক্রি বেড়েছে। নিউ মার্কেটের দোকানিরা বললেন, দুপুরে খুব একটা বেচাকেনা হয় না, যা হয় বিকেলের পর থেকে রাত পর্যন্ত। বাসাবাড়িতে ফ্যান চলে অবিরাম। এখন উচ্চ বিত্ত অনেকের ঘরে তাপানুক‚ল (এয়ারকুলার) যন্ত্র আছে। সেগুলো সচল। রেফ্রিজারেটরে (ফ্রিজ) বরফ বাক্স ও ঠাণ্ডা পানির বোতল ভরে থাকছে। প্রাত্যহিক জীবনের এসব চিত্র বলে দেয় শরতের পরিবর্তিত রূপ কতটা। দেশে বর্তমানে কোন ঋতুই ঠিকমতো চেনা যায় না। শীতের প্রতীক্ষা কোন ফল দেয় না। মাঘ মাস শীতের থাবা না দিয়েই চলে যায়। ফাল্গুন আসে উষ্ণতার প্রলেপ নিয়ে। চৈত্র শুরু হয় চড়া রোদের দুপুরে বাউরি বাতাসের ধুলো উড়িয়ে। ক’বছর ধরে বর্ষার প্রাণ নেই। শরত, হেমন্ত, ঋতু শুধু কাব্যে। গ্রীষ্মটা একটু জানান দেয়। এবারের গ্রীষ্ম ও বর্ষা শরতে হানা দিয়েছে। ক্রমেই উষ্ণ হচ্ছে বায়ুমণ্ডল। হাজার বছরেও তা হয়নি। বিজ্ঞানীগণের তথ্য : গ্রীষ্মমণ্ডলীয় পর্যায়বৃত্ত পরিবর্তনে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা অন্তত এক মিটার বেড়ে তাপমাত্রা বিপজ্জনক মাত্রার একেবারে কাছাকাছি পৌঁছে যাবে। যা ডেকে আনবে বড় ধরনের বিপর্যয়। একই কথা ক’বছর ধরে বলছে। ভাঙ্গা রেকর্ড। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট, ভারতের আবহাওয়া গবেষণা বিভাগ কত যে গবেষণা করছে। ফলাফল ওই চড়ুই পাখির গল্পের মতো ‘ফুড়ুত’। আবহাওয়ার পরিবর্তনের কথা উঠলেই জলবায়ুর পরিবর্তনে এমনটি হবেই। গত শতকের এ সময়ের তাপমাত্রা পর্যালোচনা করে জানা যায় তাপমাত্রা ১ দশমিক ২২ ডিগ্রী সেলসিয়াস বেশি। বলা হয়েছিল চলতি বছর (২০২১) তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। তা তো বাড়ছেই। তা না হলে শরতে এমন গুমট আবহাওয়া অনুভূত হয়। কি হচ্ছে বিশ^জুড়ে কে জানে।
×