ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বেনাপোল বন্দর দিয়ে ফিরেছে ৩৫ নারী-শিশু

দুঃসহ কষ্ট, যাতনার আঁধার পেরিয়ে অবশেষে দেশে

প্রকাশিত: ২৩:৩৪, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১

দুঃসহ কষ্ট, যাতনার আঁধার পেরিয়ে অবশেষে দেশে

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ দুই বছর আগে কাজের জন্য স্বামী ভারতে নিয়ে যায় কিশোরী আসমাকে (ছদ্ম নাম)। কিন্তু কাজ নয়, আসমাকে বিক্রি করা হয় পশ্চিমবঙ্গের বসিরহাটের মাটিয়ার একটি পতিতালয়ে। একদিন ভারতীয় পুলিশ সেখানে অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করে তাকে। এ সময় উদ্ধার হন বাংলাদেশ থেকে কাজের উদ্দেশে দালালের মাধ্যমে পাচার হওয়া আরও চার নারী। দালাল তাদেরও মাটিয়া পতিতালয়ে বিক্রি করেছিল। পরে আদালতের মাধ্যমে তাদের পাঁচজনের আশ্রয় হয় কলকাতার ‘সুকন্যা’ হোমে। গত সোমবার বিশেষ ট্রাভেল পারমিটের মাধ্যমে তারা দেশে ফিরে এসেছেন। চার বছর আগে কাজের সন্ধানে ভারতে যাওয়া বাবা-মায়ের সঙ্গে ছিল সাত বছরের তপতী (ছদ্ম নাম)। সঙ্গে ছিল তার ভাইও। ওপারে পুলিশের হাতে বাবা-মা আটক হওয়ার আগেই হারিয়ে যায় তপতী ও তার ভাই। পুলিশ তাদের আলাদাভাবে উদ্ধার করার পর তপতীর ঠাঁই হয় সুকন্যায় আর ভাই চলে যায় আরেক হোম বারাসাতের ‘কিশোলয়ে’। জেল খেটে এক বছর আগে মা-বাবা দেশে ফিরে এলেও ভাইবোন এসেছে সোমবার। আসমা, তপতীদের মতো আরও ৩৫ বাংলাদেশী নারী ও শিশু গত সোমবার বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে ফেরত আসার সুযোগ পেয়েছে। তারা কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের সাতটি বেসরকারী আশ্রয় কেন্দ্র বা হোমে কয়েক বছর ধরে অবস্থান করছিল। এদের মধ্যে চারজন নারী, ১২ নারীশিশু এবং ২১ ছেলেশিশু রয়েছে। রাইটস যশোরের তথ্যানুসন্ধান কর্মকর্তা তৌফিকুজ্জামান বলেছেন, যারা ফিরে এসেছে তাদের বাড়ি নড়াইল, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, খুলনা, পিরোজপুর, গোপালগঞ্জ, বরিশাল, মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর, কুমিল্লা, রাজবাড়ী, কুড়িগ্রাম, সুনামগঞ্জ এবং ঠাকুরগাঁও। চারজনের বয়স ১৮-এর ওপরে হলেও ৩৩ জনের বয়স ১১ বছর থেকে ১৮ বছরের নিচে। সবাই নিম্নবিত্ত পরিবারের সদস্য। জাস্টিস এ্যান্ড কেয়ারের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার শাওলী সুলতানা জানান, মূলত কাজের উদ্দেশ্যেই তারা ভারতে পাড়ি জমায়। পাচার হওয়ার সময় বা সেখানে যেয়ে আটক হওয়ার সময় বয়স আরও কম ছিল। অনেকে পিতা-মাতার সঙ্গে বিনা পাসপোর্টে যেয়ে আটক হয়েছে বা অভিভাবক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পরে উদ্ধার হয়েছে। অনেককে বিক্রি করা হয় খারাপ জায়গায়। পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাদের উদ্ধার করে। সেখান থেকে সবাইকে আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠানো হয়। কলকাতার বাংলাদেশ উপহাইকমিশনের পলিটিক্যাল ফার্স্ট সেক্রেটারি শামীমা ইয়াসমিন স্মৃতি জানান, উপহাইকমিশন এবং নারী ও শিশু পাচার প্রতিরোধ টাস্কফোর্স যৌথভাবে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন শেল্টার হোমে আটক ৩৭ নারী ও শিশু-কিশোরকে দেশে ফেরত পাঠিয়েছে। একাজে সহযোগিতা করেছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। রাইটস যশোরের নির্বাহী পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক বলেন, তিনটি সংস্থার পক্ষ থেকে সার্ভাইভারদের গ্রহণ করা হয়েছে। কয়েকজনকে তাদের অভিভাবকের কাছে তাৎক্ষণিক তুলে দেয়া হবে। যাদের অভিভাবক আসেননি তাদের আপাতত যশোরের একটি শেল্টার হোমে রাখা হয়েছে। তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা শীঘ্রই এসে নিয়ে যাবে তাদের।
×