ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রামেক হাসপাতালে ধারণ ক্ষমতার বেশি করোনা রোগী

প্রকাশিত: ২৩:০৭, ২৪ জুন ২০২১

রামেক হাসপাতালে ধারণ ক্ষমতার বেশি করোনা রোগী

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ কঠোর ‘লকডাউনের’ পরও রাজশাহীতে কিছুতেই লাগাম টানা যাচ্ছে না করোনা সংক্রমণের। একই সঙ্গে করোনায় ‘মৃত্যুপুরী’ হয়ে ওঠা রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মৃত্যুর মিছিলও থামছে না। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বর্তমানে ধারণ ক্ষমতার বেশি রোগী রয়েছে। করোনা রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতেই হিমশিম চিকিৎসকরা। ঝুঁকিতে রয়েছেন সাধারণ রোগী। রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সুবিধাসহ ৪৮ বেডের আরও একটি ওয়ার্ড মঙ্গলবার চালু করা হয়েছে। এ নিয়ে হাসপাতালের করোনা ইউনিটে বেডের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৫৭টি। বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ৩৫৭ বেডের বিপরীতে মোট চিকিৎসাধীন রোগী আছেন ৪১০ জন। বাকিদের মেঝে ও বারান্দায় অতিরিক্ত বেড তৈরি করে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাজশাহীতে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায় গত ১১ জুন থেকে সিটি কর্পোরেশন এলাকায় প্রথমে এক সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণা করা হয়। পরে তা আরেক সপ্তাহ বাড়িয়ে ২৪ জুন রাত ১২টা করা হয়। এদিকে হাসপাতালে একের পর এক ওয়ার্ডকে করোনা ওয়ার্ডে রূপান্তর করার পরও করোনা ইউনিটে শয্যার তুলনায় সব সময়ই রোগীর সংখ্যা থাকছে অনেক বেশি। বাড়তি এ চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এমন পরিস্থিতিতে নতুন করে আরও একটি ওয়ার্ডকে করোনা ইউনিটে যুক্ত করা হয়েছে। এর বাইরে আরও দুটি ওয়ার্ডকে করোনা ওয়ার্ডে রূপান্তরিত করার কাজ চলছে। কিন্তু এত কিছুর পরও পরিস্থিতি সামলানো যাচ্ছে না। এদিকে ১ হাজার ২০০ শয্যার রামেক হাসপাতালে বর্তমানে চিকিৎসাধীন ৪৫০-এর বেশি করোনা রোগীর চিকিৎসা দিতে গিয়ে সাধারণ রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থা পড়েছে ঝুঁকির মুখে। হাসপাতালটিতে চিকিৎসাধীন সাধারণ রোগীদের মাঝেও করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ভয়ঙ্কর হিসেবেই দেখছেন চিকিৎসাসংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, ‘লকডাউনে’ কোন সুফল মিলছে না। এ অবস্থায় সব থেকে জরুরী হলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। বর্তমানে রামেক হাসপাতালে ধারণ ক্ষমতা ছাড়িয়ে গেছে করোনা রোগী। রাজশাহীর পার্শ্ববর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে কঠোর ‘লকডাউন’ শেষে চলছে বিশেষ বিধিনিষেধ। আর রাজশাহী শহরে ‘লকডাউন’ চলছে ১৪ দিন ধরে। কিন্তু এত কিছুর পরও এ দুই জেলায় সংক্রমণের মাত্রা কমছেই না। থামছে না মৃত্যুও। এদিকে করোনা ইউনিটে বাড়তি রোগীরা আছে চরম ঝুঁকিতে। কারণ শয্যায় জায়গা না হওয়ায় তারা সেন্ট্রাল অক্সিজেন সুবিধা পাচ্ছেন না। অথচ এখন যারা হাসপাতালে ভর্তি আছে তাদের সবারই প্রয়োজন হচ্ছে অক্সিজেন সুবিধার। বাড়তি রোগীদের সিলিন্ডার অক্সিজেন দিয়ে সেবা দেয়া হলেও তাদের ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। যেভাবে রোগী বাড়ছে, সেভাবে চিকিৎসা দেয়ার সক্ষমতা বাড়ানো যাচ্ছে না। ফলে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে বর্তমানে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এছাড়া করোনা রোগীদের জন্য নতুন নতুন ওয়ার্ড বাড়ানোর কারণে অন্য রোগের চিকিৎসা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ নওশাদ আলী বলেন, ‘পরিস্থিতি এখন আমাদের আর নিয়ন্ত্রণে নেই। লকডাউন দিয়েও ফল মিলছে না। এ অবস্থায় খুব জরুরী হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। বাড়িতে থাকলেও একজন আরেকজনের থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। মাস্ক পরতে হবে। কারণ বাড়ির বাইরে বের না হয়েও অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে অন্যের মাধ্যমে। এ অবস্থায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই। আর চিকিৎসা পরিস্থিতিও দিনদিন খারাপই হচ্ছে। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ভয়ঙ্কর অবস্থার দিকেই যাচ্ছি আমরা।’ রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, ‘আমরা যেটা খবর পাচ্ছি এখন মানুষে মানুষে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। লকডাউনও চলছে। আমাদের এখানে ভারতীয় বা ডেল্টা ধরন আছে। এজন্যই করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। রামেক হাসপাতালে সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হওয়া ৬০ জনের মধ্যে গ্রামের রোগী ৩৮ জন জানিয়ে ব্রিগেডিয়ার ইয়াজদানী বলেন, ‘এখন ৬০ শতাংশের ওপরে রোগী গ্রাম থেকে আসছে। গ্রামে যাতে মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানে এটি জরুরী ভিত্তিতে নিশ্চিত করতে হবে।
×