ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহী বগুড়া ও খুলনায় করোনায় ৩১ জনের মৃত্যু

প্রকাশিত: ২৩:০৮, ২২ জুন ২০২১

রাজশাহী বগুড়া ও খুলনায় করোনায় ৩১ জনের মৃত্যু

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ রাজশাহীতে লকাডাউনেও কমছে না মৃত্যু ও সংক্রমণ। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে চারজন পুরুষ ও নয়জন নারী। যাদের মধ্যে ছয়জনের করোনা পজিটিভ ছিল। বাকিরা উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এছাড়া নাটোরে করোনা ও উপসর্গে সাতজন, বগুড়ায় আটজন, নওগাঁয় তিনজন, খুলনায় ১০ জন, যশোরে চারজন, পঞ্চগড়ে একজন এবং ঝিনাইদহে চারজন করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, রবিবার সকাল ৬টা থেকে সোমবার সকাল ৬টার মধ্যে বিভিন্ন সময় মারা যান তারা। মৃতদের মধ্যে রাজশাহীর তিনজন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ছয়জন, নাটোরের তিনজন এবং নওগাঁর একজন। এ নিয়ে চলতি মাসের গত ২১ দিনে এই হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মারা গেলেন ২১৬ জন। রামেক হাসপাতাল পরিচালক জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৬২ জন। এর মধ্যে রাজশাহীর ৪৫ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৯, নাটোরের ৩, নওগাঁর ৩, পাবনার ১ জন ও জয়পুরহাটের ১ জন। সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ৩৪ জন। সোমবার সকাল পর্যন্ত ৩০৯ বেডের বিপরীতে মোট ভর্তি রোগী আছেন ৪০২ জন। এরমধ্যে রাজশাহীতে ২৬৪ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৭০ জন, নাটোরের ৩০ জন, নওগাঁর ২৯ জন, পাবনার ৫ জন, কুষ্টিয়ার ২ জন এবং চুয়াডাঙ্গার ২ জন রয়েছেন। আইউসিইউতে ভর্তি আছেন ১৯ জন। এদিকে, সীমান্তবর্তী জেলা রাজশাহীতে গত ১১ জুন থেকে চলছে ‘বিশেষ লকডাউন’। এরপরও রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মৃত্যুর সংখ্যা কমছে না। সেই সঙ্গে রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে করোনা রোগীদের জায়গা দেয়া সম্ভব না হওয়ায় হাসপাতালের আরও একটি সাধারণ ওয়ার্ডকে করোনা ওয়ার্ডে রূপান্তর করার কাজ চলছে। করোনা রোগীদের জন্য হাসপাতালের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে এখন অক্সিজেন সরবরাহ লাইনের কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক। রাজশাহী বিভাগে একদিনে করোনা সংক্রমণ হাজার ছাড়িয়েছে। সর্বশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগের আট জেলায় করোনা ধরা পড়েছে ৭৯৯ জনের। এর আগের দিন রোগী শনাক্ত ছিল ১ হাজার ২৩ জনের। সোমবার দুপুরের দিকে বিভাগীয় স্বাস্থ্য দফতরের সহকারী পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডাঃ নাজমা আক্তার স্বাক্ষরিত এক সংবাদবিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। নাটোরে সাতজন ॥ নাটোরে করোনাসহ উপসর্গে ৭ জন মারা গেছেন। এরমধ্যে সদর হাসপাতালে আব্দুর রহমান (৬০) ও লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে জামাত দফাদার (৮৮) নামে দুজন করোনায় এবং সদর হাসপাতালে মোশারফ (৫০) ও বাগাতিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ইনসার আলী (৫২) নামে একজন উপসর্গে মারা গেছেন। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যাওয়া ১৩ জনের মধ্যে ৩ জন নাটোরের বাসিন্দা। এদের একজন করোনায় এবং অপর দুজন করোনা উপসর্গে মারা গেছে। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় নাটোরে ৭৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। ২৩৩ জনের নমুনা পরীক্ষায় এ রেজাল্ট আসে। সিভিল সার্জন ডাঃ কাজী মিজানুর রহমান লালপুর ও সদর হাসপাতালে করোনায় দুজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে মৃত্যুর বিষয়ে কোন তথ্য বা কাগজ এখনও তারা হাতে পাননি। বগুড়ায় মৃত্যু ৮ ॥ গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির হার আগের দিনের চেয়ে দ্বিগুণের কাছে পৌঁছে সাড়ে ৩৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। একই সময় বগুড়ার তিনটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় করোনা আক্রান্ত পাঁচজন এবং করোনার উপসর্গ নিয়ে তিনজন মারা গেছেন। আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া পাঁচজনের মধ্যে ৩ জনের বাড়ি নওগাঁ ও ১ জনের জয়পুরহাটে এবং অন্যজনের বাড়ি বগুড়া সদর এলাকায়। অপর দিকে বগুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন মারা যাওয়া ৩ জনের মধ্যে এক জনের বাড়ি নওগাঁ এবং ২ জনের বাড়ি বগুড়ায়। এদিকে করোনা রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় বগুড়া মোহাম্মাদ আলী হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বগুড়ার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডাঃ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ২১৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করে নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছেন ৮৪ জন। পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ৩৮ দশমিক ৪৫ বলে তিনি জানান। করোনা ডেডিকেটেড বগুড়া মোহাম্মাদ আলী হাসপাতালে করোনার জন্য ১১৬টি শয্যার মধ্যে সোমবার সকাল পর্যন্ত রোগী ছিল ১০৭ জন। হাসপাতালের তত্ত¡াবধায়ক ডাঃ এটিএম নুরুজ্জামান সঞ্চয় জানান, উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় শয্যা সংখ্যা বাড়িয়ে ২শ’ করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। নওগাঁয় তিনজন ॥ নওগাঁয় করোনা আক্রান্ত এবং মৃত্যু দিন দিন বেড়েই চলেছে। কঠোর লকডাউন দিয়েও এ সংক্রমণের ও মৃত্যুর হার কমানো যাচ্ছে না। মানুষ যেন সরকারী বিধিনিষেধ মানছেই না। এই হার কমাতে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৫৪ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এই সময়ে নিয়ামতপুরে দুজন ও মহাদেবপুরে একজনসহ মোট তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৬৪ জন। গাইবান্ধায় ১২ জন শনাক্ত ॥ সোমবার পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় গাইবান্ধায় করোনায় নতুন করে ১২ জন শনাক্ত হয়েছে। তবে করোনা সংক্রান্ত নানা উপসর্গে সন্দেহজনকভাবে ১২ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। জেলায় হোম কোয়ারেন্টাইনে চিকিৎসা শেষে ছাড়পত্র নেয়া রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৪৫৮ জন। খুলনায় ১০ জন ॥ খুলনায় সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আওতায় ডেডিকেটেড ১৩০ শয্যার হাসপাতালে পাঁচজন, খুলনা জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে একজন এবং নগরীর বেসরকারী গাজী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চারজন মারা গেছে। খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত পাঁচজনের মধ্যে একজন করোনার উপসর্গে মৃত্যুবরণ করেন। এদিকে খুলনা সিভিল সার্জনের অফিসের কর্মকর্তা ডাঃ সাদিয়া মনোয়ারা ঊষা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ৬১৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ১৭৫ জনের করোনা শানাক্ত হয়। শনাক্তের হার ২৮ শতাংশ বলে তিনি জানান। যশোরে সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড ॥ যশোরে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৩০৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এটি জেলায় একদিনের সর্বোচ্চ আক্রান্তের রেকর্ড। এছাড়া মারা গেছেন ৪ জন। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৪৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৩০৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৪৭ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৪ জন। এদের মধ্যে দুজন করোনা রোগী এবং অপর দুজন করোনা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি আছে ১৩৭ জন। বাগেরহাটে শনাক্ত আরও ৮৬ ॥ বাগেরহাটে সোমবার সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৮৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। জেলায় এখন আক্রান্তের হার প্রায় ৪৩ শতাংশ। আর মংলা উপজেলায় ৬৭ শতাংশ। নতুন করে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে করোনায় এই জেলায় ৬৬ জন হয়েছে। ঝিনাইদহে মারা গেছে চারজন ॥ ঝিনাইদহে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে এক পুলিশ কনস্টেবলসহ মারা গেছেন চারজন। নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৯৫ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৩ হাজার ৪৯১ জনে। মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৭০ জন। পঞ্চগড়ে মৃত্যু ১ ॥ দেবীগঞ্জে করোনায় আক্রান্ত হয়ে আফরোজা আক্তার (৩৬) নামে এক মাদ্রাসা শিক্ষিকার মৃত্যু হয়েছে। সোমবার দুপুরে ট্রেপ্রিগঞ্জ ইউনিয়নের কোটভাজনি এলাকার নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে থাকা অবস্থায় তিনি মারা যান। তিনি ওই এলাকার খারিজা ভাজনি দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাকে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে। এদিকে, জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৫ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে সোমবার সকাল পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৮৯৬ জনে। নোয়াখালীতে আরও ১০৪ জন শনাক্ত ॥ নোয়াখালীতে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১০৪ জনের শরীরে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। নমুনা সংগ্রহের তুলনায় জেলায় শনাক্তের হার ২৩ দশমিক ৪২ শতাংশ। রবিবার রাত ১১টার দিকে এসব তথ্য প্রকাশ করেছে নোয়াখালী সিভিল সার্জন কার্যালয়। সাতক্ষীরায় ৪ জনের মৃত্যু ॥ গত ২৪ ঘণ্টায় সাতক্ষীরায় ১১৬ জনের নমুনা পরীক্ষা শেষে ৫০ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৪৩ দশমিক ১০ শতাংশ। আর ২৪ ঘণ্টায় সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে মোট ৪ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে একজন ও উপসর্গ নিয়ে তিনজন মারা গেছেন। এ নিয়ে জেলায় এ পর্যন্ত ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন মোট ৬১ জন। আর উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ২৭৪ জন। ঠাকুরগাঁওয়ে মৃত্যু ৩ ॥ জেলায় করোনায় একদিনে তিন ব্যক্তি রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। এছাড়া সর্বোচ্চ ৭৭ জন করোনা সংক্রমণ রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে জেলায় করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ৫৭ জনে আর জেলায় এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল দুই হাজার চার শ’ ১০ জনে। আক্রান্তদের মধ্যে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন এক হাজার ছয় শ’ ৫০ জন। এর আগে গত ১৭ জুন জেলায় সর্বোচ্চ ৬৪ জন করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। রবিবার রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সিভিল সার্জন ডাঃ মাহফুজার রহমান সরকার।
×