ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহী ও চট্টগ্রামে করোনার ভারতীয় ধরন নিয়ে উদ্বেগ

প্রকাশিত: ২৩:১৯, ১৫ জুন ২০২১

রাজশাহী ও চট্টগ্রামে করোনার ভারতীয় ধরন নিয়ে উদ্বেগ

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ রাজশাহী অঞ্চলে থামছেই না করোনায় মৃত্যুর মিছিল। প্রতিদিন বাড়ছে করোনায় মৃত্যু। আর সংক্রমণও ছড়াচ্ছে উচ্চহারে। এ পরিস্থিতিতে এখন রাজশাহীতে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে করোনার ভারতীয় ধরন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকোপ দেখে মনে হচ্ছে রাজশাহীতে ভারতীয় ধরন ক্রমেই সামাজিক সংক্রমণ করছে। এদিকে চট্টগ্রামেও মিলেছে করোনার ভারতীয় ধরন। খবর স্টাফ রিপোর্টারদের। রামেক হাসপাতালের পরিচালক শামীম ইয়াজদানি জানান, রোগীর চাপ থাকায় আরেকটি ওয়ার্ড তৈরি করা হচ্ছে। অক্সিজেন সুবিধাসহ নতুন ওয়ার্ডটি আজকের মধ্যে প্রস্তুত হয়ে যাবে বলে জানান তিনি। শামীম বলেন, যাদের অক্সিজেন প্রয়োজন হচ্ছে তাদের শুধু ভর্তি করা হচ্ছে। অন্যদের ব্যবস্থাপত্র দিয়ে বাড়ি থেকেই চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সবাইকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে পুরো হাসপাতালেও করোনা রোগী রাখার জায়গা হবে না। তিনি আরও বলেন, রাজশাহী নগরের এখন লকডাউন চলছে। আশা করছি দুই সপ্তাহ সর্বাত্মক লকডাউন বাস্তবায়ন হলে ভাল ফল পাব। রাজশাহীতে প্রতিনিয়ত করোনার সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পাওয়া চরম উদ্বেগের বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন কাইয়ুম তালুকদার। তিনি বলেন, প্রকোপ দেখে মনে হচ্ছে সামাজিক সংক্রমণ হচ্ছে। যেহেতু সীমান্ত এলাকায় স্বাস্থ্য অধিদফতর ভারতীয় ডেল্টা ধরনের ৮০ ভাগ উপস্থিতি পেয়েছে, সে হিসেবে ধারণা করা যায় রাজশাহীতেও ডেল্টা ধরনের উপস্থিতি রয়েছে। তিনি আরও বলেন, লকডাউনে চাঁপাইনবাবগঞ্জে সংক্রমণের হার কমলেও বেড়েছে রাজশাহীতে। আর রাজশাহীর মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ল²ীপুর। মূলত: এ এলাকায় করোনার রোগী ও তাদের স্বজনদের অবাধ চলাচলের কারণেই সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। অন্যদিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার শামীম ইয়াজদানি বলেন, রোগীদের বেড দেয়া যাচ্ছে না। এরপর চেষ্টা চলছে। নতুন করে একটি ওয়ার্ড বৃদ্ধি করা হয়েছে। আরও তিনটি ওয়ার্ড বাড়ানোর কাজ চলছে। তবে রামেকের বাইরে যতদ্রæত সম্ভব করোনা বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণ জরুরী। অন্যথায়, সাধারণ চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরাও ঝুঁকিতে পড়বেন। এদিকে রাজশাহীজুড়ে চরম উদ্বেগ বাড়াচ্ছে করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। ভারতের নতুন এ ভ্যারিয়েন্ট সীমান্ত জেলা রাজশাহীতে ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে চলছে সর্বাত্মক ‘লকডাউন’। সাত দিনের এ ‘লকডাউনের চতুর্থ দিন সোমবার অন্যদিনের তুলনায় রাজপথে মানুষের চলাচল লক্ষ্য করা গেছে। তবে ‘লকডাউন’ কার্যকরে কঠোর অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। রাজশাহী জেলা প্রশাসক রাজশাহীর সর্বাত্মক ‘লকডাউন’ পরিস্থিতি দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন। আর এ ‘লকডাউন’র কারণে কারও খাবারের সঙ্কট হলে তার দফতরে জানানোর অনুরোধ করেন। চট্টগ্রামেও ভারতীয় ধরন ॥ চট্টগ্রামেও দু’জনের শরীরে মিলেছে করোনার ভারতীয় ধরন (ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট)। সোমবার চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্য সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান গবেষকরা। যে দুজনের শরীরে ডেল্টা ধরন পাওয়া গেছে তাদের কেউই সাম্প্রতিক সময়ে ভারতে যাননি এমনকি ভারতফেরত কারও সংস্পর্শেও আসেননি। বিশ^বিদ্যালয় জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগ এবং আইসিডিডিআরবি যৌথভাবে এ গবেষণা পরিচালনা করে। চবিতে সংবাদ সম্মেলনে গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন গবেষণা দলের প্রধান প্রফেসর ড. মোহাম্মাদ আল ফোরকান। তিনি বলেন, আমরা চট্টগ্রাম বিভাগের সাতটি কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ ল্যাব হাসপাতাল থেকে ৪২টি নমুনা সংগ্রহ করে ধরন বিশ্লেষণ করেছি। এর মধ্যে ভারতীয় দুটি, নাইজিরীয় ৩টি, যুক্তরাজ্যের ৪টি এবং দক্ষিণ আফ্রিকার ৩৩টি ধরন পাওয়া গেছে। ভারতীয় ধরনে আক্রান্ত দুজন রোগীর কেউই স¤প্রতি ভারতে যাননি এবং তাদের জানামতে ভারত ফেরত কারও সংস্পর্শেও আসেননি। মে মাসের শেষের দিকে তাদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীন আখতার। তিনি বলেন, আমাদের এ সংবাদ সম্মেলন করার উদ্দেশ্য হলো সরকারকে এ বার্তাটি পৌঁছে দেয়া যে, চট্টগ্রামেও কমিউনিটি লেভেলে ভারতীয় ধরন ছড়িয়ে পড়ছে। এখন দ্রæত যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। যশোরে রোগীর চাপ \ যশোরে বর্তমানে হাসপাতালে রোগীর চাপ রয়েছে। এ অবস্থায় লকডাউন চললেও তা মানছে না সাধারণ মানুষ। তবে প্রশাসন বলছে লকডাউন কার্যকর করতে তাদের সকল বিভাগ একযোগে কাজ করছে। এদিকে করোনার উর্ধগতির কারণে যশোর পৌরসভা ও নওয়াপাড়া পৌরসভায় লকডাউন চললেও তা মানছে না সাধারণ মানুষ।
×