ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৬ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

আম লিচু সবই পাকা খাচ্ছেন তো আগেভাগে?

প্রকাশিত: ২৩:২৫, ২০ মে ২০২১

আম লিচু সবই পাকা খাচ্ছেন তো আগেভাগে?

মোরসালিন মিজান ॥ লিচু মুখে দিয়েছেন? আম? পছন্দের সব ফলই কিন্তু আসতে শুরু করেছে বাজারে। কারণ এখন জ্যৈষ্ঠ। বাঙালীর মধুমাস। সারা বছরই কিছু না কিছু ফল পাওয়া যায়। তা যায়। মধুমাসের ব্যাপার সম্পূর্ণ আলাদা। এর সঙ্গে সাধারণ সময়ের তুলনা চলে না। ফলপ্রেমীরা মৌসুমটির জন্য কী যে অপেক্ষা করে থাকেন! আম লিচু জাম জামরুল কাঁঠাল আনারস তাল সফেদা- কত ফলের কথা বলব? সবই এ মৌসুমের দান। ফলগুলো যেমন সুস্বাদু, তেমনি পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। তাই মধুমাসে গোটা দেশজুড়েই চলে জমজমাট ফল উৎসব। এবারের উৎসবটিও মোটামুটি শুরু হয়ে গেছে। ফল পাকতে না পাকতেই চলে আসছে রাজধানীতে। ঢাকার সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার বাদামতলী। সারাদেশে উৎপাদিত ফল নদী পথে এখানে আসছে। এখান থেকে চলে যাচ্ছে খুচরা বাজারে। একইভাবে বিপুল পরিমাণ ফল আসছে কাওরান বাজারের আড়তগুলোতে। ট্রাকের পর ট্রাক এসে আড়তের সামনে দাঁড়াচ্ছে। খুচরা বিক্রেতারা আড়ত থেকে কিনে নিয়ে ফুটপাথে বসে বিক্রি করছেন। মধুমাসের খুব উল্লেখযোগ্য ফল লিচু। গত কয়েকদিন কাওরান বাজার ঘুরে লিচুটাই বেশি চোখে পড়েছে। আপাতত পাওয়া যাচ্ছে সোনারগাঁওয়ের লিচু। ঢাকার খুব কাছে। তাই চট করে চলে আসছে। এ লিচুগুলো আকারে খুব বড় নয়। আবার ছোটও বলা যাবে না। দেখতে কিছুটা কাঁচা। অনেকে মনে করতে পারেন, ভাল লিচু এখনও বাজারে আসেনি। আসলে তা নয়। সোনারগাঁওয়ের লিচু মুখে দিয়ে দেখা গেছে, বেশ মিষ্টি। আঁটি একটু বড় হলেও রসালো। মৌসুমের প্রথম লিচু। দাম একটু বেশি। খুচরা বাজারে এক শ’ লিচুর দাম ২৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৩০০ টাকা পর্যন্ত হাঁকা হচ্ছে। আমান উল্লাহ নামের এক পাইকারি বিক্রেতা জানান, সোনারগাঁওয়ের লিচু আরও কিছুদিন থাকবে। এটি থাকতে থাকতেই চলে আসবে ময়মনসিংহের লিচু। তবে বেশি অপেক্ষা দিনাজপুর ও রাজশাহীর লিচুর জন্য। যথাসময়ে এ লিচু চলে আসবে। বড় আকারের মিষ্টি বোম্বাই লিচুও একই সময় বাজারে আসবে বলে জানান তিনি। এদিকে, মধুমাসের আরেক আকর্ষণ আমও খাওয়া শুরু হয়ে গেছে। জোর করে পাকানো আম দোকানিরা বিক্রি করছেন বটে, মিষ্টি আমও আছে বাজারে। একটু জেনে বুঝে কিনতে পারলেই হলো। আম নিয়ে কথা হচ্ছিল কাওরান বাজারের বিক্রেতা মহিউদ্দীনের সঙ্গে। তিনি বলছিলেন, আম আমরা অনেক আগেই পেতে শুরু করেছিলাম। কিন্তু প্রথম দিকে আম ছিল অপরিপক্ব। বিক্রি হয়েছে কম। এখন ঢাকার বাইরের স্বীকৃত বাগান থেকে গুটি আম আসতে শুরু করেছে। রাজশাহী সাতক্ষীরাসহ কয়েকটি এলাকা থেকে আম আসছে বলে জানান তিনি। রাজশাহী জেলার আম ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, ১৫ মে থেকে বাজারে আছে গুটি আম। গোপালভোগ আম নামানো শুরু হবে আজ বৃহস্পতিবার থেকে। পাঁচদিন পর ২৫ মে থেকে লক্ষণভোগ, লখনা ও রানীপছন্দ নামবে। হিমসাগর, ক্ষীরসাপাত আম নামবে ২৮ মে থেকে। ৬ জুন থেকে পাড়া শুরু হবে ল্যাংড়া। ১৫ জুন থেকে আম্রপালি ও ফজলি। ১০ জুলাই থেকে নামবে আশ্বিনা ও বারি আম-৪। রঙিন আম হিসেবে পরিচিত বারি আম-১৪ নামবে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ। এদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম আসতে একটু দেরি হবে বলে জানা যাচ্ছে। বাদামতলীর ব্যবসাীয়রা বলছেন, জুনের প্রথম দিকে রাজধানীতে ঢুকবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম। আমের পর চলে আসে কাঁঠালের আলোচনাও। মধুমাসেই পাওয়া যায় জাতীয় ফল কাঁঠাল। প্রথম দিকে এটি আসে পার্বত্য এলাকা থেকে। বিক্রেতারা বলছেন, আর কয়েকদিন পর রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের কাঁঠাল পাওয়া যাবে পুরোদমে। মাত্র ১০০ থেকে ৩০০ টাকায় কেনা যাবে ভাল কাঁঠাল। এর পর আসবে গাজীপুর, ময়মনসিংহ, জয়দেবপুর ও মানিকগঞ্জের কাঁঠাল। আনারসের মতো রসালো ফল বাজারে আছে অনেকদিন ধরেই। ঢাকার বিভিন্ন রাস্তার ধারে ছোট ছোট আনারস কেটে লবণ আর মরিচগুঁড়ো মাখিয়ে পরিবেশন করছেন বিক্রেতারা। সিলেট, মধুপুর ও রাঙ্গামাটি থেকে আসা আনারস আকারে ছোট। এগুলো জলডুগি নামে পরিচিত। প্রতিটি ১৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তালও মধুমাসের ফল। সাতক্ষীরা, যশোর, ফরিদপুর বরিশাল থেকে প্রতিদিন তাল আসছে ঢাকায়। ধারালো দা দিয়ে কুপিয়ে তালের শাঁস বের করে খাওয়াচ্ছেন বিক্রেতারা। সবাই ফলটি খান এমন নয়। তবে গ্রীষ্মের গরমে তালের শাঁস বেশ কার্যকর। রসালো ফলের আলোচনায় আছে তরমুজও। অনেক দিন ধরেই তরমুজ বিক্রি হচ্ছে। এবার কেজি দরে বিক্রি করায় সমালোচনাও কম হয়নি। এখনও পাওয়া যাচ্ছে তরমুজ। মধুমাসে পাওয়া যায় জামও। তবে এখনও বাজারে তেমন আসেনি। জামরুল পাওয়া যাচ্ছে। জোগান বেশ ভাল। বিভিন্ন দোকানে সুন্দর সাজিয়ে রাখা হয়েছে। লাল সাদাসহ তিনটি রং। খুব আকর্ষণ করে। প্রতি কেজি সাদা জামরুল বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৮০ টাকায়। মধুমাসের নতুন নতুন ফলে ঢাকার অলিগলির দোকানগুলো ভরে উঠেছে। বুধবার পল্টনের কয়েকটি ফলের দোকান ঘুরে দেখা যায়, বারমাসী ফল থাকলেও বিশেষভাবে তুলে ধরা হচ্ছে মধুমাসের নতুন ফলগুলো। পল্টনে আজাদ প্রোডাক্টসের গলিতে ফল কিনছিলেন শুভ্রত নামের এক ক্রেতা। অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে তিনি বলেন, মধুমাসটা তো আসলে গ্রামে কাটাতে পাড়লে মজা। কত রকমের ফল। নিজ হাতে পেড়ে খেয়েছি এক সময়। এখন ঢাকার জীবনে সবই স্মৃতি। তবুও ভাল যে, রাজধানীতে সব ধরনের ফল পাওয়া যায়। এসব ফল যেন কেমিক্যালমুক্ত হয় সে বিষয়টি নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন তিনি। তার মতে, এটি করা গেলে বাঙালীর মধুমাস আরও উপভোগ্য হয়ে উঠবে।
×