ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

উদ্বোধনের অপেক্ষায় কক্সবাজারের রানওয়ে প্রকল্প

প্রকাশিত: ২৩:৪০, ২২ এপ্রিল ২০২১

উদ্বোধনের অপেক্ষায় কক্সবাজারের রানওয়ে প্রকল্প

আজাদ সুলায়মান ॥ সমুদ্রের নীলাভ জলের ওপর দিয়ে সুপরিসর এ৩৮০ উড়োজাহাজের ওঠানামা এখনও স্বপ্নের ব্যাপার। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে নেয়া হয়েছে কক্সবাজার বিমানবন্দরের দ্বিতীয় রানওয়ে প্রকল্প। যা নির্মাণ হলে এখানেই ওঠানামা করবে পৃথিবীর সবচেয়ে সুপরিসর মডেলের প্লেন। দেশের চতুর্থ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কক্সবাজার বিমানবন্দরের দ্বিতীয় দফা রানওয়ের সম্প্রসারণ প্রকল্পের সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। কিন্তু করোনার ছোবলে যেন ছন্দপতন ঘটেছে। তদুপরি এ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করার সব প্রস্তুতি চূড়ান্ত। এখন শুধু অপেক্ষার পালা। প্রধানমন্ত্রী যেদিন তারিখ দেবেন সেদিনই স্থাপন করা হবে ভিত্তিপ্রস্তর ফলক। এখন শুধু সেই আনুষ্ঠানিক ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের অপেক্ষায় ক্ষণ গণনা চলছে। জানা গেছে, পৃথিবীর অন্যতম বিমানবন্দর নির্মাতা কোম্পানি এরই মধ্যে গ্রাউন্ড ব্রেকিং কাজের সব প্রস্ততি নিচ্ছে। বেসামরিবক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ চলমান লকডাউনের পর পরই বহুল প্রতীক্ষিত এই প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক যাত্রার তোড়জোড় চালাচ্চে। বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল মোঃ মফিদুর রহমান বলেছেন, করোনা মহামারীতে লকডাউন না থাকলে এতদিনে একটা সুনির্দিষ্ট দিন-তারিখ ঠিক করা যেত। এ প্রকল্পের সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়ে গেছে। এখন শুধু প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি পেলেই উদ্বোধনের মুহূর্ত ঘোষণা করা হবে। সেই মাহেন্দ্রক্ষণের প্রতীক্ষায় আমরা। প্রকৃতপক্ষে এটাই হবে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম ব্যস্তময় বিমানবন্দর। বেবিচক জানিয়েছে- পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘ সমুদ্র সৈকতের কোলে অপূর্ব নৈসর্গিক ভূবেষ্টনীতে গড়ে তোলা হচ্ছে দেশে চতুর্থ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এরই মধ্যে শেষের পথে প্রথম দফার কাজ। এখন দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্প বিমানবন্দরের রানওয়েকে আরও শক্তিশালী করার জন্য বাড়ানো হচ্ছে বর্তমান ৯ হাজার ফুট থেকে পৌনে এগারো হাজার ফুটে। মূলত এই রানওয়ের কাজ সম্প্রসারণের পরই এখানে ওঠানামা করতে পারবে পৃথিবীর সবচেয়ে সুপরিসর এয়ারবাস ৩৮০-এর মতো উড়োজাহাজ। আগামী পঞ্চাশ বছরের চাহিদা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নেয়া হয়েছে এই রানওয়ে সম্প্রসারণ প্রকল্প। বর্তমানে এ বিমানবন্দরে দৈনিক যাত্রীবাহী ও কার্গোবিমান চলাচল বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের পর্যটনশিল্প বিকাশে এবং সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় আকাশপথে দ্রুত যোগাযোগ স্থাপনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই বিমানবন্দর। তবে অনুন্নত রানওয়ে ও অবকাঠামোর ফলে সবধরনের বিমান চলাচলের জন্য ছিল অনুপযোগী। বর্তমান সরকারের গৃহীত নানামুখী প্রকল্পের ফলে কক্সবাজার বিমানবন্দর একটি পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দরে রূপ পেতে চলেছে। জানা গেছে, কক্সবাজার বিমানবন্দর রানওয়ে সম্প্রসারণ সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হিসেবে চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় অনুমোদন প্রদান করেন। সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় আকাশপথে দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করার উদ্দেশে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে সুপরিসর বিমান চলাচল উপযোগী আন্তর্জাতিকমানের বিমানবন্দরে উন্নীত করার লক্ষ্যে বিদ্যমান রানওয়ে সম্প্রসারণ প্রকল্পটি গৃহীত হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বড় উড়োজাহাজ কক্সবাজারে যাতায়াত করতে পারবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী দরপত্র প্রক্রিয়ায় অংশ নেয় বিশ্বের নামকরা বেশ কটি প্রতিষ্ঠান। যেমন সান ইঞ্জিনিয়ারিং এ্যান্ড কন্ট্রাক্টিং, লটিএএমএল জেভি, এইডিসি এনডিই জেভি, সিএইচইসি মীর আকতার জেভি, চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং কোং, সিওয়াইডব্লিউইবি- সিসিইসিসি জেভি ও সিনো হাইড্রো কর্পোরেশনের মতো বিশ্বসেরা ্িনর্মাণ কোম্পানিীলোর সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে দিয়ে বাছাই করা হয় একটিকে। চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি বেবিচক সদর দফতরে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে চাংজিয়াং ইচাং ওয়াটার ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যুরো (সিওয়াইডব্লিউসিবি) ও চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কর্পোরেশন- জেভি’র মধ্যে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বেবিচক অনুমিত ব্যয়ের চেয়ে অন্তত ২১ শতাংশ কম দর প্রস্তাব করে প্রতিষ্ঠানটি। এতে বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় হয়। বেবিচক জানিয়েছে, দরপত্রে টিকে যাওয়া চীনের এই শীর্ষ কোম্পানীদ্বয়ের রয়েছে বেজিং বিমানবন্দর নির্মানের মতো অত্যাধুনিক কাজের অভিজ্ঞতা। যার ছোঁয়া থাকবে কক্সবাজারেও। এই বিমানবন্দরের নির্মাণশৈলীর ড্রয়িং-ডিজাইন দেখে ইতোমধ্যে দেশ-বিদেশের এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। যত দ্রুত সম্ভব এখন এই প্রকল্পের কাজ শুরু করা যাবে ততই এভিয়েশন সেক্টরের জন্য কল্যাণকর হবে। এতে শুধু পর্যটন নয়, অন্যান্য খাতকেও শক্তিশালী করবে। বহুল প্রতীক্ষিত এ প্রকল্প সম্পর্কে প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল মালেক জানিয়েছেন, কক্সবাজার বিমানবন্দরের মহেশখালী চ্যানেলের দিকে রিক্ল্যামেশন প্রক্রিয়ায় আরও এক হাজার ৭০০ ফুট রানওয়ে সম্প্রসারিত হবে। তাছাড়া প্রকল্প কাজগুলোর অন্যান্য প্রধান ক্ষেত্রের মধ্যে রয়েছে সমুদ্রের জলাবদ্ধতা রক্ষাসহ সমুদ্রের জমি পুনরুদ্ধার, নমনীয় ফুটপাথসহ রানওয়ের সম্প্রসারণ, সমুদ্রের যথাযথ পদ্ধতির আলোক ব্যবস্থাসহ এজিএল সিস্টেম স্থাপন, নিকাশীর সুবিধা ইত্যাদি।
×