ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কাদের মির্জা পুলিশের হাতে লাঞ্ছিত

প্রকাশিত: ২৩:৪০, ২১ এপ্রিল ২০২১

কাদের মির্জা পুলিশের হাতে লাঞ্ছিত

নিজস্ব সংবাদদাতা, নোয়াখালী, ২০ এপ্রিল ॥ বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা পুলিশের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন। মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় তার অনুসারী স্বপন মাহমুদের ফেসবুক এ্যাকাউন্ট থেকে লাইভে এসে তিনি এ অভিযোগ তোলেন। লাইভে এসে কাদের মির্জা অভিযোগ করেন, পুলিশ আমার ৭ কর্মীকে গ্রেফতার করে নির্যাতন করেছে। সকালের দিকে খবর পেয়ে আমি তাদের দেখতে যাই। তাদের অবস্থা ভাল ছিল না। ফেরার পথে আমাদের ওপর আক্রমণ করেন এডিশনাল এসপি। তিনি আমার গায়ে হাত দিয়েছেন। দশবার করে বলেছি, আমি ডিএস মর্যাদার। তুমি আমার গায়ের ওপর হাত দিচ্ছ কেন? তিনি এরপরও আমার গায়ে হাত দিয়েছেন। এদিকে ওসি আমার সহকারী সাজুকে মারধর করেছেন। তার মোবাইল কেড়ে নিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, এরপর ফেরত আসার পথে এডিশনাল এসপি ওসিসহ পুলিশ আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। নোয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামীম আহমেদ অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে নাকচ করে দেন। তিনি বলেন, কাদের মির্জা থানায় গিয়ে সরাসরি থানার হাজতের সামনে চলে যান। আমি শুধু তাকে বলেছি, আপনি ওসির রুমে আসেন। এছাড়া আর কোন কথা হয়নি এবং কারও গায়ে হাতও তোলা হয়নি। কাদের মির্জার হুমকি ॥ পৌর মেয়র আবদুল কাদের মির্জা বলেছেন, তার অনুসারী গ্রেফতারকৃত যুবলীগ নেতা মিকনকে ক্রসফায়ারে দেয়ার চক্রান্ত করেছে প্রশাসন। এ ধরনের ঘটনার পরিণতি হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। এ ধরনের ঘটনা ঘটলে কিভাবে জবাব দিতে হয় আমি জানি। এটা ছেড়ে দেয়া হবে না। আজকে শামীমের মতো কুলাঙ্গার আমার গায়ে হাত দেয়। ওসি আজকে আমার গায়ে হাত দেয়, আমাকে গালিগালাজ করে। আজকে আমার ছেলেদের ক্রসফায়ারে দেবে। রক্তের হলি খেলা কোম্পানীগঞ্জে চলবে। এটা কোন অবস্থায় ছেড়ে দেয়া হবে না। আমার সন্তানের গায়ে হাত দেয়া হয়েছে, কারও সন্তান রেহাই পাবে না। মঙ্গলবার দুপুর ২টায় তার অনুসারী স্বপন মাহমুদের ফেসবুক এ্যাকাউন্ট থেকে লাইভে এসে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমি আজকে আমার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। আজকে আমি ভাল ভাষা ব্যবহার করতে পারছি না। এ জন্য আপনাদের কাছে আন্তরিকভাবে লজ্জিত। আজকে যে তা-ব চলছে এখানে তা বিশ্বাস করতে পারবেন না। কেউ কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি উনিও কোন ব্যবস্থা নেন নাই। এটা চলতে দেয়া যায় না। আল্লাহর গজব পড়বে। আজকে যে কোন জায়গায় বসে সিদ্ধান্ত নিয়ে ভবিষ্যত কর্মপন্থা নিব, ইনশাআল্লাহ। কোন অবস্থায় সে পুলিশ হোক, এমপি হোক, মন্ত্রীর স্ত্রী হোক আর সচিব হোক, কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার কাদের মির্জার ছেলেকে উপজেলা আওয়ামী লীগ কমিটির অনুসারীরা কোম্পানীগঞ্জ থানার সামনে মারধর করে লাঞ্ছিত করে। পরে ওই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ইতোমধ্যে ভাইরাল হয়। কাদের মির্জার অনুসারীসহ আটক ৩ ॥ পৌর মেয়র আবদুল কাদের মির্জার অনুসারী হিসেবে পরিচিত নাজিমউদ্দিন মিকনসহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। আটক অন্যরা হলো মিকনের সহযোগী নূর উদ্দিন খাজা ও একরাম উদ্দিন। মঙ্গলবার ভোরে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে পার্শ্ববর্তী কবিরহাট বাজারের পাশের একটি গোপন আস্তানা থেকে তাদের আটক করা হয়। কোম্পানীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মীর জাহেদুল হক রনি আটকের বিষয়টি গণমাধ্যম কর্মীদের নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, মিকন পুলিশের খাতায় মোস্ট ওয়ান্টেড আসামি। তাছাড়া তিনি সোমবার বসুরহাট কলাবাগানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নূর নবী চৌধুরীকে গুলি ও পিটিয়ে পা ভেঙ্গে দেয়ার ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত। তার বিরুদ্ধে পুলিশ এ্যাসল্ট, বিস্ফোরক, দাঙ্গাহাঙ্গামা, অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ ৭টি মামলা রয়েছে। পাল্টাপাল্টি কর্মসূচী প- ॥ কোম্পানীগঞ্জের চরকাঁকড়া ইউনিয়নের নতুন বাজার এলাকায় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচী প- করে দিয়েছে পুলিশ। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় সেখানে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দিয়েছিল বিবদমান দুইপক্ষ। কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি মীর জাহেদুল হক রনি কর্মসূচী প- করার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বিবদমান দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হওয়ায় কাউকেই কোন সভা সমাবেশ করতে দেয়া হয়নি। সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কর্মসূচী স্থগিতের বিষয়টি নিশ্চিত করেন চরকাঁকড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান আরিফ। তিনি বলেন, কাদের মির্জার সহযোগীদের হামলায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নূর নবী চৌধুরী এবং শিক্ষা ও সংস্কৃতি সম্পাদক নূরুজ্জামান স্বপন আহত হওয়ার প্রতিবাদে ওই কর্মসূচী ডাকা হয়েছিল। কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রশাসনের অনুরোধে সেই বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভার কর্মসূচী স্থগিত করতে হয়। অন্যদিকে প্রশাসনের বাধার মুখে প্রতিবাদ সভা ডেকেও তা করতে পারেননি বলে জানিয়েছেন কাদের মির্জার অনুগত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিমউদ্দিন বাদল। তিনি বলেন, কাদের মির্জার সমর্থক শ্রমিক লীগ নেতা মিজানের ওপর হামলার প্রতিবাদে নতুন বাজারে মঙ্গলবার সকালে ওই কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়েছিল। এদিকে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচীতে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে কোম্পানীগঞ্জে।
×