ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চিকিৎসক-পুলিশ বাগবিতণ্ডা

দুই পেশাজীবী সংগঠনের পাল্টাপাল্টি বিবৃতিতে হাইকোর্টের ক্ষোভ

প্রকাশিত: ২৩:৩৭, ২১ এপ্রিল ২০২১

দুই পেশাজীবী সংগঠনের পাল্টাপাল্টি বিবৃতিতে হাইকোর্টের ক্ষোভ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ লকডাউনে মুভমেন্ট পাস নিয়ে চিকিৎসক-পুলিশের বাগ্বিত-ার ঘটনায় দুই পেশাজীবী সংগঠনের পাল্টাপাল্টি বিবৃতিতে উষ্মা প্রকাশ করেছে হাইকোর্ট। আদালত বলেছে, ওই ঘটনায় সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাল্টাপাল্টি বিবৃতি দেয়া সমীচীন হয়নি। তাদের এমন আচরণ অনাকাক্সিক্ষত । সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে এমন আচরণ কাম্য নয়। এদিকে দেশে অক্সিজেনের সঙ্কট নেই। সরকার হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহের সর্বাত্মক চেষ্টা করছে বলে আদালতকে জানিয়েছেন এ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। মঙ্গলবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সরদার মোঃ রাশেদ জাহাঙ্গীরের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ কথা বলা হয়। আদালতের মন্তব্যের পর আইনজীবী ইউনুস আলী আকন্দ জনকণ্ঠকে বলেন, আমি ডাক্তার ও পুলিশ এ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতিসহ বিভিন্ন পত্রিকার কাটিং আদালতে উপস্থাপন করেছি। আদালত কাগজপত্র দেখে মন্তব্য করেছে। আর কিছু বলেনি। আমি এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে রিট দায়ের করব। দুই একদিনের মধ্যেই রিটটি দায়ের করা হবে। এদিকে এ ঘটনায় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ পুলিশ এ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতির খবর নজরে আনার পর এ মন্তব্য আসে উচ্চ আদালত থেকে। মঙ্গলবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সরদার মোঃ রাশেদ জাহাঙ্গীরের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চে এ সংক্রান্ত প্রকাশিত খবর তুলে ধরেন সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ। তিনি এ ঘটনা তদন্তের জন্য আদালতের কাছে আদেশ প্রার্থনা করেন। তখন বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বলেন, গত সোমবার আপনি এ বিষয় নিয়ে এসেছিলেন। আপনি তো সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি নন। আপনি কেন এসেছেন? জবাবে ইউনুছ আলী আকন্দ বলেন, আমার মেয়ে একজন চিকিৎসক। আমার আত্মীয়-স্বজনের মধ্যেও চিকিৎসক আছেন। আমার মেয়ে চিকিৎসক হিসেবে করোনা ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করছেন। যে কারণে আমি সংক্ষুব্ধ। এ পর্যায়ে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি বলেন, প্রজাতন্ত্রের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের পেশাগত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবেন, দায়িত্বশীল আচরণ করবেন, সবাই তাই আশা করে। করোনার এই পরিস্থিতিতে উর্ধতন কর্তৃপক্ষসহ প্রজাতন্ত্রের সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। পারস্পরিক সম্মানবোধ থাকতে হবে। ইগো বা ক্ষমতার দম্ভ থাকা উচিত নয়। সবাইকে দায়িত্বশীল হয়ে পেশাদারিত্ব দেখাতে হবে। তখন ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকা এ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনও বলেন, ওই ঘটনা দুঃখজনক ও অপ্রত্যাশিত। তখন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম দুই পক্ষের মধ্যে সৃষ্ট উত্তেজনা প্রশমনে এ্যাটর্নি জেনারেলকে ভূমিকা রাখতে বলেন। মহামারীর রাশ টানতে গত ১৪ এপ্রিল সরকার জনসাধারণের চলাচলে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের পর পুলিশ জরুরী প্রয়োজনে কারও বের হতে মুভমেন্ট পাস নেয়ার ব্যবস্থা করে। এরপর ওই মুভমেন্ট পাস দেখার নামে পুলিশ হয়রানি করছে বলে অভিযোগ আসতে থাকে চিকিৎসকদের কাছ থেকে; যদিও জরুরী সেবায় রত চিকিৎসকদের পরিচয়পত্রই তাদের পাস বলে নির্দেশনা দেয়া হয়। এর মধ্যেই রবিবার এলিফ্যান্ট রোডে পুলিশের তল্লাশিতে আটকা পড়েন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহযোগী অধ্যাপক। তখন তার সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তার তর্কাতর্কির একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে। এরপর সোমবার বাংলাদেশ মেডিকেল এ্যাসোসিয়েশন এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ পুলিশ এ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতি আসে। পাল্টাপাল্টি বিবৃতিতে সংশ্লিষ্ট পুলিশ ও চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চাওয়া হয়।
×