ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কৃষি-ভিত্তিক অর্থনীতি আমাদের এগিয়ে নিয়ে যাবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ২০:৪৮, ১৯ এপ্রিল ২০২১

কৃষি-ভিত্তিক অর্থনীতি আমাদের এগিয়ে নিয়ে যাবে : প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ, কৃষি আমাদের উন্নয়নের সব থেকে বড় মাধ্যম। আমরা দেশের কৃষিখাতকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি এবং কৃষি-ভিত্তিক অর্থনীতি আমাদের এগিয়ে নিয়ে যাবে। কৃষি অর্থনীতির সঙ্গে সঙ্গে আরা শিল্পের দিকেও নজর দিয়েছি। কারণ উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার ব্যবস্থা এবং দেশে-বিদেশে পণ্য যেন আমরা রপ্তানি করতে পারি তার ব্যবস্থা করে কৃষককে সব ধরণের সহযোগিতা আমরা দিয়ে যাচ্ছি। সোমবার রাতে বাংলাদেশ কৃষক লীগের ৪৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রদত্ত এক ভিডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের সকল কৃষক-কৃষাণীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, তাঁরা (কৃষক) রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে খাদ্য উৎপাদন করেন। সেই খাদ্য খেয়েই আমরা বেঁচে থাকি। কাজেই তাদের (কৃষক) প্রতি আমাদের সব সময় সমর্থন রয়েছে এবং তাদের সহযোগিতা করা- এটা আমরা বিশেষ করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তাদের কতর্ব্য বলে মনে করে। কৃষক লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর প্রদত্ত ভিডিও বার্তাটি সোমবার রাত আটটায় বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। প্রধানমন্ত্রী এ সময় সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, মাস্ক পড়া, গার্গল করা, গরম পানির ভাপ নেওয়া, জনসমাগমে না যাওয়া, দূরত্ব বজায় রেখে চলা এবং সরকার থেকে দেওয়া স্বাস্থ্য-সুরক্ষার নির্দেশনাগুলো মেনে চলার জন্য দলের নেতাকর্মীসহ দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, নির্দেশনাগুলো মেনে নিয়ে নিজেকে আপনারা সুরক্ষিত রাখুন, অপরকে সুরক্ষিত করুন এবং এই করোনাভাইরাসের হাত থেকে যেন দেশ ও জাতি মুক্তি পায়- তার জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে সবাই দোয়া করেন- বাংলাদেশ এই মহা-দুর্যোগ থেকে যেন দ্রুত মুক্তি পেতে পারে। প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ, কৃষি আমাদের উন্নয়নের সব থেকে বড় মাধ্যম। বাংলাদেশের মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য সেবা সব ধরনের মৌলিক অধিকার পূরণের জন্য জাতির পিতা বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছিলেন অনেক সংগ্রামের পথ বেয়ে। তাই আমি কৃষক লীগের এই প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে বাংলাদেশের সকল কৃষক-কৃষাণী, তাদেরকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। তিনি বলেন, কৃষকদের সমস্যা সমাধানের জন্য জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমরা প্রথম সরকার গঠনের পর থেকে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর যখন অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীরা ক্ষমতা দখল করল এবং এদেশের কৃষকদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে শুরু করল। সার চাইতে গিয়ে গুলিতে ১৮জন কৃষককে জীবন পর্যন্ত দিতে হয়েছে- এ ধরনের ঘটনাও বাংলাদেশে ঘটেছে। শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ যখন সরকারে এসেছে, তখন থেকে কৃষকদের আর কোন কষ্টে থাকতে হয়নি। কারণ আমরা তাদের কল্যাণে যথাযথ ব্যাবস্থা নিয়েছি। বর্গাচাষীরা যাতে বিনা জামানতে ঋণ পায় আমরা কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে তাদের বিনা জামানতে ঋণের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। সারের দাম যা বিএনপি সরকারের আমলে ৯০ টাকা ছিল, তা আজ ১২ টাকায় আমরা নামিয়ে এনেছি। গবেষণার মাধ্যমে উন্নত বীজ আমরা উৎপাদন করছি এবং সেই বীজ আমরা সরবরাহ করছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, একইসঙ্গে আমরা কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণ- যেটা জাতির পিতার লক্ষ্য ছিল- আমরা সেই লক্ষ্য কার্যকর করে দিচ্ছি এবং সেখানে আমরা শতকরা ৭০ ভাগের উপর ভর্তুকি দিচ্ছি এবং আমরা কৃষি-যান্ত্রিকীকরণ করে যাচ্ছি যাতে আমাদের কৃষকরা আরও অধিক পরিমান খাদ্য উৎপাদন করতে পারে। তিনি বলেন, উন্নতমানের বীজ সরবরাহ, প্রতিটি কৃষি-উপকরণ কৃষকদের হাতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। সেই সঙ্গে সঙ্গে আমরা সেচ কাজে কৃষক যে বিদ্যুত ব্যবহার করেন, সেখানেও আমরা ভর্তুকি দিচ্ছি। কৃষকের বিদ্যুত সরবরাহ যাতে নিশ্চিত হয় তার ব্যাবস্থা আমরা নিয়েছি এবং বর্তমানে সেচ কাজে আমরা সোলার-প্যানেল ব্যাবহারও আমরা শুরু করে দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী কৃষকদের কল্যাণে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে বলেন, উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য যাতে আমাদের কৃষকরা পায়, তার জন্য যথাযথ আমরা দাম নির্দিষ্ট করছি এবং কৃষকদের সহায়তা দিচ্ছি। কৃষকের গুদামে যাতে খাদ্য সংরক্ষিত থাকে, প্রত্যেক কৃষকের ঘরে খাদ্য যেন থাকে- কারণ যারা উৎপাদন করবে তারা খাবার পাবে না বা তাদের ছেলে-মেয়েরা খাদ্যে কষ্ট পাবে- এটা হতে পারে না। আমরা সে ব্যবস্থাটাও সঙ্গে সঙ্গে হাতে নিয়েছি। তিনি বলেন, আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগে যে সমস্ত কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাদের আর্থিক সহায়তা দেয়ার ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি এবং আমরা সেই সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। এবারেও যেমন ঘুর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক তারাও সে ধরনের সহযোগিতা পাবেন-তার জন্য একটা থোক বরাদ্দ আমরা রেখে দিচ্ছি। আমাদের দেশে উৎপাদন যাতে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ হতে পারে- তার জন্য যথাযথ মাটি পরীক্ষা করা থেকে শুরু করে সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ। কৃষক একটা মোবাইল ফোন ধরে ছবি তুলে তার ফসলের কী অবস্থা, মাটির কী অবস্থা বা মাটি পরীক্ষা করা এবং কী ধরনের সার ব্যবহার করবেন, কতটুকু ব্যবহার করবেন বা কীটনাশক ব্যবহার করবেন কীনা বা কতটুকু করবেন- সেই ধরনের কৃষি তথ্য যাতে তারা পেতে পারেন সে লক্ষ্যে তথ্যকেন্দ্রসমৃদ্ধ বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলেছি। সেখান থেকে কৃষক তার প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন। কারন আওয়ামী লীগ সরকার আসার পর মোবাইল ফোনও আমরা সকলের হাতে হাতে আমরা তুলে দিয়েছি। কৃষি গবেষণার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সবথেকে বেশী গুরুত্ব দিয়েছি গবেষণার উপর। ১৯৯৬ সালে যখন সরকার গঠন করি, তখন থেকেই কৃষি গবেষণায় আমরা গুরুত্ব দেই। আজকে গবেষণার ফলে আরও নতুন নতুন ধরনের ফসল উৎপাদন- তরি-তরকারী, ফল-মূল এবং দানাদার খাদ্য-শষ্য থেকে শুরু করে সব ধরনের পণ্য যেন উৎপাদন হতে পারে তার জন্য ব্যাপকহারে গবেষণা হচ্ছে এবং উন্নতমানের বীজ আমরা সরবরাহ করছি। যার ফলে আজকে কৃষক খুব অল্প কষ্টে অধিক পরিমানে খাদ্য উৎপাদন করতে পারছেন- ধান উৎপাদন করতে পারছেন, গম করছেন, ভুট্টা করছেন এবং সব ধরনের ফসল উৎপাদন করার সুযোগ পাচ্ছেন এবং তা বাজারজাত করার ব্যাবস্থাও আমরা করে দিচ্ছি। করোনাকালে কৃষকদের ধান কাটাসহ দুঃসময়ে দলের নেতাকর্মীদের তাদের পাশে দাঁড়ানোর উদাহরণ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের সময় যখন ধানকাটা নিয়ে সমস্যা হলো- আমি যখন আমার দলের নেতা-কর্মী বিশেষ করে ছাত্রলীগকে আহ্বান করলাম, আমার ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ, কৃষকলীগ থেকে শুরু করে আওয়ামী সকলে মাঠে নেমে পড়লেন। কৃষকের সঙ্গে কাঁধে কাঁধে মিলিয়ে ধান কেটে তাদের ঘরে তুলে দিলেন। আর যান্ত্রিকীকরণের জন্য হারভেস্টার থেকে শুরু করে সব ধরনের যন্ত্র আমরা ধীরে ধীরে কৃষকের হাতে পৌঁছে দিব। আমরা চাচ্ছি আমাদের দেশের কৃষিটাকে আমরা বেশী গুরুত্ব দিতে এবং কৃষি-ভত্তিক অর্থনীতি আমাদেরকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা ও মাস্ক বিতরণ ॥ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও মাস্ক বিতরণ করেছে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন কৃষক লীগ। সোমবার সকাল ১০টায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে বঙ্গবন্ধর স্মৃতিবিজড়িত ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে রক্ষিত জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানো হয়। কৃষক লীগের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দ্র ও সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি এমপির নেতৃত্বে এ শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। এর আগে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সকাল সাড়ে ৯টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন কৃষক লীগের নেতারা। শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে দিনব্যাপী কর্মসূচি উদ্বোধন করা হয়। এ উপলক্ষে একটি প্রামাণ্য চিত্রের ভিডিও প্রকাশ করে কৃষক লীগ। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে মাস্ক, হান্ড স্যানিটাইজার এবং অন্যান্য করোনা সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ করা হয়। এ সময় সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সমীর চন্দ ও সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি উপস্থিত থেকে এ সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ করেন। এসব কর্মসূচিতে কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
×