স্টাফ রিপোর্টার ॥ হেফাজতের তা-ব ও নাশকতারোধে আবারও সতর্ক অবস্থান নিয়েছে পুলিশ। এ সংগঠনের যুগ্ম- মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হককে গ্রেফতারের ঘটনায় সারাদেশে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। ইতোমধ্যে চট্টগ্রামসহ দেশব্যাপী হেফাজত অধ্যুষিত এলাকায় পুলিশকে আরও কঠোর অবস্থানে দায়িত্ব পালন শুরু করেছে। একাধিক জেলার পুলিশ সুপার রবিবার দৈনিক জনকণ্ঠকে সতর্ক অবস্থানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সকালে সব এসপি ও রেঞ্জের ডিআইজিকে স্ব স্ব জেলার আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত সতর্ক অবস্থানে থাকতে বলা হয়েছে। কেউ যাতে কোনভাবেই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে না পারে, মানুষ ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি না করতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বিনষ্টকারীদের
বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত পুলিশকে এভাবেই কঠোর মনোভাবে থাকতে হবে।
জানতে চাইলে একজন এসপি বলেন, সারাদেশের মারমুখী হেফাজতী মাদ্রাসার একটা তালিকাও পাঠানো হয়েছে প্রত্যেক থানায়। শনিবার রাত ও রোববার সকালে পুলিশকে সতর্ক থাকতে বার্তা দেয়া হয়েছে। এছাড়া পুলিশের যেসব থানায় বাঙ্কার তৈরি করা হয়েছে, সেখানে ২৪ ঘণ্টায় দুইজন পুলিশ সদস্যকে অন-গার্ড থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় পুলিশকে কমপক্ষে ৮-১০ জনের গ্রুপ করে ডিউটি পালনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা বা থানা বা ফাঁড়ি আক্রান্ত হবার মতো পরিস্থিতি দেখা দিলে শুরুতেই গুলি না করে ধৈর্যের সঙ্গে তা নিয়ন্ত্রণে আনার কৌশল নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। পবিত্র রমজানে একদিকে মানুষের জানমাল রক্ষা ও অন্যদিকে নাশকতা ঠেকাতে গিয়ে কোন ধরনের রক্তপাত এড়ানোর বিষয়ে অগ্রাধিকার দিয়ে দায়িত্ব পালনের নির্দেশও দেয়া হয়। পুলিশের বাড়তি সতর্কতা চোখে পড়ে গতকাল সকালে যখন মামুনুল হককে গ্রেফতারের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছিল। তখন মোহাম্মদপুর এলাকায় প্রায় ২ শতাধিক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়। মামুনুল হককে বের করার সময় অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির আশঙ্কায় এত বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হলেও তিনি স্বাভাবিকভাবেই বের হয়ে আসেন। ঢাকার একটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, থানাগুলোতে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া থানা এলাকার মাদ্রাসা ও মসজিদগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর মসজিদ ও মাদ্রাসাগুলোতে যাতে কেউ জড়ো হতে না পারে সে বিষয়ে আমাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এর আগে রবিবার দুপুরে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া মাদ্রাসা থেকে হেফাজত নেতা মামুনুল হককে গ্রেফতার করা হয়।
এ বিষয়ে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান বলেন, শুধু ঢাকা বিভাগীয়, রাজধানীসহ দেশব্যাপী কোনা ধরনের নাশকতা যাতে কোন অপশক্তি করতে না পারে, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। মামুনুল হকের গ্রেফতারের পরও যাতে নতুন করে হেফাজতীরা কোন ধরনের ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত না হতে পারে সেজন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ আদান-প্রদান করা হয়েছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকে কেন্দ্র করে ২৬ মার্চ বায়তুল মোকাররমে বিক্ষোভ করে হেফাজতে ইসলাম। সেখানে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে চট্টগ্রামে হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্ররা বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। সেখানে পুলিশের গুলিতে চার ছাত্রের মৃত্যু হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওইদিন বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিক্ষোভ হয়। সেখানেও সংঘর্ষে একজনের মৃত্যু হয়। হামলা ও হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ২৭ মার্চ বিক্ষোভ ও ২৮ মার্চ হরতাল পালন করে ইসলামী সংগঠনটি। হরতালে দেশব্যাপী হামলা, ভাংচুর ও সড়ক অবরোধ করে হেফাজতের নেতাকর্মীরা। এসব ঘটনার এক সপ্তাহ পর ৩ এপ্রিল বিকেলে সোনারগাঁওয়ের রয়েল রিসোর্টের ৫০১ নম্বর কক্ষে নারীসহ মামুনুল হককে অবরুদ্ধ করেন স্থানীয়রা। পরে তাকে উদ্ধার করে পুলিশ। সেই সঙ্গে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই নারীকে দ্বিতীয় স্ত্রী বলে দাবি করেন মামুনুল হক। এ সময় হেফাজত কর্মীরা জড়ো হয়ে মামুনুুলকে কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয় এবং আশপাশের এলাকায় ভাংচুর চালায়। পরে মামুনুল হকসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে রাজধানীর পল্টন থানায় হত্যাচেষ্টা ও বিস্ফোরক আইনে মামলা হয়। মামলায় তার বিরুদ্ধে নাশকতার হুকুমদাতা, বিস্ফোরণের হুকুমদাতা এবং নিরীহ মানুষকে হত্যাচেষ্টার হুকুমদাতা বলা হয়েছে। এছাড়া দ্বিতীয় স্ত্রী কাণ্ডে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রয়েল রিসোর্টের ঘটনায়ও তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামুনুলের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে নাশকতার অভিযোগেও মামলা আছে। এসব মামলার সুষ্ঠু তদন্ত করে এবার যথাদ্রুত সম্ভব চার্জশীট দেয়া হবে বলে জানিয়েছে মহানগর পুলিশ।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: