ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন এডিপিতেও গুরুত্ব পাচ্ছে স্বাস্থ্য খাত

প্রকাশিত: ২২:৪৬, ১১ এপ্রিল ২০২১

নতুন এডিপিতেও গুরুত্ব পাচ্ছে স্বাস্থ্য খাত

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ এবারও নতুন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে (এডিপিতে) গুরুত্ব পাচ্ছে স্বাস্থ্য খাত। ফলে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য স্বাস্থ্য খাতে বাড়ছে বৈদেশিক সহায়তার বরাদ্দ। স্বাস্থ্য, পুষ্টি, জনসংখ্যা এবং পরিবার কল্যাণ মিলিয়ে এ খাতে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে মোট ৮ হাজার ৮৪৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। তবে সবেচেয়ে বেশি বরাদ্দ পাচ্ছে পরিবহন খাত। এ খাতে দেয়া হচ্ছে ২৪ হাজার ১৬৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। সম্প্রতি খাতভিত্তিক বৈদেশিক সহায়তার বিভাজন চূড়ান্ত করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে অর্থনেতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। ১৭টি খাতে খাতভিত্তিক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে এবারের এডিপিতে। এতে দেখা যায়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ খাতে সংশোধিত এডিপির চেয়ে নতুন এডিপিতে বরাদ্দ বাড়ছে ৯৯২ কোটি ২৯ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ রয়েছে ৭ হাজার ৮৫৭ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। তবে এই বরাদ্দের বাইরে গত এডিপিতে টিকা কেনার জন্য আলাদাভাবে ১০ হাজার কোটি টাকা থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এবারও টিকা ক্রয়ে এই থোক বরাদ্দ রাখা হবে বলে জানা গেছে। জানা যায়, চলতি অর্থবছর করোনা মোকাবেলা সংক্রান্ত কয়েকটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। এগুলোতে বিশ্বব্যাংক, এডিবি, এআইআইবিসহ বিভিন্ন উন্নয়নসহযোগী সংস্থার ঋণ ও অনুদান রয়েছে। তাই স্বাস্থ্য খাতে বৈদেশিক সহায়তার বরাদ্দ বাড়ছে। কিছু দিন আগে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে ৫০০ মিলিয়ন ডলার দিয়েছে টিকা ক্রয়ের জন্য। এছাড়া আইএমএফ বাংলাদেশকে ৭৩০ মিলিয়ন ডলারের বাজেট সহায়তা দিয়েছে। বিভিন্ন দেশকে ঋণ সহায়তার জন্য ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাংক ও এডিবিসহ বিভিন্ন সংস্থা করোনা তহবিল গঠন করেছে। আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য এডিপিতে প্রকল্প সাহায্য ধরা হয়েছে ৮৯ হাজার কোটি টাকা। এটি চলতি অর্থবছরের মূল এডিপির তুলনায় ১৮ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা এবং সংশোধিত এডিপির তুলনায় ২৬ হাজার কোটি টাকা বেশি। মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর সঙ্গে বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্পের প্রকল্প সাহায্য বরাদ্দ প্রাক্কলনের জন্য ছয়দিনের সিরিজ বৈঠক করে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ এই অর্থ চূড়ান্ত করেছে। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় বিদ্যুত, সমাজকল্যাণ, মহিলা বিষয়ক ও যুব উন্নয়ন এবং গণসংযোগ খাতের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে বৈঠকের মধ্য দিয়ে এই সিরিজ বৈঠক শুরু হয়। এরপর ২৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় কৃষি, শিক্ষা ও ধর্ম এবং পানিসম্পদ সেক্টরের সঙ্গে বৈঠক হয়। এ ছাড়া ২৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় পল্লী উন্নয়ন ও পল্লী প্রতিষ্ঠান, ভৌত-পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ন এবং ক্রীড়া ও সংস্কৃতি সেক্টরের সঙ্গে বৈঠক। এরপর ১ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় জনপ্রশাসন, শিল্প, বিজ্ঞান-তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের বৈঠক। সর্বশেষ ৪ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় পরিবহন, তৈল-গ্যাস ও প্রাকৃতিক সম্পদ খাত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর সঙ্গে বৈঠক। এসব বৈঠকে চলতি অর্থবছরের জুলাই হতে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত ৭ মাসের এডিপি বরাদ্দের বাস্তবায়ন অগ্রগতির ওপর ভিত্তি করে আগামী অর্থবছরের জন্য খাতভিত্তিক বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো ইআরডির প্রস্তাব পর্যালোচলা করে দেখা যায়, পরিবহন খাতে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ আছে ১৮ হাজার ৩৩৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। আগামী অর্থবছরের এডিপির জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে ২৪ হাজার ১৬৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। এ ক্ষেত্রে বরাদ্দ বেড়েছে ৫ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা। এ ছাড়া বিদ্যুত খাতে বরাদ্দ রয়েছে ১১ হাজার ১৩৪ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। আগামী এডিপিতে প্রস্তাব করা হয়েছে ১৬ হাজার ৯৪৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে বরাদ্দ বেড়েছে ৫ হাজার ৭৯৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে বরাদ্দ আছে ৮ হাজার ৮১ কোটি ২৭ লাখ টাকা। নতুন এডিপিতে প্রস্তাব করা হয়েছে ১৬ হাজার ৩৩৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এ ক্ষেত্রে বাড়ছে ৮ হাজার ২৫৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। অন্যান্য খাতে বৈদেশিক সহায়তার বরাদ্দ হচ্ছে, কৃষি খাতে প্রস্তাব করা হয়েছে ২ হাজার ৭৭৯ কোটি টাকা। গ্রামীণ উন্নয়ন খাতে ৪ হাজার ১৯৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। পানিসম্পদ খাতে ৫৭৮ কোটি ১২ লাখ টাকা। শিল্প খাতে ১ হাজার ৪৭৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। তেল, গ্যাস ও প্রাকৃতি সম্পদ খাতে ১ হাজার ১৫৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা। যোগাযোগ খাতে ৮৭০ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। শিক্ষা ও ধর্ম খাতে ১ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা। ক্রীড়া ও সংস্কৃতি খাতে কোন বরাদ্দ নেই। গণমাধ্যম খাতে ১৪ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। জনপ্রশাসন খাতে ৯২৭ কোটি ১৭ লাখ টাকা। শ্রম ও জনশক্তি খাতে ১১৯ কোটি ২২ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
×