ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

ডাঃ মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর প্রত্যয়

প্রকাশিত: ২১:২৭, ১ এপ্রিল ২০২১

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর প্রত্যয়

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের মহানায়ক শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর পাশাপাশি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবও পালিত হয়েছে। ২০২১ সালের মার্চ মাস নানা দিক দিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সারা বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশও করোনা মহামারী অতিমারীতে বিধ্বস্ত প্রায়। সকল ধরনের অনুষ্ঠানিকতা প্রায় থমকে গেছে। প্রতিক্রিয়াশীল মৌলবাদী গোষ্ঠী পরাজয়ের গ্লানি ভুলতে না পারায় পাকিস্তানপন্থী ও তাদের গুপ্তচর সংস্থা বাংলাদেশে অশান্তি সৃষ্টির জন্য নানাবিধ ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। এখানে উল্লেখ্য যে, ভাস্কর্যবিরোধী আন্দোলন, আল জাজিরা টেলিভিশনে মিথ্যা ও বানোয়াট খবর পরিবেশন, অযৌক্তিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো খুলে দেয়া, করোনার মধ্যেও পরীক্ষা নেয়ার জন্য চাপ দেয়া, বরিশাল, জাহাঙ্গীরনগর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নামমাত্র অজুহাতে আন্দোলন গড়ে তোলা, বিএনপি-ছাত্রদলের পুলিশের ওপর আক্রমণের মাধ্যমে লাশের রাজনীতি করা এবং ডিজিটাল আইনবিরোধী সমাবেশের মাধ্যমে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীরা তৎপর রয়েছে। সারা বিশ্ব করোনায় বিপর্যস্ত বিধ্বস্ত। এই অবস্থায় মুজিব শতবর্ষ উদ্যাপন ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপনে বাংলাদেশ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। এছাড়া সমাবেশ, রাজনৈতিক কর্মকা-, মেলা, সঙ্গীতানুষ্ঠানের মাধ্যমে স্বাধীনতার ইতিহাস তুলে ধরা হয়। রেডিও টেলিভিশন, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা বিশেষ অনুষ্ঠান ও ক্রোড়পত্রের মাধ্যমে এসব পালন করেছে। বাঙালী জাতির জীবনে স্বাধীনতা দিবস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই বছর আমরা সৌভাগ্যবান যে, আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করতে পারলাম। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধাই ইতোমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন। গত এক বছরে বাংলাদেশে প্রায় ৮ হাজারের বেশি এবং সারা বিশ্বে ২৬ লক্ষাধিক মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে ইতোমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছে। পৃথিবী ১১২ ট্রিলিয়ন ডলার এবং বাংলাদেশ ১৩ বিলিয়ন ডলার অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। জাতির জনকের সুযোগ্যা কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাকার কারণে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন প্রাক্কালে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি হিসেবে জাতিসংঘ চূড়ান্তভাবে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদার সুপারিশ প্রদান করেছে বাংলাদেশকে। এটি বাংলাদেশর জন্য একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা এবং বাংলাদেশ বিশ্বব্যবস্থাপনার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের দুয়ার উন্মোচন করল। মুজিব শতবর্ষ গত ১০ ডিসেম্বর ২০২০ পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে আরেকটি ঈর্ষান্বিত বিজয় অর্জিত হলো। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের বহুল প্রতীক্ষিত স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিলেন। যুক্ত করলেন প্রমত্তা পদ্মার এপার ওপার। বিশ্বনেতৃবৃন্দ এবং বিশ্ববাসীকে অবাক করে দিয়ে এই পদ্মা সেতু স্থান করে নিল ইতিহাসের পাতায়। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমরা এখন আর অনুদানের আশায় বসে থাকব না। নিজেদের টাকায়ই উন্নয়ন করব। এই করোনার মহামারীতেও প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল ও অপার সম্ভাবনার উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে পরিচিত পেয়েছে। সম্প্রতি জাতিসংঘর কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি সুপারিশ করেছে দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ভাল অবস্থানে আছে। তাই বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতিতে বুল কেস বা ষাঁড়। বাংলাদেশের স্বাধীনতায় অনবদ্য অবদানের জন্য বিশ্ব সমাদৃত প্রয়াত বিপ্লবী নেতা কিউবার দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ফিদেল ক্যাস্ত্রোকে বাংলাদেশ সরকার ২০১৩ সালে মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননায় ভূষিত করে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিত্ব নিয়ে ফিদেল ক্যাস্ত্রোর সেই অনবদ্য উক্তি চির অম্লান, আমি হিমালয় দেখিনি কিন্তু শেখ মুজিবকে দেখেছি। (বাংলাদেশের স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী উপলক্ষে ১৯৯৭ সালে ২৫ মার্চ বাংলাদেশে এসেছিলেন নোবেল পুরস্কার জয়ী দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট বর্ণবাদবিরোধী নেতা প্রয়াত নেলসন ম্যান্ডেলা। সেই সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ফিলিস্তিনের প্রয়াত প্রেসিডেন্ট ইয়াসির আরাফাত আর তৎকালীন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট সুলেমান ডেমিরেল। এবারও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশে সফর করেছেন বাংলাদেশের পরীক্ষিত অকৃত্রিম বন্ধুরাষ্ট্র ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ দক্ষিণ এশিয়ার পাঁচটি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানগণ। করোনার এই সঙ্কট কালেও বাংলাদেশের এবারের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী বর্ণাঢ্য নানা অনুষ্ঠানে সম্পন্ন হয়েছে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে। বিশ্ব এই ইতিহাসের সাক্ষী। দল মত নির্বিশেষে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে আমরা এগিয়ে যেতে চাই। এই দেশকে, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাকে ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত করে বাস্তবে রূপ দান করব। সকল অপশক্তি, জঙ্গীবাদ মৌলবাদকে প্রতিহত করতে আমরা সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করব- এই হোক স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আমাদের দৃঢ় অঙ্গীকার। লেখক : ভাইস চ্যান্সেলর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়
×