ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বনানীতে চিরনিদ্রায় শায়িত এইচ টি ইমাম

প্রকাশিত: ২৩:১৪, ৫ মার্চ ২০২১

বনানীতে চিরনিদ্রায় শায়িত এইচ টি ইমাম

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আমৃত্যু কর্মচঞ্চল ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম। ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার (৩ মার্চ) রাত সোয়া ১টায় মৃত্যুবরণ করেন ৮২ বছর বয়স্ক এই কর্মনিষ্ঠ মানুষ। ঢাকার বনানী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা ও মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবাসী সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সচিব এইচ টি ইমাম। শোক ॥ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের অন্যতম সদস্য এইচ টি ইমামের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। এছাড়াও জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরিন শারমীন চৌধুরী, সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ শোক জানিয়েছেন। এছাড়াও শোক জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, এলজিআরডিমন্ত্রী তাজুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী একেএম আবদুল মোমেন, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ হুমায়ুন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, পরিবেশ, বন ও জলবায়ুমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন, বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান, ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মোঃ এনামুর রহমান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোঃ জাকির হোসেন, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম। এছাড়াও শোক জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, এস এম কামাল হোসেন, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী। জাতীয় সংসদের হুইপ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্র্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। এইচ টি ইমামের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে জনতা ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ। ব্যাংকের এমডি এ্যান্ড সিইও আব্দুছ ছালাম আজাদ তার মরদেহে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। বাংলাদেশ সরকারী কর্ম কমিশন ও কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ মরহুমের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা ও সহমর্মিতা জ্ঞাপন করেন। গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী। তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে ও স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশ গঠনে এইচ টি ইমামের অসামান্য অবদান বাঙালী জাতি কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ রাখবে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন ॥ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এইচ টি ইমামের কফিনে ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ। বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে এইচ টি ইমামের মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে নিয়ে আসা হয়। সেখানে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ব্যবস্থাপনায় বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত সর্বস্তরের মানুষ তার কফিনে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। প্রথমে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহউদ্দিন ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমদ চৌধুরী তার কফিনে ফুল দেন। এরপর জাতীয় সংসদের স্পীকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর পক্ষ থেকে সংসদের সার্জেন্ট এ্যাট আর্মস কমোডর এমএম নাঈম রহমান শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। আর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস। আওয়ামী লীগের পক্ষে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য মুকুল বোস, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবীর নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, উপদফতর সম্পাদক সায়েম খান ফুল দিয়ে দলের উপদেষ্টামণ্ডলীর এই সদস্যকে শেষ বিদায় জানান। শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনও। যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে সংগঠন দুটির নেতা-কর্মীরাও এইচ টি ইমামের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোঃ আখতারুজ্জামান ও প্রক্টর অধ্যাপক একেএম গোলাম রব্বানীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তারাও শ্রদ্ধা জানান। এ সময় ওবায়দুল কাদের বলেন, এইচ টি ইমাম মেধা ও শ্রম দিয়ে সরকারকে যেমন সমর্থন করেছেন, তেমনি করে তিনি দেশের অনেক কাজ করেছেন। আওয়ামী লীগের প্রচার সেলের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি হাসপাতালে যাওয়ার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত সক্রিয় ছিলেন। তার মৃত্যুতে যে শূন্যতা হলো, এটা সহজে পূরণ হওয়ার নয়। তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, এইচটি ইমাম ছিলেন একজন অত্যন্ত দক্ষ, কর্মঠ, প্রাণবন্ত মানুষ। আমরা কখনও ভাবিনি তিনি হঠাৎ করে চলে যাবেন। এই করোনাকালেও তিনি ভালভাবে কাজ-কর্ম চালিয়ে গেছেন। তিনি বয়সে বৃদ্ধ হলেও মনের দিক থেকে ছিলেন তরুণ। তার মতো বুদ্ধিদীপ্ত মানুষ খুব কমই আছে। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন, জাসদ, বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটি, জাতীয় কবিতা পরিষদ, স্বাধীনতা চিকিৎসা পরিষদ, আইন উপকমিটি, বাংলাদেশ গণসঙ্গীত পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর এই প্রয়াত সদস্যের প্রতি। সিরাজগঞ্জে জানাজা ॥ এইচ টি ইমামের মরদেহ বৃহস্পতিবার সকালে নিয়ে যাওয়া হয় সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় তার গ্রামের বাড়িতে। সেখানে বেলা ১১টায় আকবর আলী সরকারী কলেজ মাঠে তার জানাজা হয়। বনানী কবরস্থানে দাফন ॥ ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সবার শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বাদ আছর গুলশানের আজাদ মসজিদে আরেক দফা জানাজা হয়। বিকেলে ঢাকার বনানী কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় সম্মান জানানোর পর তাকে দাফন করা হয়। এইচ টি ইমাম কিডনি জটিলতাসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। বর্ণাঢ্য কর্ম জীবন ॥ হোসেন তৌফিক ইমাম যিনি সচরাচর এইচ টি ইমাম নামে পরিচিত। জন্ম ১৯৩৯ সালের ১৫ জানুয়ারি টাঙ্গাইল শহরে। পিতা তাফসির উদ্দীন আহমেদ বি.এ. বি.এল. ও মাতা তাহসিন খাতুন। ১৯৫২ সালে ম্যাট্রিক পাস করেছেন ঢাকা কলেজিয়েট হাইস্কুল থেকে। এর পর ভর্তি হন পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে। এখান থেকেই ১৯৫৪ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। এরপর ভর্তি হন রাজশাহী কলেজে এবং সেখান থেকে অর্থনীতিতে অনার্সসহ বি.এ. ডিগ্রী অর্জন করেন ১৯৫৬ সালে। পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এ সময় তিনি প্রগতিশীল ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে বিশেষ করে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন। ১৯৫৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। এরপর তিনি রাজশাহী সরকারী কলেজে অর্থনীতির প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। এ সময় তিনি পাকিস্তান সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৬১ ব্যাচের সিএসপিদের মধ্যে তিনি ৪র্থ স্থান লাভ করেন এবং পাকিস্তান সরকারের উচ্চ পদে যোগদান করেন। ১৯৬২ সালে তিনি পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগদান করেন। পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে সদস্য হিসেবে তিনি তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকরি করেন। ১৯৬৫ সালে তিনি ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে নিযুক্তি লাভ করেন। ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের সময়ে তিনি অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের প্রথম ক্যাবিনেট সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ এর পর তিনি স্বাধীন বাংলাদেশে ক্যাবিনেট সচিবের দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। ১৯৭৫-এর ২৬ আগস্ট পর্যন্ত তিনি ক্যাবিনেট সচিবের পদে নিযুক্ত ছিলেন। এইচ টি ইমাম আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি তিনি দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দায়িত্ব পালন করা এইচ টি ইমাম ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে ক্যাবিনেট মন্ত্রীর মর্যাদায় জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা নিয়োগ করেন। ২০১৪ সালে টানা দ্বিতীয় দফায় আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে তাকে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা নিয়োগ করা হয়।
×