ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সাধারণ মানুষ অসাধারণ অভিনেতা

প্রকাশিত: ০১:৩৯, ২১ জানুয়ারি ২০২১

সাধারণ মানুষ অসাধারণ অভিনেতা

বাংলাদেশের বিনোদন জগতে বহু নক্ষত্রই আলো ছড়িয়েছেন। অসাধারণ অভিনয় আর প্রতিভার গুণে বহু গুণীজন দর্শকনন্দিত হয়েছেন। ঠিক তেমনই একজন নন্দিত মানুষ মুজিবুর রহমান দিলু। বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত বিখ্যাত নাটক সংশপ্তক সমন্ধে অনেকেরই বিস্তর ধারণা রয়েছে। মনে পড়ে কী সেই নাটকের একটি চরিত্রের নাম ছিল মালু। সেই মালু চরিত্রের যে যুবকটি রাতারাতি মানুষের ভালবাসা অর্জন করে নিয়েছিল তিনি মুজিবুর রহমান দিলু। বর্ণাঢ্য তাঁর অভিনয় জীবন ছিল। ১৯ জানুয়ারি ২০২১ পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যান না ফেরার দেশে। মৃত্যুকালে তিনি রেখে গেছেন স্ত্রী, সন্তান, নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী। এর আগে দিলু ২০০৫ সালে একবার গুলেন বারি সিনড্রোমে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন কোমায় ছিলেন। এরপর আবার সুস্থ জীবনে ফিরেও ছিলেন। মঞ্চ নাটক দিয়ে তাঁর বিনোদন জগতে পদচারণা। অসংখ্য মঞ্চ নাটকে অভিনয়ের পর তিনি টিভি নাটকে পা রাখেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত শিল্পী হন ১৯৭২ সালে। ১৯৭৬ সাল থেকে টিভিতে নিয়মিত অভিনয় করতে থাকেন। পরে অবশ্য বেশ ক’বছরই তাকে দেখা যায়নি টিভি পর্দায়। কোন এক অভিমানে গা ভাসিয়ে টিভি পর্দায় নিজেকে দেখাতে চাননি বলেই হয়ত পর্দায় তাঁর দেখা মেলেনি দীর্ঘ সময়। সে সময়টাতে টিভি নাটক দেখা দর্শকরা প্রচণ্ডভাবে মিস করেছে দর্শকনন্দিত এ অভিনেতাকে। আশির দশকে যারা টিভি নাটক দেখতেন তাঁদের নয়নের মণির মতোই ছিলেন দিলু। দিলুর উল্লেখযোগ্য মঞ্চ নাটকগুলো হলো, ‘আমি গাধা বলছি’, ‘নানা রঙ্গের দিনগুলো’, ‘জনতার রঙ্গশালা’, ‘নীল পানিয়া’, ‘আরেক ফাল্গুন’, ‘ওমা কী তামাশা’সহ বেশকিছু বিখ্যাত মঞ্চ নাটক। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের জনপ্রিয় নাটক ‘তথাপি’, ‘সময় অসময়’ ও সংশপ্তকে অভিনয়ের মধ্যে দিয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। ভাষা আন্দোলনের বছর ১৯৫২ সালে জন্ম তাঁর। ৬ নবেম্বর দিলু জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই প্রতিবাদী স্বভাবের দিলু স্কুলে পড়ার সময়ই স্বাধিকার আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন। ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে যে মিছিলে গুলিতে আসাদ শহীদ হয়েছিলেন সেই মিছিলে দিলুও ছিলেন। ৭০ সালে মেট্রিক পরীক্ষা দিয়েই বাংলাদেশকে শত্রুমুক্ত করার প্রতিজ্ঞা নিয়ে ঘর ছাড়েন। ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে ফিরে সরাসরি মহান মুক্তিযুদ্ধে রণাঙ্গনে নেমে পড়েন। নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে অংশ নিয়ে বীরত্বের স্বাক্ষর রাখেন। সাহসী, সংগ্রামী, সৎ যেই বিশেষণেই তাকে বিশেষায়িত করা হোক না কেন তিনি এক ও অনন্য। দেশ, দেশের সংস্কৃতি সব কিছুকেই যেন ভালবেসেছিলেন হৃদয়ের গহীন থেকে। কথায় আছে কীর্তিমানের মৃত্যু নেই। সুতরাং আমরা ধরেই নেব যে কর্মের মধ্য দিয়ে চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবেন দিলু।
×