ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

তথ্য প্রযুক্তি খাতে ১২ উদ্যোগ বাস্তবায়নাধীন

প্রকাশিত: ২২:৪৬, ১৭ জানুয়ারি ২০২১

তথ্য প্রযুক্তি খাতে ১২ উদ্যোগ বাস্তবায়নাধীন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ তথ্যপ্রযুক্তি খাতের মাধ্যমে গত বছর এক শ’ কোটি মার্কিন ডলার দেশে এসেছে। এ বছর আয়ের পরিমাণ আরও বাড়বে। এই খাতের উন্নয়নে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আলোকে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বারোটি উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। যাতে দেশে বেকার সমস্যা দূর হয়। বিশ্বে তথ্যপ্রযুক্তি অক্সিজেনের মতো প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। কৃষি, স্বাস্থ্য, ব্যবসা, উদ্ভাবন, প্রাকৃতিক সম্পদ, দক্ষতা, কর্মসংস্থান, অর্থনীতিসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে। করোনা মহামারীতে তথ্যপ্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। করোনা পরবর্তী পৃথিবী হবে পুরোপুরি তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর। এই বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এগিয়ে যাওয়ার ১২ বছর পূর্তি উপলক্ষে শনিবার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে আইসিটি ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। সংবাদ সম্মেলনে জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মাধ্যমে মানসম্মত শিক্ষা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, গবেষণা ও উদ্ভাবনের পরিবেশ সৃষ্টি, তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, আইসিটি অবকাঠামো তৈরি, বিনিয়োগের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ব্র্যান্ডিং, গ্রামীণ অঞ্চলে তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর পরিষেবা নিশ্চিত করা। এই পরিকল্পনা সামনে রেখে আইসিটি বিভাগের সেই ১২টি উদ্যোগ হলো সেন্টার অব এক্সিলেন্স, এজেন্সি টু ইনোভেট, স্টাবলিশিং ডিজিটাল কানেকটিভিটি, শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট অব ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি, ডিজিটাল লিডারশিপ একাডেমি, এনহান্সিং ডিজিটাল গবর্নমেন্ট এ্যান্ড ইকোনমি প্রজেক্ট, ইন্টার অপারেবল ডিজিটাল ট্রানজাকশন প্লাটফর্ম, সাইবার সিকিউরিটি হেল্পডেস্ক, ওপেন ডেটা এ্যানালিটিক্স প্লাটফর্ম (জনতার সরকার), ভার্চুয়াল কোর্ট, ন্যাশনাল ডিজিটাল হেলথ, ন্যাশনাল ডিজিটাল লাইব্রেরি। সংবাদ সম্মেলনে উদ্যোগগুলোর সার্বিক প্রস্তুতি সম্পর্কেও সাংবাদিকদের পলক জানান, একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় ও সারাদেশের ১২টি হাইটেক পার্কে সেন্টার অব এক্সিলেন্স স্থাপন করা হবে। এজেন্সি টু ইনোভেট স্থাপনের জন্য আইনের খসড়া পর্যায়ের কাজ শেষ হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে তা মন্ত্রিসভার অনুমোদনের জন্য পাঠাবে আইসিটি বিভাগ। এস্টাব্লিশিং ডিজিটাল কানেকটিভিটি প্রকল্পের আওতায় ২০২৫ সালের মধ্যে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত এক লাখ ১০ হাজার সংযোগ স্থাপন করা হবে। মাদারীপুরের শিবচরে ‘শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট অব ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি’ স্থাপন করা হবে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পেলেই তার কাজ শুরু হবে। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) বাস্তবায়ন করছে এনহান্সিং ডিজিটাল গবর্নমেন্ট এ্যান্ড ইকোনমি প্রজেক্ট। বাংলাদেশের মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল কার্যক্রম ইন্টার অপারেবল করতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও আইসিটি বিভাগের ইনোভেশন ডিজাইন ও এন্টারপ্রেনারশিপ একাডেমি বাস্তবায়ন করবে ‘ইন্টার অপারেবল ডিজিটাল ট্রানজাকশন প্লাটফর্ম। সাইবার সিকিউরিটি হেল্পডেস্ক-১০৪ সম্পর্কে পলক জানান, এর পরীক্ষামূলক কাজ চলছে এখন। জরুরী সেবা ৩৩৩-এর সঙ্গে সমন্বয় করে ‘১০৪’ সেবা চালু করতে কাজ করছে আইসিটি বিভাগ; যেন ‘৩৩৩’ নাম্বারে কল করেও কেউ সাইবার অপরাধের প্রতিকার পেতে পারে। আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ন্যাশনাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং- এনএলপি, বিগ ডেটা এ্যানালিটিক্সের সমন্বয়ে তৈরি হচ্ছে ‘ওপেন ডেটা এ্যানালিটিক্স প্লাটফর্ম (জনতার সরকার)’। এই প্লাটফর্মের ডেটা ভার্সনের কাজ চলছে। এই প্লাটফর্ম উন্মুক্ত হলে নাগরিকদের পাশাপাশি সেবা পাবেন নীতিনির্ধারকরাও। ভার্চুয়াল কোর্টের প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ ২০২১-২২ সাল মেয়াদে শেষ হবে। ২০২৫ সালের মধ্যে আইনী কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে ভার্চুয়াল কোর্টে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য রয়েছে আইসিটি বিভাগের। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ উন্নত দেশে রূপান্তর, মাথাপিছু আয় ১২ হাজার ৫শ’ ডলারের বেশি, সম্পূর্ণভাবে দারিদ্র্য বিমোচন, ন্যাশনাল স্পেস রিসোর্চ সেন্টার গড়ে তুলতে হবে আমাদের। এজন্য ত্রিমুখী কর্মপরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছি আমরা। সেগুলো হলো- সফটওয়্যার ও প্রসেস উদ্ভাবন এবং পরিষেবা ডিজিটাইজেশন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উদ্ভাবনের সঙ্গে শ্রম সুবিধার সংমিশ্রণ, প্রতিযোগিতা এবং কম কার্বন অর্থনীতির জন্য চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে কাজে লাগানো। ২০৪১ সালের পরিকল্পনার আলোকে ত্রিমুখী কৌশলের কথাও তুলে ধরেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি গত ১২ বছরে বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের নানা পরিবর্তনের বিষয় তুলে ধরেন। ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের উদ্যোগে কাজ চলছে ন্যাশনাল ডিজিটাল লাইব্রেরি প্রকল্পের। সারাদেশে সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতালগুলোর রোগী এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার কাজ ডিজিটাল প্লাটফর্মে নিয়ে আসতে শুরু হচ্ছে ন্যাশনাল ডিজিটাল হেলথ কার্যক্রম। সিলেটের ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ থেকে শুরু হচ্ছে এই প্রকল্প। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) ও এটুআই যৌথভাবে এ প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে। প্রথম পর্যায়ে ৫০ উপজেলা, ১০ জেলা ও পরে সারাদেশে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা মিলিয়ে এখন বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার এ্যান্ড ইনফরমেশন (বেসিসের) সদস্য সংখ্যা তিন লাখের বেশি। বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার এ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্যতে) ৫০ হাজারের বেশি তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান হয়েছে। দেশে আইটি ও আইটিএস খাতে এখন ১৫ লাখ তরুণ-তরুণী কাজ করছে। আমাদের লক্ষ্য, ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে আরও ৫ লাখ তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থানে নিয়ে আসা। দেশে এখন সাড়ে ১১ কোটি নাগরিক ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন। ইন্টারনেট ব্যবহারের সংখ্যা দিন যত যাবে তত বাড়বে। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ন্যাশনাল স্পেস রিসার্চ সেন্টার স্থাপনের কাজটি এখন এটুআইয়ের আইল্যাবে চলমান রয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ডেটা সেন্টার কোম্পানি লিমিটেড স্থাপন করায় বাংলাদেশে ডেটা স্টোরেজের ক্ষেত্রে ৩শ’ থেকে ৫শ’ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছে। আগামী ১-২ বছরের মধ্যে ই-নথি কার্যক্রম ডিজিটাল নথি কার্যক্রমে রূপান্তরিত করা হবে। বিগ ডেটা এ্যানালাইসিস, টেক্সট টু স্পিচ, স্পিচ টু টেক্সট, ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং-প্রযুক্তিগুলো ব্যবহার করে এই ডি-নথি কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। এতে সময় ও অর্থ দুটিই বাঁচবে। লাল ফিতার দৌরাত্ম্য কমিয়ে এনে আমরা ধীরে ধীরে পেপারলেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।
×