ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গাদের দ্বিতীয় দল ভাসানচর যাচ্ছে

প্রকাশিত: ২২:২৭, ২৮ ডিসেম্বর ২০২০

রোহিঙ্গাদের দ্বিতীয় দল ভাসানচর যাচ্ছে

মোয়াজ্জেমুল হক/ এইচএম এরশাদ ॥ যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন। প্রথম দলের সফল যাত্রার তেইশ দিন পর আজ দ্বিতীয় দফায় রোহিঙ্গাদের উখিয়া টেকনাফ থেকে স্থানান্তর শুরু হচ্ছে। সকাল থেকে রাতের মধ্যে চট্টগ্রামে নিয়ে আসার পর কাল (মঙ্গলবার) নৌবাহিনী ও প্রকল্পের জাহাজযোগে এদের পৌঁছানো হবে ভাসানচরে। এ দলে ৭শ’ থেকে এক হাজার রোহিঙ্গা থাকবে বলে স্থানান্তর কাজে জড়িতদের সূত্রগুলো জানিয়েছে। এদের সংখ্যা চূড়ান্ত হবে আজ উখিয়া টেকনাফের ট্রানজিট ক্যাম্প থেকে রওনা হওয়ার পর। পুরো প্রক্রিয়া নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থাসহ প্রশাসনের বিভিন্ন উইংয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীরা এ প্রক্রিয়া সফল করার কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছেন। ভাসানচরে নির্মিত এ প্রকল্পের পরিচালক নৌবাহিনীর কমডোর আবদুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী রবিবার বিকেলে জনকণ্ঠকে বলেছেন, আজ সকাল থেকে উখিয়া টেকনাফের বিভিন্ন শিবির থেকে বাসযোগে ধাপে ধাপে রোহিঙ্গাদের চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হবে। রাতে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর তত্ত্বাবধানে এদের রাখা হবে পতেঙ্গার বিএফ শাহীন স্কুলসহ বিভিন্ন পয়েন্টে। পরদিন মঙ্গলবার সকালে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও প্রকল্পের এলইউসি (ল্যান্ডিং ক্রাফটিং ইউটিলিটি) জাহাজযোগে এদের ভাসানচরে পৌঁছানো হবে। এ জন্য পতেঙ্গার বোটক্লাব সংলগ্ন এলাকা প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৫টি এলইউসি জাহাজ। উল্লেখ্য, গত ৪ ডিসেম্বর প্রথম দফায় ১৬৪২ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়েছে। ভাসানচরে এদের জীবনযাপন প্রক্রিয়া উখিয়া টেকনাফের আশ্রয় শিবিরের তুলনায় বহুগুণ উন্নত হওয়ায় রোহিঙ্গারা ভাসান চরে যেতে আগ্রহী হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় আগ্রহী দ্বিতীয় দলটিকে আজ উখিয়া টেকনাফ থেকে চট্টগ্রামে নিয়ে এসে কাল ভাসানচরে পৌঁছানো হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এ প্রকল্পটি মূলত গৃহহীনদের জন্য গড়ে তোলা হলেও রোহিঙ্গা ইস্যুটি সরকারের কাঁধে ভর করায় এবং এদের উখিয়া টেকনাফের আশ্রয় শিবিরের উন্নত জীবন থেকে অনুন্নত উন্নততর পর্যায়ে নেয়ার লক্ষ্যে অস্থায়ীভাবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে কমপক্ষে ১ লাখ রোহিঙ্গাকে স্থানান্তরের জন্য প্রকল্পটি প্রস্তুত করা হয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩১শ’ কোটি টাকারও বেশি। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়েছে। প্রকল্প পরিচালক আরও জানিয়েছেন, আগামী জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে বিদেশী সাংবাদিকদের বড় একটি দলকে ভাসানচর পরিদর্শন করানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কেননা, রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর প্রক্রিয়া নিয়ে জাতিসংঘ ও দুই সাহায্য সংস্থার আপত্তি রয়েছে। তাদের অভিযোগ, ভাসানচর রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ বাসযোগ্য স্থান নয়। অথচ, বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী এলাকা নোয়াখালীর হাতিয়া সংলগ্ন জেগে ওঠা এ চরটিতে বসবাসের জন্য যা যা প্রয়োজন তার সবই ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এছাড়া যেসব ক্লাস্টার হাউস নির্মিত হয়েছে সেগুলোর প্রতিটির মান জাতিসংঘ নির্ধারিত মানের। এরপরও ঝড় জলোচ্ছ্বাসে দ্বীপটি আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার অভিযোগ উঠানো হয়েছে। অথচ, ঝড় জলোচ্ছ্বাসের ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা গেছে, স্বাভাবিকের তুলনায় সেখানে ঝড় জলোচ্ছ্বাসের আঘাত সেখানে অতীতে তেমন ঘটেনি। এরপরও দ্বীপটির চারদিকে এমব্যাংকমেন্ট তৈরি করে এটিকে বসবাসযোগ্য করা হয়েছে। এরপরই নির্মিত হয়েছে সারি সারি ক্লাস্টার হাউস। রোহিঙ্গাদের সেখানে নেয়ার আগে রোহিঙ্গা মাঝিদের ভাসানচর পরিদর্শন করা হয়েছে। বর্তমানে সেখানে প্রায় ৩০টি এনজিও কাজ করছে। যারা রোহিঙ্গাদের দৈনন্দিন রসদ যোগান দিচ্ছে। পরবর্তীতে বিদেশী বিভিন্ন সংস্থা এবং সাহায্য সংস্থার প্রতিনিধিদের ভাসানচর পরিদর্শন করানোর সিদ্ধান্ত রয়েছে। ঠিক কখন বিদেশী সংস্থাগুলোর পক্ষে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জীবনযাপন পরিদর্শন করানো হবে সেটির দিনক্ষণ এখনও ঠিক হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানানো হয়েছে। বর্তমানে ভাসানচরে ১ হাজার ৯৪৮ রোহিঙ্গার বসবাস রয়েছে। এদের মধ্যে সাগর পথে মালয়েশিয়ায় যেতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসার পর ৩০৬ জনকে স্থান দেয়া হয় ভাসানচরের এসব ক্লাস্টার হাউসে। এরপর গত ৪ ডিসেম্বর প্রথম দফায় ১৬৪২ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়েছে। এখন দ্বিতীয় দফায় ৭শ’ থেকে এক হাজার রোহিঙ্গা নারী পুরুষ ও শিশুকে নেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
×