স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের সাহিত্য ভুবনের এক অনন্য ব্যক্তিত্ব মনজুরে মওলা। কবিতা সৃজনের স্বতন্ত্র পথরেখায় ছিল তার অবাধ বিচরণ। পদ্যের সমান্তরালে লিখেছেন। আপন শিল্প সুষমায় গদ্য রচনায়ও রেখেছেন নিজস্বতার স্বাক্ষর। রবীন্দ্রনাথের বিচিত্র বিষয় নিয়ে রয়েছে তার ব্যতিক্রমী গবেষণা কর্ম। সেই সুবাদে রবীন্দ্র গবেষক হিসেবেও মিলেছে তার বহুমাত্রিক প্রতিভার পরিচয়। তবে সকল কীর্তি ফেলে রেখে এই কবি, গবেষক, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ও ফেলো পাড়ি জমালেন না- ফেরার দেশে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রবিবার সকালে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি ... রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৮০। রেখে গেছেন স্ত্রী ও মেয়ে রওশন তামান্নাসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী এবং স্বজনকে। রবিবার বাদ আছর কবি মনজুরে মওলাকে আজিমপুর কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। এর আগে আজিমপুরের মেয়র হানিফ মসজিদে তার জানাজা হয়। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে তিনি বার্ধক্যজনিত শারীরিক নানান জটিলতায় ভুগছিলেন। করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর তিনি ও তার স্ত্রী রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। মনজুরে মওলার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, বাংলা একাডেমির সভাপতি শামসুজ্জামান খান ও মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী। বর্ণিল কর্মজীবনে মনজুরে মওলা জীবনের শেষ দিনগুলোতেও কর্মক্ষম ছিলেন, লিখে গেছেন বিচিত্র বিষয়ে। পেশাজীবনে বাংলাদেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে সব ছাপিয়ে বড় হয়ে উঠেছে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক পরিচয়টি। আশির দশকে প্রায় তিন বছর তিনি বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তার নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অমর একুশে গ্রন্থমেলার ইতিহাস। ‘একুশ আমাদের পরিচয়’ প্রত্যয়ে সে সময়েই আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় অমর একুশে গ্রন্থমেলা। এর বাইরে ঐতিহাসিক বর্ধমান ভবন সংস্কার, প্রথম জাতীয় ফোকলোর কর্মশালা আয়োজন, আরজ আলী মাতুব্বর বা খোদা বক্স সাঁইয়ের মতো লোকমনীষাকে ফেলোশিপ প্রদান, ‘বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস’, ‘ডেভিডসনের চিকিৎসাবিজ্ঞান’ কিংবা আনিসুজ্জামানের ‘পুরোনো বাংলা গদ্য’র মতো বই প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছেন। বাংলা একাডেমি কার্যকালে তার অসামান্য কীর্তির মধ্যে রয়েছে ‘ভাষাশহীদ গ্রন্থমালা’র ১০১টি বই। মনজুরে মওলার বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের প্রকাশক বাংলা একাডেমি। মনজুরে মওলা লিখেছেন ‘আমি নই’ ও ‘জালিয়ানওয়ালাবাগ’ শিরোনামের দুটি কাব্যনাট্য। রবীন্দ্র বিষয়ে তার অসাধারণ এক কীর্তি গ্রন্থমালা সম্পাদক হিসেবে তারই পরিকল্পনায় রবীন্দ্রসার্ধশতবর্ষে রবীন্দ্রবিষয়ক ১৫১টি বই প্রকাশ। সুধীন্দ্রনাথ দত্তের ‘দশমী’ বইটিকে কেন্দ্র করে লিখেছেন ‘নষ্ট নীড়’ নামের বই। অনুবাদ করেছেন ইবসেনের নাটক ‘ব্র্যান্ড’, এলিয়টের ‘সুইনি’ ও ‘দ্য রক’, ‘গির্জায় খুন’। এলিয়ট অনুবাদের পাশাপাশি তাঁর ব্যাখ্যাভাষ্যও করেছেন সমান গুরুত্বে। সাহিত্যে অবদানের জন্য মনজুরে মওলা বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ও বাংলা একাডেমি রবীন্দ্র পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর শোক ॥ বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক কবি ও প্রাবন্ধিক মনজুরে মওলার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রবিবার পৃথক বার্তায় শোক প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। বঙ্গভবন প্রেস উইং জানায়, শোক বার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘মনজুরে মওলার মৃত্যু বাংলাদেশের সাহিত্য অঙ্গনের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।’ রাষ্ট্রপতি মরহুম মনজুরে মওলার রুহের মাগফিরাত কামনা ও তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং জানায়, শোকবার্তায় শেখ হাসিনা বলেন, ‘মনজুরে মওলা তার সাহিত্যকর্ম ও সৃষ্টিশীলতার জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: