ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

গান কবিতা আলোচনায় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ

প্রকাশিত: ২৩:০৩, ১৫ ডিসেম্বর ২০২০

গান কবিতা আলোচনায় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিকেল গড়িয়ে নেমে আসে সন্ধ্যা। শহীদ মিনারের বেদিতে প্রজ্বলিত হয় আলোকশিখা। প্রদীপের স্নিগ্ধ আলোর সঙ্গী হয়ে ভেসে বেড়ায় গানের সুর। সবাই মিলে গেয়ে শোনায়Ñ আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে/এ জীবন পুণ্য করো তোমার দহন-দানে...। জাতির মননকে আলোকিত করা শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি এভাবেই নিবেদিত হলো শ্রদ্ধাঞ্জলি। সোমবার ছিল শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। দিবসটি ঘিরে ছিল নানা আয়োজন। শিল্পের আলোয় ভালবাসা নিবেদিত হয়েছে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি। গানের সুরে জানানো হয়েছে বিনম্র শ্রদ্ধা। কবিতার শিল্পিত উচ্চারণে প্রকাশ করা হয়েছে দেশের প্রতি তাদের অবদানের ও আত্মদানের কথা। বিশিষ্টজনদের আলোচনায় জানানো হয়েছে বিনম্র শ্রদ্ধা। এভাবেই নানা আয়োজনে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে আলোড়িত হয়েছেন রাজধানীর সংস্কৃতি ভুবন। দিবসটি উপলক্ষে হেমন্তের সকালে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, সঙ্গীত পরিবেশনা ও আবৃত্তি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে শিল্পকলা একাডেমি। কবিতাপাঠ ও আবৃত্তি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, শাহজাদী আঞ্জুমান আরা, আবৃত্তিশিল্পী মীর বরকত, মফিজুর রহমান, মাহিদুল ইসলাম মাহি, মজুমদার বিপ্লব, রফিকুল ইসলাম, শিমুল মুস্তাফা, মিজানুর রহমান সজল, কাজী বুশরা আহমেদ তিথি। সঙ্গীত পরিবেশন করেন প্রিয়াঙ্কা বিশ্বাস। পাশাপাশি রায়ের বাজার বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধেও একাডেমির পক্ষ থেকে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, সঙ্গীত ও আবৃত্তি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ আয়োজনে কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন কবি হাসান হাফিজ, মিনার মনসুর ও অসীম সাহা। আবৃত্তি করেন ইকবাল খোরশেদ, গোলাম সারোয়ার, লায়লা আফরোজ, মাহমুদা আখতার, কাজী মাহতাব সুমন, নায়লা তারান্নুম কাকলী এবং ফয়জুল আলম পাপ্পু। সঙ্গীত পরিবেশন করেন মাইনুল আহসান ও শীলা রানী দেবী। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে হেমন্ত সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রদীপ প্রজ্বালন করেছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। এর আগে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় অংশ নেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ, জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, পথনাটক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আহম্মেদ গিয়াস, গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট প্রমুখ। নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ভাস্কর্যের বিরোধিতা করার নামে আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙ্গার মতো ন্যক্করজনক কাজ করেছে। এর মাধ্যমে নিজেদের নগ্ন চেহারা আবার জাতির সামনে তুলে ধরেছে এই সাম্প্রদায়িক শক্তি। মূলত একাত্তরের স্বাধীনতাবিরোধীরাই নতুন রূপে আবির্ভূত হয়েছে আবার। শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে তাদের প্রতিরোধ করা হবে। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, ভাস্কর্য একটি জাতির আবেগ, ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক। হেফাজত ভাস্কর্যের বিরোধিতা করছে শুধু ধর্মীয় কারণে নয়, এর মধ্যে রাজনীতি রয়েছে। তারা সরকারকে উৎখাত করে বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানাতে চায়। তাদের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে দেয়া হবে না। এদেশ হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়া অসাম্প্রাদায়িক ও গণতান্ত্রিক। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ যখন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে তখন বাঙালী জাতিকে পরিকল্পিতভাবে মেধাশূন্য করতে চেয়েছিল পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী। তারাই একাত্তরের এদেশের মেধাবী সন্তানদের ডেকে নিয়ে রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে হত্যা করে। কারণ পরাজিত হানাদার বাহিনী চেয়েছিল বিজয় লাভ করলেও বাঙালীরা যাতে শিল্প, সংস্কৃতি, জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষায় মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে। এই অপশক্তি আজও সক্রিয়। তারা এখন ভাস্কর্যের বিরোধিতার নামে বাঙালী মনন ও সংস্কৃতির বিরোধিতা করছে। গোলাম কুদ্দুছ বলেন, পাকিস্তানী হানাদার বহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরেরা পরিকল্পিতভাবে দেশের সবেচেয়ে মেধাবী সন্তানগুলোতে হত্যা করেছে। যারা শিল্প, সংস্কৃতি ও আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে পশ্চিম পাকিস্তানের আগ্রাসন ও দমন নিপীড়নের প্রতিবাদ করেছে। দিবসটি উপলক্ষে সকালে আলোচনাসভার আয়োজন করে জাতীয় জাদুঘর। এতে একক বক্তৃতা করেন জাদুঘরের মহাপরিচালক খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান এনডিসি। আলোচনায় তিনি বলেন, বাঙালী জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে বেদনাদায়ক দিন একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বর। স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে এসে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যখন বুঝতে পারে তাদের পক্ষে যুদ্ধে জেতা সম্ভব না, তখন তারা নবগঠিত দেশকে সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও শিক্ষাগত দিক থেকে দুর্বল এবং পঙ্গু করে দেয়ার জন্য পরিকল্পনা করে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বর রাতে পাকিস্তানী বাহিনী তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সহায়তায় দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নির্মমভাবে হত্যা করে।
×