ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নোয়াখালীতে সমুদ্রবন্দর হলে অর্থনীতির ভিত আরও মজবুত হবে

প্রকাশিত: ২৩:১৫, ১২ ডিসেম্বর ২০২০

নোয়াখালীতে সমুদ্রবন্দর হলে অর্থনীতির ভিত আরও মজবুত হবে

গিয়াস উদ্দিন ফরহাদ, নোয়াখালী ॥ বহুল প্রতীক্ষিত নোয়াখালী সমুদ্রবন্দর বাস্তবায়নে বদলে যাবে দেশের অর্থনীতির চালচিত্র। ব্যাপক কর্মসংস্থানের পাশাপাশি আমদানি- রফতানি বাণিজ্য দেশে নতুন অধ্যায়ের সৃষ্টি হবে। দেশের উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগেও নবদিগন্ত উন্মোচিত হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০৪১ সালনাগাদ উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। সেই সোনালি স্বপ্ন বাস্তবায়নে দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাবে বৃহৎ এ প্রকল্পের কাজ। নোয়াখালী- কুমিল্লা এবং ফেনী-লক্ষ্মীপুর সড়কের আধুনিকায়ন এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। ফোর লেইন রাস্তা থাকায় নোয়াখালী সমুদ্রবন্দর স্থাপিত হলে সড়ক যোগাযোগে কোন সমস্যা হবে না। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানান যায়, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী নোয়াখালী সমুদ্র বন্দর দ্রুত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার জন্য চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার এ্যাডমিরাল আবুল কালাম আজাদের আন্তরিক সহযোগিতাও চেয়েছেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীকে আধা সরকারী পত্র (ডিও লেটার) দেয়ার পর নোয়াখালী সমুদ্রবন্দর বাস্তবায়নে নৌ-পরিবহন মন্ত্রাণালয় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ শুরু করে। নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ ও ফেনীর সোনাগাজী উপজেলা উপকূলবর্তী সন্দ¦ীপ চ্যানেলের আওতাভুক্ত এলাকায় সমুদ্রবন্দরটি নির্মাণের অনুরোধ জানানো হয়েছে। সেতু মন্ত্রণালয় ও নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ অঞ্চলে সমুদ্রবন্দর হওয়া উচিত বলে মন্ত্রণালয় মনে করছে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিশ্চিত করার আহ্বানও জানানো হয়েছে চিঠিতে। ডিও লেটারে ওবায়দুল কাদের উল্লেখ করেছেন, নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ ও ফেনী জেলার সোনাগাজী সমুদ্র উপকূলবর্তী উপজেলা। বঙ্গোপসাগর থেকে সন্দ্বীপ দিয়ে ছোট ও বড় ফেনী নদী মেঘনা হয়ে ভোলা জেলার দিকে প্রবহমান। বিআইডব্লিউটিএর নদী জরিপের তথ্য অনুযায়ী, বঙ্গোপসাগর থেকে সন্দ্বীপ চ্যানেল দিয়ে কোম্পানীগঞ্জ-সোনাগাজীর অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাছে নদী দেড় হাজার মিটার থেকে ২ হাজার ৩০০ মিটার প্রস্থ, এখানে গভীরতা ৭-৮-১০-১২ মিটার। শীতকালে কোথাও কোথাও ১৪ মিটার পানি থাকে। এখানে নদী চওড়া হওয়ায় ৫০০ থেকে ৬০০ মিটার লম্বা দুটি জাহাজ পাশাপাশি অনায়াসেই চলাচল করতে পারবে এবং প্রতি বছর নদী ড্রেজিংও করতে হবে না। উল্লেখ্য, সরকারের সোনাগাজী-মিরসরাই বঙ্গবন্ধু শিল্প নগর বা এর সন্নিকটে একটি সমুদ্রবন্দর স্থ্াপনের পরিকল্পনাও রয়েছে। চিঠিতে জনস্বার্থে বঙ্গোপসাগর থেকে সন্দ্বীপ চ্যানেল দিয়ে নোয়াখালী কোম্পানীগঞ্জ-সোনাগাজী অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাছাকাছি সমুদ্রবন্দর নির্মাণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রীর সহযোগিতা চান সড়ক পরিবহনমন্ত্রী। মুজিব শতবর্ষে সরকারের এ যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন পর্যটন শিল্পসহ বহুমুখী কার্যক্রমে আন্তর্জাতিক খ্যাতি বৃদ্ধির অপূর্ব সুযোগ সৃষ্টি হবে। দেশরত্ন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নেতৃত্বে সুনাম ও মর্যাদার উচ্চাসনে আসীন হবে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ। অচিরেই দৃশ্যমান হবে সমতট অঞ্চল তথা বৃহত্তর নোয়াখালীবাসীর স্বপ্নের নোয়াখালী সমুদ্রবন্দর। সমতটের জনগণ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির দার্শনিক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্বপ্নের সোনার বাংলা অচিরেই আধুনিক উন্নত দেশের কাতারে আসীন হবে। বাংলাদেশে বর্তমানে তিনটি সমুদ্রবন্দর রয়েছে। এর মধ্যে বড় দুটি সমুদ্রবন্দর হলো চট্টগ্রাম ও মংলা। সর্বশেষ পটুয়াখালীতে চালু হয়েছে পায়রা বন্দর। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। এর আগে বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী নিজেও নোয়াখালীতে সমুদ্রবন্দর স্থাপনের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন। ওই সময় তিনি বলেছিলেন, নোয়াখালীতে অবস্থিত বঙ্গোপসাগরের চ্যানেলে সমুদ্রবন্দর করা যায় কিনা, তা ভেবে দেখা হচ্ছে। নোয়াখালীর ওই চ্যানেলে বন্দর করা হলে ঢাকার পানগাঁও কনটেনার টার্মিনাল আরও গতিশীল হবে। চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর চাপ কমবে। এছাড়া সেখানে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চলও হবে। আর এখানে যেহেতু সমুদ্রের চ্যানেল রয়েছে, তাই পোর্ট করা গেলে তো আরও বেশি কার্যকর হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শিল্প-কারখানা নির্মাণ করেছেন। কিন্তু এই অঞ্চলে এখনও তেমন শিল্পায়ন হয়নি। তবে বর্তমানে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুইপাশে নতুন করে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এরই মধ্যে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এছাড়া জেলার সুবর্ণচর উপজেলায় আরেকটি অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দাবি জানিয়েছেন জেলার জনপ্রতিনিধিরা। তারা বলেছেন, বৃহত্তর নোয়াখালীকে নিয়ে সরকারের বৃহৎ পরিকল্পনা রয়েছে। এখানে নতুন করে শিল্প-কারখানা স্থাপন করা হলে বিদেশী বিনিয়োগ আসবে। ব্রিটিশ আমলেও এ অঞ্চলে বামনী সমুদ্রবন্দর চালু ছিল। কিন্তু কালের বিবর্তনে তা হারিয়ে গেছে। নোয়াখালী কোম্পানীগঞ্জ-সোনাগাজীতে নতুন করে সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করা হলে বৃহত্তর নোয়াখালী ও কুমিল্লার বাসিন্দারা এর সুফল পাবেন। এতে করে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চলে মালামাল পরিবহনের সময়ও কমে যাবে। ফলে এ অঞ্চলের শিল্পায়নও নতুন করে গতি পাবে। নোয়াখালীতে একটি আধুনিক সমুদ্রবন্দর স্থাপন দাবি এই অঞ্চলের মানুষের সুদীর্ঘ কালের। এটা নিঃসন্দেহে একটি সময়োচিত এবং খুবই প্রশংসনীয় উদ্যোগ। সমতট অঞ্চলের একটা অংশ বৃহত্তর নোয়াখালী। নোয়াখালী দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর এবং পশ্চিমে দেশের বৃহত্তম নদী মেঘনা। মেঘনা চ্যানেল এবং তৎসংলগ্ন সন্দ্বীপ চ্যানেলে সমুদ্রবন্দর স্থাপনের জন্য উপযোগী। যে সকল বিশেষ কারণে বৃহত্তর নোয়াখালীবাসী দাবি রাখে তা হলো, নোয়াখালী সমুদ্রবন্দরের অবস্থান সমুদ্র উপকূলবর্তীজেলাগুলির মধ্যে পূর্ব থেকে পশ্চিমে হিসাব করলে দেশের মাঝামাঝি (টেকনাফ থেকে সুন্দরবন)। রাজধানী ঢাকা এবং তৎসংলগ্ন জেলাসমূহ থেকে সরাসরি দক্ষিণে, নৌ পথে। রাজশাহী বিভাগ, রংপুর বিভাগ, সিলেট বিভাগ থেকে সরাসরি দক্ষিণে, নৌ পথে। রাজধানী ঢাকা এবং বাণিজ্যিক রাজধানী চিটাগাংয়ের ঠিক মাঝখানে অবস্থান। রাজধানী ঢাকা থেকে অন্য যে কোন সমুদ্র বন্দরের যে দূরত্ব নোয়াখালী সমুদ্র বন্দরের দূরত্ব তার অর্ধেক বা তারও কম। গ্রীন হাউসে ইফেক্টের ফলে বর্ষাকালে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে গেলে চট্টগ্রাম বন্দরে কার্গো হ্যান্ডলিং বাধাগ্রস্ত হয় ফলে বন্দরে জাহাজের দীর্ঘ জটের সৃষ্টি হয়। নোয়াখালী সমুদ্র বন্দর হলে যে কোন সমস্যায় চট্টগ্রাম বন্দরকে সাপোর্ট দিতে পারবে। নোয়াখালী সমুদ্র বন্দরের দূরত্ব রাজধানী ঢাকা থেকে সর্বোচ্চ ১৪০ কিলোমিটার সড়ক পথে। নৌপথে আরও কম। যা অন্য যে কোন সমুদ্র বন্দরের চাইতে অনেক কম। ঢাকা হতে কন্টেনার লোড করে বা ফ্যাক্টরি লোড করে নৌ পথ বা সড়ক পথে মাত্র ৬ ঘণ্টায় নির্দিষ্ট মাদার ভেসেলের কাটাপ টাইমের মধ্যে জাহাজীকরণ সম্ভব। অনুরূপভাবে আমদানি পণ্যও সড়ক বা নৌ পথে ঢাকায় পৌঁছানো সম্ভব। উত্তর বঙ্গ বিশেষ করে রাজশাহী বিভাগ, রংপুর বিভাগ, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা রাজবাড়ি, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরিয়তপুর, গোপালগঞ্জ, সিলেট বিভাগ, ময়মনসিংহ বিভাগের বিভিন্ন জেলাসহ মোট ৪০টি জেলা এই বন্দরের অধীনে নৌ ও সড়ক পথে আমদানি ও রফতানি পণ্য মাত্র ১০ থেকে ১৫ ঘণ্টায় জাহাজীকরণ এবং জাহাজ থেকে খালাস করে একই নিয়মে আমদানিকারকের কাছে পৌঁছানো সম্ভব। এক সময় ছিল তখন বন্দরকেন্দ্রিক শিল্পের স্থানীয়করণ হতো। কিন্তু আধুনিক কনসেপ্টে সে ধারণা পাল্টে গেছে। এখন বন্দরের সুবিধাভোগী দেশের যে কোন জেলায় যে কোন ধরনের শিল্প কারখানা স্থাপন করা য়ায়। লজিস্টিক সাপোর্টের মাধ্যমে স্বল্প খরচে এবং স্বল্প সময়ে পণ্যসামগ্রী বন্দরে আনানেয়া করা যায়। চীন তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। নদী শাসন করে মেঘনা নদীর পূর্ব পাড়ে বাঁধ নির্মাণ করে সরাসরি চটগ্রামের মীরসরাই উপকূলীয় বাঁধের সঙ্গে সংযুক্ত করে এই বাঁধকে বহু মাতৃক ব্যবহার উপযোগী করা যাবে। এই বাঁধ রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য জেলাকে সরাসরি নোয়াখালী সমুদ্রবন্দর এবং চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের মধ্যে সংযোগ করবে। পণ্যবাহী ট্রাক, ট্রলি, কভার ভেন এই পথে চলাচল করবে ফলে ঢাকা চট্টগ্রাম হাইওয়ের যানজট এবং মেরামত ব্যয় অনেকাংশ হ্রাস পাবে। ঢাকা চট্টগ্রাম হাইওয়ে শুধু যানবাহন এবং সরকারী গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যবহার হবে। এই বাঁধে রেলসড়ক সংযুক্ত করলে একদিকে অনেক জায়গা বাঁচবে অন্যদিকে এই অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের চক্রাকার রেল সুবিধার দাবি, বি.বাড়ীয়া, কুমিল্লা, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীবাসীকে শতভাগ রেলওয়ে সার্ভিসের আওতায় আনা সম্ভব। এই বাঁধের ওপর উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনি গড়ে তুললে একদিকে পরিবেশ সুরক্ষা পাবে অপরদিকে যে কোন ছোট বড় প্রাকৃতিক দূযো’গ থেকে এই অঞ্চলের মানুষ, প্রাণী এবং সম্পদ রক্ষা পাবে। নদী শাসন, সবুজ বনায়ন, সড়ক নির্মাণের ফলে যে নান্দনিক সৌন্দযে’র সৃষ্টি হবে তখন এই অঞ্চলে হোটেল, মোটেলসহ এক আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র স্থাপিত হবে। নদী শাসনের ফলে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের মধ্য এবং নিম্ন অঞ্চলের বন্যা প্রবণতা যেমন হ্রাস পাবে তেমনি প্রমত্তা পদ্মা এবং মেঘনার ভাঙ্গনের হাত থেকে এই অঞ্চলের মানুষ ও সম্পদ রক্ষা পাবে। উপকূলীয় বাঁধের ওপর স্লুইজগেট নির্মাণ করে বাঁধের অভ্যন্তর ভাগে পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন যেমন বাড়বে তেমনি ছোট ছোট নদী ও খালে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করা যাবে। নোয়াখালী সমুদ্র বন্দরের ফলে বৃহত্তর নোয়াখালী এবং বৃহত্তর কুমিল্লা অঞ্চলকে পরিকল্পিতভাবে সাজানো যাবে। যেমন শিল্প অঞ্চল, আবাসিক এলাকা, কৃষি, রাস্তাঘাট, খালবিল নদীনালা, পর্যটন, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ফায়ার সার্ভিস বিমান বন্দর, নিরাপত্তা ইত্যাদি। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির সুনাম ছড়িয়ে পড়বে, দেশ থেকে মহাদেশে। বিনিয়োগ ও পর্যটক আর্কষণের প্রধান শর্তই হচ্ছে সুন্দর আইনশৃঙ্খলাসহ একটা সুন্দর, কার্যকর একটি আদর্শ রাষ্ট্র। এই অঞ্চলে পরিকল্পিত শিল্পায়ন এবং নগরায়ন হলে ঢাকা ও চট্টগ্রামমুখী মানুষের স্রোত যেমন থামানো যাবে তেমনি ঢাকা ও এর আস পাশের এলাকার শিল্প কলকারখানা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং চট্টগ্রামের শিল্প কারখানা কর অবকাশের আওতায় বৃহত্তর নোয়াখালী বা বৃহত্তর কুমিল্লা অঞ্চলে স্থানান্তর করে ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ এবং চট্টগ্রামকে নতুন করে পরিকল্পিত নগরে রূপ দেয়া যাবে। মেঘনা চ্যানেলে গভীরতা ২০মিটার, সন্দ্বীপ চ্যানেলে ১৪ মিটার, চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে ৯.৫ মিটার, মংলা সমুদ্র বন্দর ৮.৫ মিটার, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর ১৪ মিটার, মহেশখালীর গভীর সমুদ্র বন্দর (মাতার বাড়ি) ১৬ মিটার। যে কোন সমুদ্র বন্দরের চাইতে নোয়াখালী সমুদ্র বন্দরের গভীরতা যেমনি বেশি, তেমনি পাশাপাশি কয়েকটি জাহাজ একসঙ্গে চলা চল করার মতো জায়গা এখানে বিদ্যমান। এখানে ভাটার সময়ও সমুদ্রে চলাচলকারী যে কোন সাইজের মাদার ভেসেল অনায়াসে বার্থ করতে এবং ছেড়ে যেতে পারবে। এখানে কখনও নাব্য সঙ্কটের আশঙ্কা নেই। নোয়াখালীর সমুদ্র বন্দরের সুবিধা পার্শ্ববতী হাতিয়া ও সন্দ্বীপে সম্প্রসারিত হয়ে এই দ্বীপসমুহের যোগাযোগ, পর্যটন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠবে। ফলে জনগণের জীবনমান উন্নত হবে। নোয়াখালী সমুদ্র বন্দরের সুবিধাভোগী জেলা ও বিভাগ সমুহে পরিকল্পিত শিল্পায়ন এবং নগরায়নের ফলে ব্যাপক নতুন কর্ম সংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এই বন্দর আন্তর্জাতিকভাবে ব্যবহারের জন্য ট্রানশিপমেন্ট পোর্ট হিসাবেও ব্যবহার করা যাবে। সিংঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া এবং নেদারল্যান্ডসের রোটারড্রাম বন্দরের আদলে। উপসংহারে বলবো এই বন্দর অর্থনৈতিকভাবে প্রিয় বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় আসীন করবে।
×