অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আগামী ১০ মাসে শতভাগ মাসিক রিটার্ন অনলাইনে দাখিলের আশা করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর। কারণ করোনাভাইরাসের কারণে ঘরে বসে অনলাইনে মাসিক রিটার্ন দাখিলের পরিমাণ বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের অক্টোবর মাস পর্যন্ত প্রায় ৬৭ শতাংশ রিটার্ন দাখিল অলনাইনে হয়েছে। প্রায় ৭৪ হাজার রিটার্ন এ সময় অনলাইনে জমা হয়েছে। ফলে আগামী ৮ থেকে ১০ মাসের মধ্যে শতভাগ রিটার্ন অনলাইনে দাখিল করা যাবে।
বৃহস্পতিবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সম্মেলন কক্ষে জাতীয় ভ্যাট দিবস ও ভ্যাট সপ্তাহ-২০২০ উপলক্ষে ওয়েবিনার এবং সেরা ভ্যাটদাতাদের সম্মাননা অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (মূসক নীতি) আবদুল মান্নান শিকদার। তিনি বলেন, ‘যেসব করদাতা অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করতে সক্ষম হচ্ছেন না তাদের জন্য সনাতনী কাগজে রিটার্ন দাখিলের ব্যবস্থাও থাকছে, যা পরবর্তী সময়ে ভ্যাট কর্মকর্তারা স্ক্যান করে ডিজিটাল ডেটায় পরিণত করছেন।’
অনুষ্ঠানে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মোঃ রহমাতুল মুনিম বলেন, ‘করোনার মধ্যেও আমাদের প্রবৃদ্ধি ঈর্ষণীয়। ট্যুরিজম, পরিবহনসহ অনেক খাতে স্থবিরতার পরেও আমরা ভাল করছি। ভ্যাটের ক্ষেত্র বৃদ্ধিতে দরকার অটোমেশন। এনবিআরে অটোমেশন প্রক্রিয়া চলমান আছে। কর প্রদান, ভ্যাট প্রদান সহজীকরণে কাজ করে যাচ্ছে এনবিআর।’
বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) প্রেসিডেন্ট শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, ‘ভ্যাটের আওতা বাড়াতে আমরা কাজ করছি। তবে ভ্যাটের আওতা বাড়ালে ট্যারিফ কমিয়ে আনতে হবে। এ ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।’
গ্রামীণফোনের সিইও ইয়াসির আজমান বলেন, ‘প্রবৃদ্ধির সাফল্য ধরে রাখতে হলে এনবিআরকে আরও বেশি ডিজিটাইজেশন করতে হবে। ইএফডি এনবিআররের একটি মাইলফলক, এতে ক্রেতা ও বিক্রেতা সব পক্ষের মাঝেই স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে।’
অনুষ্ঠানে জাতীয় পর্যায়ের সর্বোচ্চ ভ্যাট প্রদানকারী নয়টি প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা দেয়া হয়। উৎপাদন খাতে পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস, বার্জার পেইন্টস ও ফেয়ার ইলেকট্রনিক্সকে পুরস্কার ও সম্মাননা দেয়া হয়। ব্যবসা খাতে হ্যামকো কর্পোরেশন, সিমেন্স ও ইউনিমার্ট ছাড়াও সেবা খাতে সামিট কমিউনিকেশনস, কাতার এয়ারওয়েজ গ্রুপ (কিউসিএসসি), চিটাগাং ওয়্যারহাউজেসকে সর্বোচ্চ ভ্যাট প্রদানকারী সম্মাননা দেয়া হয়।
খুলনায় ১০ প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা ॥ খুলনা অফিস থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, জাতীয় ভ্যাট দিবস ও ভ্যাট সপ্তাহ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার খুলনায় ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে উৎপাদন, সেবা ও ব্যবসা এই তিন ক্যাটাগরিতে সর্বোচ্চ ভ্যাট প্রদানকারী ১০টি প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। সর্বোচ্চ ভ্যাট প্রদানকারী সম্মাননাপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো মধ্যে রয়েছে উৎপাদনে খুলনার আব্দুল্লাহ ব্যাটারি, সাতক্ষীরার চায়না বাংলা ফুডস, শরীয়তপুরের মনিকা কেমিক্যাল এবং বাগেরহাট মোংলার এসকেএস এলপিজি। সেবায় খুলনার টাইগার গার্ডেন ইন্টারন্যাশনাল, শরীয়তপুরের চিত্ত ঘোষ মিষ্টান্ন ভান্ডার এবং বাগেরহাটের হোটেল অভি। ব্যবসায় সাতক্ষীরার শাহিল এন্টারপ্রাইজ, শরীয়তপুরের এজি ট্রেডার্স এবং বাগেরহাটের তারেক এন্টারপ্রাইজ।
এ উপলক্ষে খুলনা কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের আয়োজনে কমিশনারেটের টেনিস গ্রাউন্ডে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক। খুলনা কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার (চলতি দায়িত্ব) সামছুল ইসলাম এতে সভাপতিত্ব করেন।
যশোরে ২৩ করদাতাকে সম্মাননা ॥ যশোর অফিস থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, জাতীয় ভ্যাট দিবস ও ভ্যাট সপ্তাহ উদ্বোধন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট যশোরের সভাকক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যশোর কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট কমিশনার মুহাম্মদ জাকির হোসেনের সভাপতিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বেনাপোল কাস্টম হাউসের কমিশনার আজিজুর রহমান।
অনুষ্ঠানে ২০১৯-২০ অর্থবছরে উৎপাদন, সেবা ও ব্যবসা এ তিনটি ক্যাটাগরিতে সর্বোচ্চ ভ্যাট প্রদানকারী ১০ জেলার ২৩টি প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা ক্রেস্ট দেয়া হয়। সম্মাননাপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- যশোরের পানশাহী জর্দ্দা ফ্যাক্টরি, থ্রি আর অটো ও আরআরএফ। রাজবাড়ীর বদরুন্নেসা কেমিক্যাল কোম্পানি, আমিন বাজাজ ও হোটেল সালমা এ্যান্ড রেস্টুরেন্ট।
মেহেরপুরের আল কাঈফ মটরস ও বাসুদেব গ্রান্ড সন্স। মাগুরার ভাই ভাই প্লাস্টিক, ডিউরেবল প্লাস্টিক ও হোটেল সোনার বাংলা। ফরিদপুরের রাজ্জাক ফুড এ্যান্ড বেভারেজ, তাজ ইন্টারন্যাশনাল ও হোটেল র্যাফেলস ইন, নড়াইলের নিরিবিলি পিকনিক স্পট। ঝিনাইদহের বিএ্যান্ডটি মোটর ও ফসিয়ার মোটরসাইকেল সেন্টার। চুয়াডাঙ্গার বঙ্গ পিভিসি পাইপ ইন্ডাস্ট্রিজ ও তাজ মটরস। গোপালগঞ্জের কাজী সৈয়দ আলী ও শরীফ ফার্নিচার। কুষ্টিয়ার এমআরএস ইন্ডাস্ট্রিজ এবং গ্রীন এন্টারপ্রাইজ।