ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতিনিধি দল ঢাকায়

রাজস্ব আয় বাড়ানোর তাগিদ আইএমএফের

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:১৬, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

রাজস্ব আয় বাড়ানোর তাগিদ আইএমএফের

রাজস্ব আয় বাড়ানোর তাগিদ আইএমএফের

আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট সামনে রেখে সরকারি আয় বাড়াতে রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফ। সংস্থাটি মনে করে, সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য জ্বালানি ভর্তুকি কমিয়ে আনা, বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের পরিমাণ বাড়ানো, ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা এবং ভ্যাট ও কর আদায়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সক্ষমতা আরও বাড়াতে হবে।

বুধবার আইএমএফের সফররত পর্যালোচনাকারী প্রতিনিধি দলটি বৈঠক করে অর্থবিভাগ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে। এ ছাড়া পর্যায়ক্রমে এনবিআর, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়, কৃষি, বাণিজ্যসহ আরও কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে প্রতিনিধি দলটির। 
উল্লেখ্য, আগামী বাজেট সামনে রেখে মঙ্গলবার আইএমএফের ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসে। আগামী ৮ মে পর্যন্ত প্রতিনিধি দলটি ঢাকায় থেকে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বৈঠক করবে। এ ছাড়া আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণের তৃতীয় কিস্তি পাওয়া যাবে আগামী জুন মাসে। এ কারণে বাংলাদেশকে দেওয়া ঋণের শর্ত পূরণের কাজ পর্যালোচনা বা রিভিউ করবে প্রতিনিধি দলটি।

তবে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বসন্তকালীন বৈঠকে ঋণের তৃতীয় কিস্তি পাওয়ার ব্যাপারে ইতোমধ্যে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেছে সংস্থাটি। সে কারণে ঋণের কিস্তি পাওয়া নিয়ে সেই অর্থে তেমন চাপ নেই সরকারের ওপর। অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বসন্তকালীন সভায় অংশগ্রহণের জন্য এখন ওয়াশিংটন সফরে সফরে রয়েছেন। তাঁর এই সফরে ঋণের তৃতীয় কিস্তি এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সংস্থা দুটির সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। সেখানে ঋণের কিস্তি প্রদানে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে আইএমএফ। 
জানা গেছে, প্রতি বছর বাজেটের আগে আইএমএফের একটি দল এ সময় ঢাকায় আসে। এ সময় সংস্থাটি সরকারের আয় বাড়ানো এবং অর্থ ব্যয়ের সক্ষমতা নিয়ে আলোচনা করে থাকে। এ ছাড়া রিজার্ভ পরিস্থিতি, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ভর্তুকি কমিয়ে আনা, কৃষি উৎপাদন বাড়ানো, এনবিআরের সক্ষমতা বৃদ্ধি, রপ্তানি এবং রেমিটেন্স আহরণ নিয়ে পর্যালোচনামূলক বৈঠক করে থাকে।

এরই ধারাবাহিকতায় এবারও আইএমএফের ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করছে। এর পাশাপাশি সংস্থাটি চলমান ঋণ কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতি বছর বাজেটের আকার ১২ শতাংশ বাড়ানো হলেও এবার বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সেই প্রবৃদ্ধি কমিয়ে চার শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। ফলে আগামী বাজেটের আকার বাড়বে মাত্র চার শতাংশ। ইতোমধ্যে বাজেট সংক্রান্ত সম্পদ কমিটির বৈঠকে বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ লাখ ৯৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। 
অর্থবিভাগের সঙ্গে বুধবারের বৈঠকে বাজেট নিয়ে আলোচনা করা হয়। এ সময় আইএমএফের পক্ষ থেকে সরকারের আয় বাড়াতে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছে বলে জানা গেছে। বিশেষ করে আয়কর ও ভ্যাট আদায়ে বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। সংস্থাটি মনে করে, দেশে ঠিকমতো ভ্যাট ও আয়কর আদায় করা হচ্ছে না। বিপুলসংখ্যক মানুষ আয়কর প্রদানের বাইরে রয়ে গেছেন।

এ ছাড়া ভ্যাট ফাঁকি একটি বড় সমস্যা। এমন বাস্তবতায় এনবিআরের সক্ষমতা বাড়ানো গেলে সরকারের আয় বাড়বে বলে মনে  করা হচ্ছে। বৈঠকে অর্থবিভাগের অতিরিক্ত সচিব সিরাজুর নূর চৌধুরী, অতিরিক্ত সচিব মো. সাইফুল ইসলাম, ডেপুটি সেক্রেটারি মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে আইএমএফের পক্ষ থেকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণেও সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দেওয়া হয়।

সংস্থাটি মনে করে, বাংলাদেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বজায় থাকতে পারে, এই অবস্থায় ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৭ শতাংশ হতে পারে বলে ইতোমধ্যে পূর্বাভাস দিয়েছে আইএমএফ। তাদের সবশেষ পূর্বাভাসে এই প্রক্ষেপণ করা হয়। গত বছরের অক্টোবরে আইএমএফ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশ হওয়ার প্রক্ষেপণ করেছিল, যা এই সংস্করণে সংশোধন করে ৫ দশমিক ৭ শতাংশে নামানো হয়েছে।

এদিকে বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন, মধ্যপ্রাচ্য সংকটসহ বিভিন্ন কারণে রপ্তানি ও রেমিটেন্স প্রবাহ কিভাবে ধরে রাখা যাবে সেই বিষয়ে আলোচনা করে সংস্থাটি। বিশেষ করে ডলার সংকটের কারণে আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত হওয়ার বিষয়টিও আলোচনা করা হয়। এ ছাড়া গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে দেশের রাজস্ব আদায় জিডিপির ৮-৯ শতাংশ। আইএমএফের ঋণ কর্মসূচিতে রাজস্ব খাতে সংস্কার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া আইএমএফ দল ব্যাংকিং খাতে বেশকিছু সংস্কার প্রস্তাব ও ব্যাংক কোম্পানি আইন বাস্তবায়নসহ অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করে। এ ছাড়া সফররত প্রতিনিধি দলটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে আরেকটি পৃথক বৈঠকে মিলিত হয়। সেখানে রিজার্ভ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করে আইএমএফ। এ ছাড়া ডলার পরিস্থিতির উন্নতি, ব্যাংকিং খাতে সুশাসনে নজর বিশেষ করে খেলাপি ঋণ আদায়ে জোর দেওয়ার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। 
জানা গেছে, আইএমএফের ঋণের তৃতীয় কিস্তি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আইএমএফের প্রথম কিস্তি পাওয়ার পর বাংলাদেশ দ্বিতীয় কিস্তি পায় গত ডিসেম্বরে। দ্বিতীয় কিস্তি পাওয়ার আগে সময়ভিত্তিক লক্ষ্যমাত্রা পুরোপুরি অর্জন করতে পারেনি বাংলাদেশ। বিশেষ করে গত জুন শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি।

তবে রিজার্ভ সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা কমাতে আইএমএফের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে যে অব্যাহতি চেয়েছিল বাংলাদেশ, সংস্থাটি তা অনুমোদন করে। সে অনুযায়ী ডিসেম্বর শেষে রিজার্ভ সংরক্ষণের নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়। গত ডিসেম্বর শেষে নিট রিজার্ভ থাকার কথা ছিল ২৬ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার কমিয়ে তা ১৭ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার করা হয়। তবে ডিসেম্বর পর্যন্ত নিট রিজার্ভ ছিল ১৬ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, তৃতীয় কিস্তি অর্থ পাওয়া যাবে।

×