ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য অবমাননাকারীদের গণধোলাইয়ের নির্দেশ ছাত্রলীগ সভাপতির

প্রকাশিত: ২১:৫১, ৭ ডিসেম্বর ২০২০

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য অবমাননাকারীদের গণধোলাইয়ের নির্দেশ ছাত্রলীগ সভাপতির

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, ‘রাতের আঁধারে যারা জাতির পিতার ভাস্কর্যকে অবমাননা করেছে তাদের সিসিটিভির মাধ্যমে দেখা গেছে। আমি চ্যালেঞ্জ করছি তোরা সামনে আয়, তোদের মোকাবেলার জন্য আমি আল নাহিয়ান খান জয়ই যথেষ্ট। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশে জয় বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের অবমাননাকারীদের যেখানে পাবেন, তাদের পুলিশে তুলে দেয়ার আগে গণধোলাই দিয়ে হাত-পা ভেঙ্গে দেবেন।’ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙ্গার প্রতিবাদ ও জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে রবিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল পরবর্তী সমাবেশে ছাত্রলীগ সভাপতি এ মন্তব্য করেন। এর আগে মধুর ক্যান্টিন থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে গিয়ে শেষ হয়। প্রতিবাদ সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস, সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান হৃদয়, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি মেহেদী হাসান, সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের আহমেদ। এছাড়াও কেন্দ্রীয় কমিটিসহ ঢাকার বিভিন্ন ইউনিটের প্রায় তিন হাজার নেতাকর্র্মী উপস্থিত ছিলেন। ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ দেশের প্রতিটি জনগণের হৃদয়ে অবস্থান করছে। ভাস্কর্যের বিরোধিতা করে জনগণের হৃদয় থেকে বঙ্গবন্ধুকে দূরে রাখা যাবে না। বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক দেশ হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। ধর্ম ব্যবসায়ীরা ধর্মকে পুঁজি করে অরাজকতা তৈরি করছে। এদের উদ্দেশ্য একটি। ’৭১ সালেও তারা এ দেশকে অস্বীকার করেছিল। ধর্মের নাম করে অশান্তি তৈরি করলে এক চুলও ছাড় দেয়া হবে না। ছাত্রলীগ সব সময় শান্তিতে বিশ্বাস করে। তোদের মতো কুলাঙ্গারদের শাস্তি দেয়ার জন্য ছাত্রলীগ বেয়াদব হবে।’ সমাবেশে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, ‘আপনারা কথায় কথায় হুমকি দেন। নব্বই ভাগ মুসলমানের দেশে নিরানব্বইভাগই আপনাদের বিরোধিতা করে। আপনাদের এই ধরনের কর্মকাণ্ডের অবজ্ঞা করে। তাহলে এই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের মুসলমানদের প্রতিনিধিত্ব করার অধিকার আপনাদের কে দিয়েছে? বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলবেন না। যদি কেউ বলেন, জাতির পিতার অবমাননা করেন, তাহলে সেই দেহ নিয়ে বাড়িতে ফিরতে পারবেন না। তাদের ঠিকানা হবে কারাগারে বা ফাঁসির কাষ্ঠে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের আবেগ, সংবিধান, রাষ্ট্রীয় স্বার্থ নিয়ে কথা বলার অধিকার আপনাদের কে দিয়েছে? একথা আপনাদের স্পষ্ট করতে হবে। ওহি নাজিলের মতো সকাল বেলা হঠাৎ করে বলা শুরু করলেন ভাস্কর্য থাকবে না। আজব ব্যাপার! আপনাদের বারবার সাবধান করে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু আপনারা সীমা লঙ্ঘন করেছেন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ অনেক ধৈর্য্য ধরেছে। অনেক প্রতিবাদ করেছে। কিন্তু এখন আর বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রতিবাদে বিশ্বাস করবে না। আপনাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।’ ভাস্কর্য নিয়ে স্ট্যাটাস, ছাত্রলীগ নেতা বহিষ্কার ॥ ভাস্কর্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ার জেরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসীম উদ্দীন হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক কবির হোসাইনকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কৃত ওই নেতার নাম কবির হোসাইন। তিনি হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। গত শনিবার সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনের নীতি-আদর্শ ও শৃঙ্খলা পরিপন্থী কার্যকলাপে জড়িত থাকায় কবির হোসাইন (যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, কবি জসীম উদ্দীন হল শাখা ছাত্রলীগ)-কে ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হলো। তবে, ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ার জেরেই তাকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে বলে ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে। জানা গেছে, গত পহেলা ডিসেম্বর কবির হোসাইন ফেসবুক আইডিতে ভাস্কর্য নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে এক জায়গাতে তিনি উল্লেখ করেন, মামুনুল হক যদি কোরানের ভুল ব্যাখ্যা করে, তার কণ্ঠনালী কেটে দাও, যদি কোরান ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে কথা বলে, আল্লাহ এটাকে হারাম করে, তবে কোন্ বাপের বেটা এটাকে হালাল করার সাহস রাখে? কোরানের বিরোধিতা যেই করবে তার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে ১ সেকেন্ডও অপেক্ষা করবে না ইমানদাররা! হোক সে মামুমুল হক, মুজিব, জিয়া! হোক সে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, বামাতি বা জামাতি! ইসলামের প্রতিনিধিত্ব রহিমুদ্দি, সলিমুদ্দি, কলিমুদ্দিরা করে না, স্বয়ং আল্লাহর রাসূল করেন! ইসলাম শিখতে হলে কোরান হাদিসের জ্ঞান অর্জন করতে হবে, মনগড়া যুক্তি খাটবে না!
×