ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

টেলিভিশন দর্শক হারিয়েছে!

প্রকাশিত: ২৩:৫৮, ২৬ নভেম্বর ২০২০

টেলিভিশন দর্শক হারিয়েছে!

কেবল বাংলাদেশ নয় সারা পৃথিবীতেই একই চিত্র! মানুষকে সচেতন করতে এবং জীবনমান উন্নত করতে অতীতে টেলিভিশনের যে ভূমিকা ছিল তা এখন অনেকটাই কমে গিয়েছে। ইন্টারনেট এবং আধুনিক প্রযুক্তির সচরাচর ব্যবহার দর্শকদের যেমন টেলিভিশনবিমুখ করেছে তেমনি সময়ের সঙ্গে চলতে গিয়েও অনেকটা পিছিয়ে পড়েছে ১৯৬২ সাল থেকে চলে আসা টেলিভিশন মাধ্যম। এক্ষেত্রে বাংলাদেশে এর নেতিবাচক প্রভাব সব থেকে প্রকোপ দেখা দিয়েছে। গত এক দশকে বাংলাদেশের টলিভিশন চ্যানেলগুলো সব থেকে বেশি দর্শক হারিয়েছে। এই সময়ের মধ্যে দেশের ভেতরে ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা এবং আধুনিক প্রযুক্তির স্মার্টফোন ব্যবহার সাধরাণ মানুষদের মধ্যে নিয়ম করে টেলিভিশনের সামনে বসার দীর্ঘ দিনের অভ্যাসে বদল ঘটিয়েছে। এখন খুব কম মানুষই নিয়ম করে টেলিভিশনের সামনে বসেন। এ কথা যেমন সত্য তেমনি দর্শকদের আকৃষ্ট করতে, সময়োপযোগী মানসম্পন্ন অনুষ্ঠান প্রচারে চরম ব্যর্থতার দায়ও টিভি চ্যানেলেরও রয়েছে। বেশিরভাগ দর্শক এমটা নির্দ্বিধায় মনে করেন। তাদের মতে দেশের বেশিরভাগ টিভি চ্যানেল তাদের ব্যর্থতার কারণে দর্শক হারিয়েছে! দর্শকদের বিনোদিত করতে বর্তমান সময়ের ইউটিউব, নেটফ্লিক্স, আইফ্লিক্স, এ্যামাজন প্রাইম, হৈচৈয়ের মতো জনপ্রিয় ওটিটি প্ল্যাটফর্মের কাছে রীতিমতো পরাস্ত হয়েছে। এসব অনলাইন লাইভ স্ট্রিমিং চ্যানেলের সময় উপযোগিতার কাছে বর্তমান সময়ের টিলিভিশন সত্যিকার অর্থে টিকতে পারছে না। বিশেষ করে বর্তমান প্রজন্মের কাছে টেলিভিশন জীবনের জন্য একটি অগ্রহণযোগ্য মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে বিশেষ করে বিনোদনের ক্ষেত্রে! এ প্রসঙ্গে কথা হয় ঢাকার বাসিন্দা সুমি রহমানের সঙ্গে তিনি আনন্দকণ্ঠকে বলেন, যদিও আমি গৃহিণী তার পরও সংসারের সব কাজ শেষ করে অবসরে নিয়ম করে টিভি দেখা হয় না। অবসরে বিনোদনের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কিংবা ইউটিউবে সময় কেটে যায়। তবে পরিবারের সবাই মিলে খাওয়ার সময় ড্রইং রুমের টেলিভিশনটা চালানো হয়। ছেলেমেয়েদের কখনও দেখি না টেলিভিশনের সামনে বসতে। সুযোগ পেলে তারাও স্মার্টফোন নিয়ে বসে। তাবে আমার শাশুড়ি প্রতি সন্ধ্যায় ভারতীয় চ্যানেল দেখে। মূলত আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বর্তমান জেনারেশন কিংবা আমাদের মধ্যে থেকে টেলিভিশন দেখার অভ্যাস ফুরিয়ে গেলেও আমাদের বাবা-মায়েদের থেকে এখনও ফুরিয়ে যায়নি। যদিও আমি মনে করি তারা অনেকটা ঠেকায় পড়ে অভ্যাসটা চালিয়ে রেখেছে। তানা হলে বর্তমান সময়ে আমাদের দেশের টিলিভিশন চ্যানেলগুলোর সেভাবে সময়োপযোগিতা নেই। গত ঈদের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, বাড়িতে সবাই ছিল। রান্নাবান্নার পাশাপাশি ঈদের অনুষ্ঠান দেখতে টিভিসেট ওপেন করেছিলাম এবং অনুষ্ঠান দেখতে চেষ্টাও করেছিলাম কিন্তু একঘেয়েমি সস্তা গল্পের নাটক ছাড়া আর কিছুই খুঁজে পাইনি। এক কথায় বলতে পারেন সব মিলিয়ে টিলিভিশন এখন দর্শক থেকে ছিটকে পড়েছে! সংবাদের ক্ষেত্রেও তেমনটা সারা পাচ্ছে না। এই প্রসঙ্গে বেসরকারী টিভি চ্যানেল ‘বাংলা ভিশন’-এর অনুষ্ঠান প্রধান তারেক আখন্দ বলেন, বিষয়টা সঙ্কট নয় তবে চাপের। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনুষ্ঠান নির্মাণ এবং সম্প্রচারের। এখন প্রতিটি চ্যানেলের কিন্তু নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে কাজেই অনলাইন এবং টেলিভিশন দর্শক এক করলে বিষয়টা একেবারে হতাশার নয়। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের টেলিভিশন এবং চলচ্চিত্র বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হাবিবা রহমানের মতামত ভিন্ন তার মতে টেলিভিশনের এই যে ক্রান্তিকাল তা কিন্তু নতুন নয়। অনলাইন স্ট্রমিং চ্যানেল নতুন এসেছে। কিন্তু সঙ্কট শুরু হয়েছে আরও আগে থেকে, প্রযুক্তি এর জন্য পুরোপুরি দায়ী নয়। মোটকথা কোয়ালিটি কন্টেন্ট দর্শকদের দিতে পারলে অবশ্যই তারা দেখবেন। দেশে বেসরকারী টিভি চ্যানেল আছে প্রায় ত্রিশটা। এর মধ্যে কেবল অনুষ্ঠান দেখায় এর সংখ্যাও বেশ কয়েকটি। কিন্তু বেশিরভাগ টেলিভিশন দর্শক হারাচ্ছে মানসম্পন্ন অনুষ্ঠানের অভাবে। এমনটাই মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। আনন্দকণ্ঠ প্রতিবেদক
×