ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

৪২০ কোটি ডলার কিনল বাংলাদেশ ব্যাংক

প্রকাশিত: ১৮:৩৯, ২১ নভেম্বর ২০২০

৪২০ কোটি ডলার কিনল বাংলাদেশ ব্যাংক

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ টাকার মান বৃদ্ধি ঠেকাতে বাজার থেকে ডলার কিনেই চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবারও ২০ মিলিয়ন ডলার কেনা হয়েছে। এ নিয়ে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের সাড়ে চার মাসে অর্থাৎ ১৯ নবেম্বর পর্যন্ত ৪২০ কোটি ডলার (৪.৩০ বিলিয়ন) ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর আগে কখনই এতো কম সময়ে এতো বেশি ডলার কেনেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। আর চলতি ক্যালেন্ডার বছরের সাড়ে আট মাসে কিনেছে ৫১০ কোটি ডলার। আন্তঃব্যাংক মুদ্রা বাজারে বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের ক্রয় মূল্য ছিল ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা। প্রায় এক বছর ধরে টাকা-ডলারের বিনিময় হার প্রায় এই একই জায়গায় স্থির রয়েছে। ২০১৯ সালের ১৫ নবেম্বর টাকা-ডলারের বিনিময় হার ছিল ৮৪ টাকা ৭৫। চলতি বছরের ৩০ জুন শেষে তা কিছুটা বেড়ে ৮৪ টাকা ৯৫ পয়সায় উঠেছিল। কয়েক দিনের মাথায় তা ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় নেমে এসে এখনও সেই দরে লেনদেন হচ্ছে। এই মুহূর্তে বাজার থেকে ডলার কিনে বাংলাদেশ ব্যাংক ‘ঠিক কাজটিই’ করেছে বলে মনে করেন অর্থনীতির গবেষক জায়েদ বখত। তিনি বলেন, মহামারীর এই কঠিন সময়েও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে উল্লম্ফন এবং বিদেশি ঋণ সহায়তা ও রফতানি আয় বৃদ্ধির কারণে বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার না কিনলে বাজারে ডলারের দর কমে যাবে। এ কারণে বাজার থেকে ডলার কিনে সঠিক কাজটিই করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। উল্লেখ্য, ডলারের দাম কমে গেলে টাকা শক্তিশালী হয়ে উঠবে। এতে আমদানিকৃত পণ্যের দাম কমে আসবে। কিন্তু বিপরীতে ডলারের দাম কমে গেলে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠাতে নিরুৎসাহিত হবে। রফতানি আয়ও কমে যাবে। এসব বিবেচনায় বাংলাদেশ ব্যাংক বাজার থেকে ডলার কিনে ডলারের মুল্য পতন ঠেকাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, বাজার থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলার কেনা-বেচা নিয়মিত ব্যাপার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে এটি করা হয়। যখন বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়ে যায়, তখন কেনা হয়। আবার যখন ঘাটতি থাকে তথন বিক্রি করা হয়। এখন সরবরাহ বেশি; তাই কেনা হচ্ছে। যখন বাজারে ডলারের প্রয়োজন হবে, তখন বিক্রি করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, ২০১৯ সালের আগে তিন বছর বাজারে চাহিদার কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার বিক্রি করেছে নিয়মিত। ওই সময়ে সরবরাহের তুলনায় চাহিদা বেশি থাকায় ধারাবাহিকভাবে ডলার বিক্রি করছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তখন প্রায় সব ব্যাংকই ডলার কিনতে ধরনা দিচ্ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে। তবে চলতি বছরের শুরু থেকে পরিস্থিতি উল্টো হয়ে যায়। জানুয়ারি থেকে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ৫১০ কোটি ডলার কিনে বাজারে ৪৫ হাজার কোটি টাকার বেশি সরবরাহ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই সাড়ে আট মাসে মাত্র ৪২ কোটি ৮০ লাখ ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ১৫ নবেম্বর পর্যন্ত সাড়ে চার মাসে ১০ দশমিক ০৪ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের বেছে ৪২ শতাংশ বেশি। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) বিভিন্ন পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ ১২ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে; যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ১ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে অর্থবছরের তিন মাসের (জুলাই-সেপ্টে¤\^র) আমদানি ব্যয়ের তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে দেখা যায়, এই তিন মাসে পণ্য আমদানিতে ১২ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে বাংলাদেশ। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১১ দশমিক ৪৭ শতাংশ কম। এই তিন মাসে ১৩৮ কোটি ৫০ লাখ ডলারের বিদেশি ঋণ সহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৫৪ শতাংশ বেশি। এ সময়ে বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ, এডিবিসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থার কাছ থেকে এই ঋণ সহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ। আবার বেসরকারি খাতে নেওয়া স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানোর কারণে অনেকে এখন ঋণ পরিশোধ করছেন না। সবমিলিয়ে অধিকাংশ ব্যাংকের হাতে এখন ডলার উদ্বৃত্ত রয়েছে। ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার উদ্বৃত্ত থাকলে তা কিনে নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেননা প্রতিটি ব্যাংকের ডলার ধারণের একটি সীমা রয়েছে। কোনো ব্যাংকের আমদানির দায় পরিশোধের তুলনায় রেমিটেন্স ও রফতানি আয় বেশি হলে ওই ব্যাংকে ডলার উদ্বৃত্ত হয়। এক্ষেত্রে উদ্বৃত্ত থাকা ব্যাংক প্রথমে সংকটে থাকা ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রির চেষ্টা করে। কোনো ব্যাংকের আগ্রহ না থাকলে অর্থাৎ মুদ্রাবাজারে বিক্রি করতে না পারলে তখন বাংলাদেশ ব্যাংক তা কিনে নেয়। রেমিটেন্স বৃদ্ধি এবং ডলার কেনার কারণে গত কয়েক দিনের মধ্যে রিজার্ভ ফের ৪০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। বৃহস্পতিবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪০ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার।
×