ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আয়ান আব্রাজ

ওস্ট্রাভায় এ্যারিনা সাবালেঙ্কার উৎসব

প্রকাশিত: ২১:১৯, ২৮ অক্টোবর ২০২০

ওস্ট্রাভায় এ্যারিনা সাবালেঙ্কার উৎসব

করোনাভাইরাসের কারণে চলতি বছরে বাতিল হয়ে যায় টেনিসের অনেক টুর্নামেন্ট। বাতিল হয়ে যাওয়া সেসব টুর্নামেন্টের ঘাটতি মেটাতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয় আয়োজক কর্তৃপক্ষ। ওস্ট্রাভা ওপেন ঠিক সে রকমই এক আয়োজন। প্রিমিয়ার পর্যায়ের এই টুর্নামেন্টে এবার বাড়তি আকর্ষণ ছিল বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ বিশে থাকা চার খেলোয়াড়। যাদের মধ্যে দুইবারের গ্র্যান্ডস্লামজয়ী ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কা অন্যতম। করোনার সঙ্কটময় চলতি মৌসুমে টেনিস কোর্টে বেশ ভালভাবেই প্রভাব বিস্তার করেছিলেন বেলারুশ সুন্দরী। সেপ্টেম্বরে জায়গা করে নিয়েছিলেন ইউএস ওপেনের ফাইনালেও। কিন্তু শিরোপার লড়াইয়ে হেরে যান তিনি। জাপানের নাওমি ওসাকার কাছে। রবিবার ওস্ট্রাভা ওপেনেও ফাইনাল খেলেন ৩১ বছর বয়সী এই তারকা। কিন্তু দুর্ভাগ্য তার। এবারও পারলেন না ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কা। তাকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হলেন এ্যারিনা সাবালেঙ্কা। টুর্নামেন্টের তৃতীয় বাছাই হিসেবে খেলতে নেমে সাবালেঙ্কা এদিন ৬-২ এবং ৬-২ ব্যবধানে পরাজিত করেন চতুর্থ বাছাই ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কাকে। সেই সঙ্গে অল-বেলারুশিয়ান ফাইনালে প্রথমবারের মতো পরাজয়ের স্বাদ উপহার দেন বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের সাবেক নাম্বার ওয়ান তারকাকে। চলতি বছরের দ্বিতীয় শিরোপা জয়ের স্বাদ পেলেন তিনি। আর ক্যারিয়ারের সপ্তম ডব্লিউটিএ টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করলেন এ্যারিনা সাবালেঙ্কা। গত মৌসুমেই বিশ্ব টেনিসের পাদপ্রদীপের আলোয় উঠে এসেছিলেন এ্যারিনা সাবালেঙ্কা। মেজর কোন শিরোপা জিততে না পারলেও তার পারফর্মেন্স মুগ্ধ করেছে টেনিসবোদ্ধাদের। কিন্তু বছরের শেষটা ছিল তার জন্য চরম দুঃখের। কেননা গত নবেম্বর মাসেই যে তার বাবাকে চিরতরে হারিয়ে ফেলেন বেলারুশের এই প্রতিভাবান খেলোয়াড়। অথচ তার বাবাই ছিল সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। সব দুঃখ ভুলেই চলতি মৌসুমে নতুন করে মিশন শুরু করেন তিনি। সাফল্যের দেখা পান কাতার ওপেনে। সাবালেঙ্কা নেমেছিলেন নবম বাছাই হিসেবে। শীর্ষ সাত তারকা খেলোয়াড়কে হটিয়ে ফাইনালে জায়গা করে নেন দোহায়। ফাইনালে মুখোমুখি হন পেত্রা কেভিতোভার। কিন্তু সেই ম্যাচে কেভিতোভাকে কোন রকমের সুযোগই দেননি সাবালেঙ্কা। ১ ঘণ্টা ১৪ মিনিট লড়াই করে প্রতিপক্ষকে হারিয়ে নতুন মৌসুমের প্রথম শিরোপা জয়ের স্বাদ পান তিনি। এর আগে উহান ওপেনেও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিলেন তিনি। কাতার ওপেনে এবারই প্রথম অংশ নিয়েছেন এ্যারিনা সাবালেঙ্কা। নিজের প্রথম আসরেই বাজিমাত করেন তিনি। নিজের অভিমত প্রকাশ করতে গিয়ে বেলারুশ তারকা বলেন, ‘দোহায় প্রথমবার খেলেই চ্যাম্পিয়ন হব তা আসলে প্রত্যাশাই করতে পারিনি। সত্যিই আমি খুব খুশি। আমার জন্য এটা স্পেশাল।’ কাতার ওপেনের পর দীর্ঘদিন স্থগিত ছিল সব ধরনের টেনিস টুর্নামেন্ট। গোটা দুনিয়া লকডাউনের আশ্রয় নেয়। তবে করোনাভাইরাসের পর ওস্ট্রাভা ওপেনে জিতলেন বছরের দ্বিতীয় ট্রফি। স্বাভাবিকভাবেই দারুণ রোমাঞ্চিত ২২ বছরের এই তরুণী। ম্যাচ শেষে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে সাবালেঙ্কা বলেন, ‘আমি সত্যিই রোমাঞ্চিত। কেননা, তার বিপক্ষে ম্যাচের প্রথম থেকেই একদম উচ্চ পর্যায়ের পারফর্ম করছিলাম। তার সঙ্গে দারুণ লড়াই করেছি। ফাইনাল ম্যাচটা জিতে আমি সত্যিই খুব আনন্দিত। আমার জন্য এই জয়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ।’ ওস্ট্রাভা ওপেনের শুরু থেকেই সাবালেঙ্কার পারফর্মেন্স ছিল প্রশংসনীয়। টানা চার ম্যাচ জিতেই চলতি মৌসুমের দ্বিতীয় শিরোপার দেখা পেলেন তিনি। নিজের প্রথম ম্যাচে আমেরিকান টেনিসের প্রতিভাবান খেলোয়াড় কোকো গফকে হারিয়ে মিশন শুরু করেছিলেন বেলারুশ তারকা। পরবর্তীতে স্প্যানিশ টেনিস তারকা সারা সোরিবেস টোর্মোর মুখোমুখি হন। সেই ম্যাচেও তিন সেটের কঠিন লড়াইয়ের পর জয় তুলে নেন সাবালেঙ্কা। সেমিফাইনালের ম্যাচে হারান জেনিফার ব্র্যাডিকে। অন্যদিকে ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কাও ওস্ট্রাভা ওপেনে দুর্দান্ত খেলেছেন এবার। টানা তিন ম্যাচ জিতেই চেক প্রজাতন্ত্রভিত্তিক এই টুর্নামেন্টের ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছিলেন বেলারুশ সুন্দরী। তবে শেষ ষোলোর ম্যাচে অবিশ্বাস্য একটা শট খেলেছিলেন তিনি। যা এই টুর্নামেন্টে ব্যাপকভাবে আলোচনায় উঠে এসেছে। শুধু তাই নয়, এই শট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে ব্যাপকভাবে। ক্রেসিকোভার বিপক্ষে ম্যাচের তৃতীয় সেটের ঘটনা। সেটে ৫-১ ব্যবধানে এগিয়ে কেভিতোভা। আর ১৫-০ গেমে লিড। ঠিক তখনই ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কা দারুণ এক ব্যাকহ্যান্ড স্ট্রোক করেন। বলে এমনভাবে আঘাত করেন বেলারুশ সুন্দরী যা ঠিক মধ্যভাগে জালের উপরে গিয়ে পড়ে! অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে বেশ কয়েক সেকেন্ড নেটের ওপর দিয়েই বল গড়াগড়ি করতে থাকে। অবাক বিস্ময়ে বলের দিকে দৃষ্টি সবার! কী অপেক্ষা করছে তাহলে? বলটাই বা কোন দিকে গিয়ে পড়বে? তবে শেষ পর্যন্ত সকল অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ক্রেসিকোভার কোর্টেই গিয়ে পড়ে বল। যার ফলে অবিশ্বাস্যভাবেই পয়েন্ট পান আজারেঙ্কা। এরপর পারফর্মেন্সের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে জায়গা করে নেন ফাইনালেও। কিন্তু এখানে এসেই জয়রথ থেমে যায় তার। স্বদেশী তরুণ প্রতিভাবান খেলোয়াড় এ্যারিনা সাবালেঙ্কাই বড় বাধা হয়ে দাঁড়ান আজারেঙ্কার। তবে সাবালেঙ্কা শুধু এককেই নয়, বরং ওস্ট্রাভার দ্বৈতেও বাজিমাত করেন। ওস্ট্রাভায় দ্বৈতে তিনি জুটি বেধেছিলেন এলিস মার্টেন্সের সঙ্গে। সেখানেও দুর্দান্ত খেলেছেন বেলারুশ তারকা। শিরোপা জয়ের লড়াইয়ে তারা মুখোমুখি হন গ্যাব্রিয়েলা ডাব্রোস্কি এবং লুইসা স্টেফানির বিপক্ষে। সেই ম্যাচে প্রতিপক্ষদের পাত্তাই দেননি তারা। সাবালেঙ্কা-মার্টেন্স ৬-১ এবং ৬-৩ ব্যবধানে পরাজিত করেন ডাব্রোস্কি এবং স্টেফানিকে। ডাবলসে জুটি বেধে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর সাবালেঙ্কার ভূয়সী প্রশংসা করেন মার্টেন্স। তিনি বলেন, ‘এই সপ্তাহে সত্যিই দারুণ খেলেছে সাবালেঙ্কা। একক কিংবা ডাবলস সব রকমের ম্যাচেই তার পারফর্মেন্স ছিল দুর্দান্ত।’
×