ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বি-বাড়িয়া দিয়েই যুক্ত হবে দক্ষিণ এশিয়ার উপ-আঞ্চলিক সড়ক নেটওয়ার্ক

প্রকাশিত: ২১:৫৫, ২৬ অক্টোবর ২০২০

বি-বাড়িয়া দিয়েই যুক্ত হবে দক্ষিণ এশিয়ার উপ-আঞ্চলিক সড়ক নেটওয়ার্ক

রিয়াজউদ্দিন জামি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ॥ দক্ষিণ এশিয়ার উপ-আঞ্চলিক (সাব রিজিওনাল কানেকটিভিটি) সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উত্থান ঘটতে যাচ্ছে। দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশসমূহের মধ্যে উপ-আঞ্চলিক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করার নিমিত্তে করিডরের অংশ হিসেবে আশুগঞ্জ নদীবন্দরের সঙ্গে আখাউড়া স্থলবন্দরকে সরাসরি সংযুক্ত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ও এক্সিম ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার মধ্যে স্বাক্ষরিত ২য় ভারতীয় নমনীয় ঋণচুক্তির আওতায় আশুগঞ্জ নদীবন্দর-সরাইল-ধরখার-আখাউড়া স্থলবন্দর মহাসড়ককে ৪ লেন জাতীয় মহাসড়ককে উন্নীত করন প্রকল্পটি গৃহীত হয়। এর প্রকল্প মূল্য ৩ হাজার ৫শ’ ৬৭ কোটি ৮৫.০০ লাখ টাকা (জিওবি ১৩১২০৮.০৩ লাখ টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য ২২৫৫৭৬.৯৭ লাখ টাকা)। সড়ক ও জনপথ অধিদফতর প্রকল্পটি ২০১৭ সালের ২০ জুলাই একনেক বৈঠকে অনুমোদিত হয়। প্রাথমিকভাবে ২০২১ সালের ৩০ জুন প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ শেষ হওয়ার কথা। এর মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল, ভুটান সঙ্গে বাংলাদেশের নতুন সড়ক নেটওয়ার্ক যুক্ত হবে। উপ-আঞ্চলিক করিডর বাস্তবায়ন হলে দেশের অর্থনীতির চাকা অনেকটাই সচল হবে। বাংলাদেশের জন্য উপ-আঞ্চলিক করিডর খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। খুব শীঘ্রই দেশের পূর্বাঞ্চলের জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া দিয়ে নতুন হাইওয়ে নেটওয়ার্ক যুক্ত হবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। পুরোপুরি ভূমি অধিগ্রহণ না করায় করোনাসহ কনসালটেন্টরা সময়মতো কাজ করতে না পারায় কিছুট ধীরগতিতে চলছে ফোর লেন প্রকল্পের কাজ। সূত্র মতে, ভূমি অধিগ্রহণজনিত সমস্যা কেটে গেলে ও বর্ষার মৌসুমের পর পরই বিভিন্ন স্থানে নতুন কার্যক্রম শুরু হবে। ভারতীয় কনসালটেন্ট ও ঠিকাদাররা সঠিক সময়ে আসতে পারায় প্রকল্পের কাজ ধীরগতিতে চলছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশের গুরুত্বপূর্ণ আশুগঞ্জ নদীবন্দর থেকে ৫০.৫৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কের প্রাথমিক কাজ এখন শুরু হয়েছে। এর অধীনে ১৬টি সেতু, ২টি রেলওয়ে ওভারপাস, ৩টি আন্ডারপাস, ৩৬টি কালভার্ট এবং ১০টি ফুটওভারব্রিজ নির্মাণ হবে। প্রকল্পটিতে ৩টি পূর্তকাজের প্যাকেজ রয়েছে। ১ম প্যাকেজে আশুগঞ্জ নদীবন্দর হতে সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) পর্যন্ত (ঢাকা-সিলেট জাতীয়মহাসড়কের অংশ) ১২.২১১ কিঃ মিঃ, ২য় প্যাকেজে সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়ীয়া) হতে ধরখার (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) পর্যন্ত (কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া জাতীয় মহাসড়কের অংশ) ২৭.০৫৪ কিমি এবং ৩য় প্যাকেজে ধরখার (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) হতে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত ১১.৩১৫ কিমি মহাসড়ককে ধীরগতিসম্পন্ন যানবাহন চলাচলের পৃথক দুটিসহ চারলেন জাতীয় মহাসড়কে উন্নীত করা হবে। প্রকল্পে ১০৭.৫০ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ রয়েছে। বর্তমানে প্রকল্পটিতে মহাসড়ককে ৪ লেনে উন্নীতকরণের জন্য ৩টি পূর্তকাজের প্যাকেজের মধ্যে ২টির কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। বাকি ১টি প্যাকেজের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। যার মূল্যায়ন কার্যক্রম চলমান। বর্তমানে পূর্তকাজের দুটি প্যাকেজের অধীনে সার্ভে কাজ, বিভিন্ন সেতুর স্থানে মাটি পরীক্ষা ও টেস্ট পাইলিং কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে পাইলের লোড টেস্ট কাজ চলছে। শীঘ্রই মূল পাইলিং কাজ শুরু হবে। আশুগঞ্জ নদীবন্দর থেকে সরাইল বিশ^রোড হয়ে আখাউড়ার ধরখার দিয়ে এ সড়কটি প্রতিবেশী দেশ ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সীমান্তে গিয়ে পৌঁছবে। এর মধ্যেই এ সড়কের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ ও মাটি পরীক্ষণসহ প্রাথমিক সকল কাজ শুরু হয়েছে। এদিকে ধরখার থেকে আখাউড়া স্থলবন্দরগামী হাইওয়ে সড়কে সরকারী অর্থ হাতিয়ে নিতে নতুন নতুন ভবন ও স্থাপনা তৈরির হিড়িক পড়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন প্রকল্পের শুরুতেই ডাটাবেজ, ভিডিও ফুটেজ ও মানচিত্র প্রস্তুত করে সংরক্ষণ করা হয়েছে। সরকারী অর্থ উদ্দেশ্যমূলকভাবে হাতিয়ে নেয়ার সুযোগ নেই। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এর কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই প্রকল্পের বাস্তব কাজ শুরু হবে। বাংলাদেশ-ভারত চুক্তির আওতায় ফোর লেনের কাজটি ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বাস্তবায়ন করছে। এতে ব্যায় হবে ৩ হাজার ৫শ’ কোটি টাকা। ২০ শতাংশ দেবে বাংলাদেশ সরকার। অবশিষ্ট অংশ ভারত সরকার প্রদান করবে। প্রকল্পে ২৬৫ একর জমি অধিগ্রহণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ও ভারতের লাইন অব ক্রিয়েটের আওতায় ২টি প্যাকেজে এসব কাজ বাস্তবায়ন হবে। শীঘ্রই প্রকল্পের কাজ পুরোদমে শুরুর কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অতিরিক্ত মুনাফার আশায় এবং সরকারী অর্থ হাতিয়ে নিতে এক শ্রেণীর লোক ধরখার-আখাউড়ার হাইয়ের জন্য সম্ভাব্য স্থানে বাড়িঘর নির্মাণ করছে। স্থানীয়রা জানান, সড়কটি সোজাসোজি গেলে সাধারণ মানুষের ক্ষয়ক্ষতি কম হওয়ার পাশাপাশি সরকারী অর্থের ব্যয় কমবে। এতে লাভবান হবে সরকার। আখাউড়া উপজেলা প্রশাসনের একটি সূত্র জানায়, অন্যায়ভাবে সম্ভাব্য সড়কের পাশে স্থাপনা করায় সম্প্রতি কয়েকজনকে আটক করা হয়। তারা মুচলেকা দিয়ে গেছে। সরকারী অর্থ উদ্দেশ্যমূলকভাবে হাতিয়ে নিতে স্থাপনা নির্মাণ করা হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রকল্পের ডেপুটি প্রজেক্ট ম্যানেজার শাহরুল আমিন জানান, বাড়তি অর্থ হাতিয়ে নেয়ার কোন সুযোগ নেই। জেলা প্রশাসক হায়াৎ উদ দৌলা খান বলেন, ভূমি অধিগ্রহণের জন্য প্রস্তাবকৃত স্থানের ভিডিও আগেই করা আছে। নতুন করে স্থাপনা নির্মাণের ক্ষতিপূরণ কেউ পাবেন না।
×