ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জিডিপির প্রবৃদ্ধি নিয়ে বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস সামঞ্জস্যহীন ॥ অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত: ২২:১৪, ১০ অক্টোবর ২০২০

জিডিপির প্রবৃদ্ধি নিয়ে বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস সামঞ্জস্যহীন ॥ অর্থমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হার নিয়ে বিশ্বব্যাংকের দেয়া পূর্বাভাসকে বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান উত্তরণ প্রবণতার সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। শুক্রবার অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া ইকোনমিক ফোকাস ফল-২০২০ রিপোর্টের প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ কথা বলেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, অভ্যন্তরীণ বেসরকারী ও সরকারী ব্যয়, বিনিয়োগ, রফতানি ও রেমিটেন্সসহ অর্থনীতির প্রায় সব খাত বেশ সক্ষম অবস্থানে রয়েছে। বিশ্বব্যাংক একটি আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান। তারা যখন কোন দেশ সম্পর্কে বা কোন বিষয় নিয়ে তথ্য উপস্থাপন করে। অর্থমন্ত্রী চিকিৎসার জন্য বর্তমানে দুবাই রয়েছেন। সেখান থেকেই বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস সম্পর্কে তিনি প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। ওই প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আমাদের জিডিপি সম্পর্কে এবার যে নম্বারগুলো তারা বলেছে সেগুলো করোনার প্রভাবে অর্থনীতির স্বাভাবিক গতি শ্লথ হওয়ার শুরু থেকেই বলে আসছে এবং তারা এখনও সেই একই জায়গাতে আছে। আমাদের অর্থবছরের তিন মাস পার হয়ে গেছে, এখনও নয় মাস সময় রয়েছে। করোনার প্রভাবে যে শ্লথ গতি অর্থনীতিতে তৈরি হয়েছিল সেটি অনেকটা স্বাভাবিক। পরিচালন ব্যবস্থার ওপর উল্লেখযোগ্য চাপ সত্ত্বেও সরকারের উপযুক্ত অর্থনৈতিক প্রণোদনা ও সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা অর্থনীতিকে সুসংহত করেছে। এছাড়া, অভ্যন্তরীণ বেসরকারী ও সরকারী ব্যয়, বিনিয়োগ, রফতানি এবং রেমিটেন্সসহ অর্থনীতির প্রায় সব খাত বেশ সক্ষম অবস্থানে রয়েছে বলে উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া ইকোনমিক ফোকাস রিপোর্টে বাংলাদেশের জিডিপিতে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৬ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। আর ২০২১-২২ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ। করোনা মহামারীর প্রভাবে দক্ষিণ এশিয়া নজিরবিহীন অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলেও উল্লেখ করা হয় ওই প্রতিবেদনে। এ ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা সবাই জানি তাদের প্রক্ষেপণের বৈশিষ্ট্যই খুবই রক্ষণশীল পদ্ধতি। বিশ্বব্যাংকের এ যাবতকালের সব প্রক্ষেপণের একটি তালিকা করলে দেখা যাবে তারা যে প্রক্ষেপণগুলো করে তা বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে! আমরা বিশ্বাস করি তারা এবারও সেই গতানুতিক ধারার একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, আমরা আমাদের সক্ষমতার নিরিখে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করি এবং তা অর্জন করি। অর্জন করে বার বার প্রমাণ করতে হয় আমরা সঠিক। এবারও আমরা কাক্সিক্ষত প্রবৃদ্ধি অর্জন করে প্রমাণ করব যে আমাদের লক্ষ্যমাত্রাই সঠিক। কর্মস্থলের অনিশ্চয়তা নয় বরং প্রণোদনার কারণেই রেমিটেন্স প্রবাহ বেড়েছে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি রেমিটেন্স বাড়লেও এটি সাময়িক মনে করছে অনেকে। বৈধপথে রেমিটেন্স পাঠাতে উৎসাহিত করার জন্য আমরা যখন প্রণোদনার ব্যবস্থা করেছি তখন অনেকেই বলেছিল রেমিটেন্সের কোন প্রভাব পড়বে না। কিন্তু বাস্তবতা হলো প্রণোদনার ফলে রেমিটেন্স প্রবাহ বেড়েছে। বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ বলছেন, প্রবাসী আয় বেড়েছে, কারণ করোনার কারণে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমার ভাই-বোনেরা ফিরে আসছেন, তাদের সবকিছু বিক্রি করে চলে এসেছেন কাজেই এই প্রবৃদ্ধি। কিন্তু তারা হয়ত ভুলে গেছেন, ২ শতাংশ নগদ প্রণোদনা এবং রেমিটেন্স পাঠানোর নিয়ম-কানুন সহজ করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী সিদ্ধান্তের কথা। ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে অর্থ পাঠানোর পরিমাণ বেড়েছে করোনা আসার আগে থেকেই। ২০১৯-২০ অর্থবছরে শুরু থেকেই যখন করোনা ছিল না, রেমিটেন্স প্রবাহে ছিল উর্ধগতি তাই আগামীতে এ ধারা অব্যাহত নাও থাকতে পারে এমন ভাবনা যৌক্তিক নয়।
×