ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যত্রতত্র পড়ে থাকবে না চিকিৎসা বর্জ্য, নীতিমালা হচ্ছে

প্রকাশিত: ২১:৩৯, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০

যত্রতত্র পড়ে থাকবে না চিকিৎসা বর্জ্য, নীতিমালা হচ্ছে

মশিউর রহমান খান ॥ যত্রতত্র পড়ে থাকবে না চিকিৎসা বর্জ্য। নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যেই সব সরকারী-বেসরকারী হাসপাতাল ক্লিনিকের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত বর্জ্যরে হবে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা। সব নিয়ম মেনেই বাধ্যতামূলকভাবে নিবন্ধন করতে হবে। চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য তৈরি করা হবে নীতিমালা। কেউ নিয়ম না মানলে তার নিবন্ধন বাতিলসহ শাস্তিও প্রদান করা হবে। এমন উদ্যোগ বাস্তবায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। সূত্র জানায়, সারাদেশে চিকিৎসা বর্জ্যরে নিরাপদ ব্যবস্থাপনা করতে চায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এরই অংশ হিসেবে কোন সংস্থাটি তার সীমানায় থাকা সব বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিককে নিবন্ধন ছাড়া ব্যবসা করতে না দেয়ার সিদ্ধান্তে গ্রহণ করেছে। জানা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদফতরের অধীনে সরকারী-বেসরকারী হাসপাতালের মূল অনুমোদন দিয়ে থাকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তবে আইন অনুযায়ী, স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন, ২০০৯-এর ১১২ ধারায় বলা হয়েছে, এই আইন কার্যকর হওয়ার তারিখে বা তৎপর কর্পোরেশন এলাকায় কর্পোরেশনের নিবন্ধন ব্যতীত কোন প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, প্যারামেডিক্যাল ইনস্টিটিউট ইত্যাদি পরিচালনা করা যাবে না। তাই এ নিয়ম অনুযায়ী এই আইনটি বাস্তবায়ন করতে চায় সংস্থাটি। একইসঙ্গে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০০৮ সালে চিকিৎসা বর্জ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য একটি বিধিমালা রয়েছে। তবে সে বিধিমালার বাস্তব কোন পরিপালন হতে দেখা যায় না। প্রকৃতপক্ষে আইন, বিধিমালা, প্রবিধান থাকলেও কোন সরকারের আমলেই নগর মহানগরের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা এই দুই আইনের প্রয়োগ ঘটাতে চেষ্টা পর্যন্ত করেননি। অপরদিকে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে কোন প্রকার আইনের প্রয়োগ করা ও নিবন্ধন করার উদ্যোগ নেয়া হয়নি। তাই এই প্রথমবারের মতো ডিএসসিসি চিকিৎসা বর্জ্য সঠিক পদ্ধতিতে সংগ্রহ ও সঠিক স্থানে সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে। এছাড়া মেডিক্যাল প্র্যাকটিস এ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিক, ল্যাবরেটরি অর্ডিন্যান্স ১৯৮২-এ আছে আবেদনের সঙ্গে আবশ্যিক ডকুমেন্টের তালিকায় হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়গনস্টিক সেন্টারের বিভিন্ন তথ্যের কথা বলা রয়েছে। তবে এখানে অবকাঠামো বিষয়ে কোন নির্দেশনা নেই। জনবলের বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে বলা থাকলেও এসব হাসপাতাল-ক্লিনিকের বর্জ্যগুলো কীভাবে ব্যবস্থাপনা করবে, তাদের অবকাঠানো কী থাকবে, কী নিশ্চিত করতে হবে তার কোন উল্লেখ নেই। ফলে ইচ্ছেমতোই এসব ক্লিনিক পরিচালনা করছেন প্রতিষ্ঠান মালিকরা। আইন মেনে এখন পর্যন্ত কোন বেসরকারী হাসপাতাল, ক্লিনিক ঢাকার কোন সিটি কর্পোরেশনের নিবন্ধন নেয়নি। ডিএসসিসি তাদের সীমানায় থাকা সব ক্লিনিক হাসপাতালসহ স্বাস্থ্য সেবা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ প্রত্যেকটি বিষয় উল্লেখ করে শর্ত প্রদানপূর্বক বাধ্যতামূলকভাবে নিবন্ধনের আওতায় এনে তা বাস্তবায়নে বাধ্য করবে ডিএসসিসি। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলন কক্ষে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত দেশের সব সিটি কর্পোরেশন এলাকাসহ নগরবাসীর জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় সারাদেশে চিকিৎসা বর্জ্যরে নিরাপদ ব্যবস্থাপনা এবং এ বিষয়ে সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় বিষয়ে পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে এ সম্পর্কে বাধ্যতামূলক নিবন্ধনের আওতায় আনতে মতামত প্রদান করেন ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। ডিএসসিসি সূত্র জানায়, অতি দ্রুত এ বিষয়ে একটি বিধিমালা-প্রবিধান তৈরি করবে। এতে সুনির্দিষ্টভাবে চিকিৎসা বর্জ্য কীভাবে ব্যবস্থাপনা করতে হবে, কী কী অবকাঠামো তাতে থাকতে হবে। ১০, ১০০ কিংবা ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল হলেও কি কি নিয়ম তাদের মানতে হবে -এই বিষয়গুলো তুলে ধরে আমরা তাদের নিবন্ধনের আওতায় আনা হবে। এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস বলেন, নিয়ম বা আইন থাকলেও এখন পর্যন্ত কোন বেসরকারী হাসপাতাল, ক্লিনিক আমাদের নিবন্ধন নেয়নি। আমরা তাদের চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ প্রত্যেকটি বিষয় উল্লেখ করে নিবন্ধনের আওতায় এনে তা বাস্তবায়নে বাধ্য করব। যত্রতত্র চিকিৎসা বর্জ্য ফেলে রাখা বা ইচ্ছেমতো হাসপাতাল বা ক্লিনিক চলতে পারে না। মেয়র বলেন, আমরা ইতোমধ্যে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে ঢেলে সাজিয়েছি। দিনের উন্মুক্ত স্থানে কোথাও বর্জ্য রাখার সুযোগ রাখিনি। সন্ধ্যার পর থেকে আমরা বর্জ্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম শুরু করেছি। ঢাকাবাসী এর সুফল পাচ্ছে। এই করোনা মহামারীর মধ্যে মুখোশ ও হাতমোজা চিকিৎসা সামগ্রী হলেও এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা এখন সাধারণ বর্জ্যে পরিণত হয়েছে। শেখ তাপস বলেন, সরকারী-বেসরকারী হাসপাতালের মূল অনুমোদন দিয়ে থাকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের অধীনে সেটা দেয়া হয়ে থাকে। মেডিক্যাল প্র্যাকটিস এ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিক, ল্যাবরেটরি অর্ডিন্যান্স ১৯৮২-এ আছে আবেদনের সঙ্গে আবশ্যিক ডকুমেন্টের তালিকায় হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়গনস্টিক সেন্টারের বিভিন্ন তথ্যের কথা বলা হয়েছে। আমি অত্যন্ত মর্মাহত যে সেখানে অবকাঠামো বিষয়ে কোন নির্দেশনা নেই। জনবলের বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে বলা আছে, কিন্তু সেই হাসপাতাল-ক্লিনিকের বর্জ্যগুলো কীভাবে ব্যবস্থাপনা করবে, তাদের অবকাঠানো কী থাকবে, কী নিশ্চিত করতে হবে- এ বিষয়ে এখানে কিছু বলা হয়নি। মেয়র তাপস বলেন, পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০০৮ সালে চিকিৎসা বর্জ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য একটি বিধিমালা রয়েছে। তবে আজ পর্যন্ত সে বিধিমালার বাস্তব কোন পরিপালন আমরা লক্ষ্য করিনি। আমাদের আইন, বিধিমালা, প্রবিধান কম নেই, সবই আছে। অন্যান্য উন্নত দেশে যা আছে আমাদেরও তাই আছে। কিন্তু একটি বড় ফারাক আমরা লক্ষ্য করি, তা হলো পরিপালন। তাই সুনির্দিষ্টভাবে চিকিৎসা বর্জ্য কীভাবে ব্যবস্থাপনা করতে হবে, কী কী অবকাঠামো তাতে থাকতে হবে। ১০, ১০০ কিংবা ৫০০ শয্যার হাসপাতাল হোক, কী কী তাদের মানতে হবে। এই বিষয়গুলো তুলে ধরে আমরা তাদের নিবন্ধনের আওতায় আনতে চাই। আমরা আইনের বাস্তবায়ন করতে চাই।
×