ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থনীতি দ্রুত পুনরুদ্ধারই চ্যালেঞ্জ ॥ করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় লকডাউন নয়

প্রকাশিত: ২২:২৮, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০

অর্থনীতি দ্রুত পুনরুদ্ধারই চ্যালেঞ্জ ॥ করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় লকডাউন নয়

রহিম শেখ ॥ আসন্ন শীতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ‘দ্বিতীয় ধাক্কা’ আসার আশঙ্কা রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে দেশের অর্থনীতি সচল রেখেই করোনার সম্ভাব্য এ ধাক্কা মোকাবেলার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে লকডাউনের কথা ভাবছে না সরকার। এজন্য আসন্ন শীত সামনে রেখে করোনা মোকাবেলায় ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, মার্কেট-শপিংমল ও কলকারখানা চালু রাখতে চান দেশের ব্যবসায়ীরা। দেশে করোনার প্রথমার্ধের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে তৈরি পোশাক কারখানার কাজ স্বাভাবিক রাখতে চান এ খাতের উদ্যোক্তারা। অর্থনীতির চাকা সচল রেখে করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা মোকাবেলায় কর্মপরিকল্পনা তৈরি করছে সরকার। অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনাভাইরাস অতিমারীর মধ্যে কলকারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার মতো প্রধানমন্ত্রীর সাহসী সিদ্ধান্ত ও প্রণোদনা প্যাকেজের কারণে অর্থনীতির কালো মেঘ কেটে যাচ্ছে। করোনার দ্বিতীয় ওয়েভ মোকাবেলায় পূর্বের অভিজ্ঞতাও কাজে লাগবে। করোনায় যদি বড় আকারে প্রাণহানি না ঘটে, তাহলে বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত পুনরুদ্ধার হবে। করোনাভাইরাস মহামারীর প্রথম ঢেউ সামলে কিছুদিন আগেই লকডাউন তুলে দিয়েছিল ইউরোপ। মাত্রই গতি ফিরতে শুরু করেছে সেখানকার অর্থনৈতিক কার্যক্রমে। কিন্তু এর মধ্যেই অঞ্চলটিতে আবারও বাড়তে শুরু করেছে সংক্রমণ। ফলে মহামারীর দ্বিতীয় ধাক্কা মোকাবেলায় দ্রুতই বিধিনিষেধ ফিরিয়ে আনার পথে হাঁটছে ইউরোপীয় দেশগুলো। করোনাভাইরাস সংক্রমণে দ্বিতীয় ধাক্কার ঝুঁকিতে রয়েছে এশিয়ার দেশগুলো। এ অঞ্চলের দেশগুলোতে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতেই বিদেশে থাকা নাগরিক ও পর্যটকদের ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে। এ পদক্ষেপই দেশগুলোর জন্য কাল হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া দীর্ঘদিন থাকা লকডাউন লঙ্ঘন করে অনেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন, যা ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে সংক্রমণের মাত্রাও অনেক বেশি। এছাড়া বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ উন্মুক্ত হচ্ছে। দেশে বর্তমানে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের শিথিলতা চলে এসেছে। এসব কারণে বাংলাদেশেও পুনরায় করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। দ্বিতীয় দফার সংক্রমণ প্রতিরোধের পাশাপাশি সংক্রমণ হলে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে রাখার পরামর্শও দিচ্ছেন তারা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে বর্তমানে করোনা সংক্রমণের মাত্রা কিছুটা কম হলেও এ নিয়ে স্বস্তির কিছু নেই। আবার জনসংখ্যার তুলনায় নমুনা পরীক্ষার সংখ্যাও কম। অনেকেই থেকে যাচ্ছেন পরীক্ষার বাইরে। একইসঙ্গে আসন্ন শীতে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। মূলত করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে ৩ আগস্ট থেকে হাটবাজার, দোকানপাট ও শপিংমল খোলা রাখার সময় বাড়িয়ে রাত ৮টা পর্যন্ত করেছে সরকার। হাট-বাজার, দোকানপাট ও শপিংমলে পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে প্রতিপালনের পাশাপাশি শপিংমলের প্রবেশমুখে তাপমাত্রা পরিমাপক যন্ত্র এবং হাত ধোয়ার ব্যবস্থাসহ স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখা ছাড়াও শপিংমলে আসা যানবাহনগুলোকে অবশ্যই জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সেসব নিয়ম পুরোপুরি মানা হচ্ছে না। করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে বাসার বাইরে সব জায়গায় সবার মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে ২১ জুলাই একটি পরিপত্র জারি করা হলেও নানা অজুহাতে মানুষ তা এড়িয়ে যাচ্ছে। তাই বাজার ও শপিংমলের সব ক্রেতা-বিক্রেতার মুখে মাস্ক না থাকলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে সরকার। যেকোন দিন যেকোন মার্কেটে পর্যবেক্ষণ চালিয়ে এই ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে সম্প্রতি সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান। একই সঙ্গে অর্থনীতির চাকা সচল রেখে করোনার দ্বিতীয় ওয়েভ আসার আশঙ্কা সামনে রেখে কর্মপরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি। জানা গেছে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সরকার গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও কলকারখানা বন্ধ এবং মানুষ ঘরবন্দী থাকায় অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক দুর্বল হয়ে পড়ে। কিন্তু ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটি শেষ হওয়ার পর অর্থনীতির চাকা আবার সচল হতে শুরু করে। ইতোমধ্যে রফতানি আয় ও রেমিটেন্সে রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা যেমন শিল্পকারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু করার আস্থা ফিরে পেয়েছেন তেমনি সাধারণ মানুষ জীবিকার প্রয়োজনে যুক্ত হচ্ছেন কাজে। একইসঙ্গে পুরো করোনাকালীন সচল থাকা কৃষি খাতে আরও প্রাণচাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, করোনাভাইরাস অতিমারীর মধ্যে কলকারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার মতো প্রধানমন্ত্রীর সাহসী সিদ্ধান্তের কারণে অর্থনীতির কালো মেঘ কেটে যাচ্ছে। পাশাপাশি ১ লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ বাজারে নগদ অর্থের সরবরাহ সচল রেখে অর্থনীতি ইতিবাচক ধারায় ফিরে আসতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সম্প্রতি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর গতি বেশ উৎসাহব্যাঞ্জক। তারা আভাস দিয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে আগামী জুনে শেষ হতে যাওয়া অর্থবছরে এ দেশের অর্থনীতিতে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে। যা গত এপ্রিল-মে মাসের তুলনায় অনেক ভাল। কমনওয়েলথ সচিবালয়ের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিভাগের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক মনে করেন, কলকারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার মতো সাহসী সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জন্য ভাল ছিল। তিনি বলেন, করোনায় যদি বড় আকারে প্রাণহানি না ঘটে, তাহলে বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত পুনরুদ্ধার হবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘সামগ্রিক পরিস্থিতিতে ইতোমধ্যে স্পষ্ট হয়েছে যে, ব্যবসায় আস্থা বাড়তে শুরু করেছে। এর বড় কারণ হলো সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঘোষিত ১ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ, যা নানাভাবে বাজারে নগদ অর্থ সরবরাহ করছে।’ আতিউর রহমান আরও বলেন, রফতানিতে চাহিদা বাড়ছে, বিদেশীরা করোনায় সৃষ্ট নিউ নরমাল লাইফ মেনে নিয়ে ব্যবসাকেন্দ্র চালু করেছে। সামনে বড় দিন। তাই তৈরি পোশাক রফতানি বেড়েছে। তবে বিশ^জুড়েই আশঙ্কা দেখা দিয়েছে করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা। এজন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্থনীতি সচল রাখতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি শামস মাহমুদ মনে করেন, গত এক মাসে অর্থনীতিতে খানিকটা প্রাণচাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। পর্যটন ও হোটেল ছাড়া অন্যান্য সেবা খাতে মানুষ কাজে ফিরতে শুরু করেছে। তিনি বলেন, করোনা অতিমারীতে যারা কর্মহীন হয়েছে, তাদের কর্মসংস্থানে ফিরিয়ে আনা একটা চ্যালেঞ্জ। এর জন্য এসএমই খাতকে অগ্রাধিকারভিত্তিতে উজ্জীবিত করার প্রতি সরকারের মনোযোগ বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘পোশাক খাত ভালোভাবে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। আমাদের কৃষি খাতও ভাল করছে। রেমিটেন্স আসছে। এই সবই অর্থনীতির জন্য ভাল লক্ষণ।’ তিনি বলেন, ‘অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের গতি স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান। তবে অনেক চ্যালেঞ্জও রয়ে গেছে। আগামী কয়েক মাসে পশ্চিমা দেশগুলোতে মহামারী কী অবস্থা ধারণ করে তার ওপর অনেকখানি নির্ভর করবে এই পুনরুদ্ধারের গতি।’ আর এটাই এখন অনিবার্য প্রশ্ন। আগামী দিনগুলোতে মহামারী কোন দিকে মোড় নেবে? কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, সংক্রমণের প্রকৃত সংখ্যা সরকারী হিসাবের চেয়ে বেশি। পোশাক শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যথাযথ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করায় তাদের কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের খুব ছোট একটি অংশই করোনায় আক্রান্ত হয়েছে গত ২৬ মার্চ বাংলাদেশ সরকার দেশজুড়ে লকডাউন জারি করার পর পোশাক খাত প্রায় তিন মাস বন্ধ থাকে। বন্ধ থাকা কারখানাগুলো আবার ধীরে ধীরে চালু হয়েছে। রফতানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, করোনা অতিমারীর কারণে মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে কমহারে পণ্য জাহাজীকরণ ও পশ্চিমা দেশগুলোতে ঘরবন্দী অবস্থা বিরাজ করায় রফতানি যথেষ্ট কম ছিল। এখন ওইসব দেশে বিপণিবিতান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলেছে। সামনে বড়দিন। তাই রফতানি ইতিবাচক ধারায় ফিরতে শুরু করেছে। এর মধ্যে করোনার দ্বিতীয় ধাক্কায় সম্ভাবনার সঙ্গে শঙ্কাও বেড়েছে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গার্মেন্টস কারখানা সচল রেখে করোনা মোকাবেলায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানান তিনি। করোনা মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা সংরক্ষণের উদ্যোগ ॥ শুধু কোভিড-১৯ মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা বাস্তবায়নে জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও মন্ত্রণালয় যেসব নির্দেশনা জারি করেছে তার পরিমাণ ১ হাজার ৯৭৬ পৃষ্ঠা। ভবিষ্যতে করোনা মহামারীর মতো দুর্যোগ মোকাবেলার কথা চিন্তায় এসব নির্দেশনা সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এসব নির্দেশনা বই আকারে ৫টি ভলিউমে সংরক্ষণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোঃ তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার তত্ত্বাবধায়নে করোনা মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে জারি করা এসব প্রজ্ঞাপন সংকলন করা হয়। করোনা মহামারী থেকে মানুষের জীবন বাঁচাতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা, জনগণকে সচেতন করা এবং ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে অর্থ ও খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি, ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি চাঙ্গা রাখতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয় সরকার। গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন নির্দেশনার পাশাপাশি কোভিড-১৯ মহামারী থেকে মানুষের জীবন বাঁচাতে এবং জীবিকা নিশ্চিত করতে ২১টি প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় এখন পর্যন্ত মোট ১ লাখ ১২ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকার (জিডিপির ৪ দশমিক ৩ শতাংশ) ২১টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। শীতে করোনা পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে ॥ গত ২০ সেপ্টেম্বর ৩৪টি বাণিজ্যিক ব্যাংকসহ বিভিন্ন সংগঠনের কাছ থেকে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ ফান্ডে অনুদান গ্রহণকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসন্ন শীতকালে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে উল্লেখ করে এই মুহূর্ত থেকেই তা মোকাবেলায় প্রস্তুতি গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, শীতকাল আসন্ন। কোন কোন ক্ষেত্রে করোনা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটতে পারে। আমাদের এই মুহূর্ত থেকেই তা মোকাবেলার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে এক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই অনুদান হস্তান্তর অনুষ্ঠানে যোগ দেন। ফের সংক্রমণ হলে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার মতো প্রস্তুতির পরামর্শ ॥ কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে আমাদের দেশেও পুনরায় করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে। আর সেজন্য দ্বিতীয় দফা সংক্রমণ প্রতিরোধের পাশাপাশি সংক্রমণ হলে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার মতো প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ বে-নজির আহমেদ বলেন, ‘পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করে আইসোলেশনে রাখা গেলেই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসবে। কিন্তু বাংলাদেশে আমরা এখনও করোনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না। যারা এটা করতে পেরেছে, তারা করোনাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছে। কিন্তু বাংলাদেশে সেটা হচ্ছে না। রোগীদের যদি শনাক্ত না করা হয়, তাদের যদি কোয়ারেন্টাইনে নেয়া না হয়, তাহলে তাদের মাধ্যমেও অন্যরা সংক্রমিত হবেন। এভাবেই রোগীর থেকে রোগী ছড়াচ্ছে। আবার যে বাসায় একজন সদস্য কোনভাবে আক্রান্ত হয়ে যায়, সে বাসায় একাধিক সদস্য সংক্রমিত হয়ে যাচ্ছে। এটা যদি হাসপাতালে ম্যানেজ হতো তাহলে সংক্রমণের হার কমে আসতো। এসব মিলিয়ে যে অবস্থায় আছি, তাতে করে সংক্রমণ কমার কথা নয় বরং আমরা একটি দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণের মধ্যে যাচ্ছি। আমাদের দেশে একটা ওয়েভের ওপর আরেকটি ওয়েভ সুপার ইমপোজড হবে মন্তব্য করে অধ্যাপক ডাঃ বে-নজির আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, তাতে করে সংক্রমণ দীর্ঘায়িত হবে। একইসঙ্গে গ্রামে সংক্রমিত হচ্ছে, কিন্তু তারা শনাক্ত হচ্ছেন না।’ বিমান চালু হচ্ছে, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যাতায়াত বাড়ছে। দেশে যারা আসছেন, তাদের প্রকৃত কোয়ারেন্টাইন বা আইসোলেশন করা সম্ভব কিনা, কিংবা এসব হলে আদৌ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব কিনা, সে প্রশ্ন করেন তিনি। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাঃ লেলিন চৌধুরী বলেন, আমাদের সামনের দিনগুলো নিয়ে সতর্ক থাকার কোন বিকল্প নেই। সবার ধারণা শীতে সংক্রমণ বাড়তে পারে। তাই সরকারের উচিত হবে সমস্যা শুরুর আগে চূড়ান্ত প্রস্তুতির। তাছাড়া প্রতিরোধে ঢিলেঢালা কোন সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না। জনস্বার্থে সব সিদ্ধান্ত কঠোরভাবে বাস্তবায়নের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। সেইসঙ্গে বাড়ি বাড়ি গিয়ে পরীক্ষা, রোগী শনাক্তসহ র‌্যাপিড টেস্ট নিশ্চিত করারও বিকল্প নেই বলে মনে করেন এই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ।
×