ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ধর্ষণ মামলায় ভিপি নূরসহ ৫ জন গ্রেফতার

প্রকাশিত: ২৩:০৯, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০

ধর্ষণ মামলায় ভিপি নূরসহ ৫ জন গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ধর্ষণে সহযোগিতা মামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহ-সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নূরসহ ৫ জনকে সোমবার রাতে গ্রেফতার করা হয়েছে। রবিবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর লালবাগ থানায় দায়ের করা মামলায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। মামলায় মোট ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ধর্ষণে সহযোগিতাকারী হিসেবে নুরুল হক নূরের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। ভিপি নুরুল হক নূরসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে করা ধর্ষণ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ৭ অক্টোবর দিন ধার্য করেছে আদালত। এদিকে সোমবার ঢাকা মহানগর হাকিম বেগম ইয়াসমিন আরা মামলার এজাহার গ্রহণ করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য করেন। লালবাগ থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক স্বপন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার বিপ্লব বিজয় বলেন, ধর্ষণের ঘটনা পরম্পরায় ভিপি নূরের নাম উঠে আসায় তাকে সহযোগী হিসেবে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ এ ঘটনার তদন্ত করছে। মামলার প্রধান আসামি করা হয়েছে- বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুনকে। ধর্ষণের স্থান হিসেবে লালবাগ থানার নবাবগঞ্জ বড় মসজিদ রোডে হাসান আল মামুনের বাসার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বাদী শিক্ষার্থী ঢাবির বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে থাকেন। নূর ও মামুন ছাড়া মামলার অন্য আসামিরা হলেন- বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক নাজমুল হাসান সোহাগ, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক (২) মোঃ সাইফুল ইসলাম, ছাত্র অধিকার পরিষদের সহ-সভাপতি মোঃ নাজমুল হুদা এবং ঢাবি শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ হিল বাকি। এ বিষয়ে লালবাগ থানার পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ছাত্রী ফাতেমা আক্তার বিথীকে প্রধান অভিযুক্ত হাসান আল মামুনের বাসা ১০৪ লালবাগের বাসায় ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করে। হাসানের অন্যতম সহযোগী হিসেবে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে নাজমুল হাসান সোহাগ, নুুরুল ইসলাম নূর, সাইফুল ইসলাম, নাজমুল হুদা ও আব্দুল্লাহিল বাকির নাম। তারা সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার ফোরামের সদস্য। মামলার অভিযোগে ওই ছাত্রী উল্লেখ করেছেন হাসান আল মামুন আমার ডিপার্টমেন্টের বড়ভাই। বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সুবাদে তার সঙ্গে আমার পরিচয় হয় ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই। নিজ বিভাগের সিনিয়র হওয়ায় ব্যক্তিগত সম্পর্কের একপর্যয়ে তার সঙ্গে আমার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরই ধারাবাহিকতায় আমার সঙ্গে তার বিভিন্ন সময়ে মেসেঞ্জার, ইমো ও হোয়াটসএ্যাপের মাধ্যমে কথোপকথন হয়। সেখানে আমাকে শারীরিক সম্পর্কের ইঙ্গিত দেয়া হয়। গত ৩ জানুয়ারি দুপুরে হাসান আল মামুন আমাকে তার রাজধানীর নবাবগঞ্জ, মসজিদ রোড, ১০৪ নম্বর বাসায় যেতে বলে। সেখানে আমাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করে সে। ঘটনার পর ৪ জানুয়ারি আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। ১২ জানুয়ারি আমাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় মামুনের বন্ধু সোহাগের মাধ্যমে। হাসপাতালে ভর্তি থাকা অবস্থায় আমি ক্যাম্পাস রিপোর্টারদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলে মামুন ও সোহাগ তা হতে দেয়নি। এর আগে মামুনকে বিয়ের জন্য চাপ দিলে সে রাজি হয়, কিন্তু আমি অসুস্থ হওয়ার পর সে নানা টালবাহানা শুরু করে। উপায়ন্তর না দেখে ২০ জুন বিষয়টি ভিপি নূরকে মৌখিকভাবে জানাই। সে বলে মামুন আমার পরিষদের, আমার সহযোদ্ধা। তার সঙ্গে বসে একটা সুব্যবস্থা করে দেব। এরপর ২৪ জুন মীমাংসার আশ্বাস দিয়ে তিনি আমার সঙ্গে নীলক্ষেতে দেখা করতে আসেন। কিন্তু মীমাংসার বিষয়টি এড়িয়ে আমাকে এ বিষয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেন। আমি যদি বাড়াবাড়ি করি তাহলে তার ভক্তদের দিয়ে ফেসবুকে আমার নামে উল্টাপাল্টা পোস্ট করাবে এবং আমাকে পতিতা বলে প্রচার করবে বলে হুমকি দেয়। তাদের ছাত্র অধিকার পরিষদের ১.১ মিলিয়ন সদস্যের গ্রুপে এ প্রচারের হুমকি দেয়া হয়। নূর আরও জানায়, তার একটি লাইভে আমার সব সম্মান চলে যাবে। ইতোমধ্যে মামলার চার নম্বর আসামি সাইফুল ইসলাম আমার নামে কুৎসা রটিয়েছে এবং ৫ ও ৬ নম্বর আসামিকে লাগিয়ে দেয় কুৎসা রটাতে। তারা মেসেঞ্জার চ্যাট গ্রুপে আমার চরিত্র নিয়ে কথা বলে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করাসহ সম্মিলিতভাবে চক্রান্ত করে। অভিযোগে ওই ছাত্রী আরও বলেন, ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা পর্যায়ের কয়েকজন বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করতে চাইলেও আসামিরা তাদের ষড়যন্ত্রকারী বলে অ্যাখ্যা দেয়। এরপর আমি শারীরিক-মানসিকভাবে অসুস্থ থাকায় এবং আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে মামলা করায়; মামলা করতে বিলম্ব হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভিপি নুরুল হক নূর দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, আমার নামে মামলা হয়েছে ধর্ষণের সহযোগী হিসেবে। আসলে দেশে মধ্যবর্তী নির্র্বাচনের জন্য যে দাবি উঠেছে- আমি তার সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করায় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আমাকে শেষ পর্যন্ত ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্ত করেছে। আমি তাতে ভয় পাইনা, আমি জামিনও চাব না। দেখি সরকার কি করতে পারে। আমাকে গ্রেফতার করতে চাইলে করুক। আমি তাতে ভীতসন্ত্রস্ত নই। আমি ধর্ষক কিনা সেটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন ছাত্রসমাজই ভাল জানে।
×