ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অধ্যাপক কামরুল হাসান খান

করোনা ভ্যাকসিনের সর্বশেষ

প্রকাশিত: ২১:০২, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২০

করোনা ভ্যাকসিনের সর্বশেষ

‘টক অব দ্য কান্ট্রি’, ‘টক অব দ্য টাউন’-আমরা হরহামেশাই শুনি। কিন্তু ‘টক অব দ্য ওয়ার্ল্ড’- এই প্রথমবারের মতো ব্যাপকভাবে শুনছি-আর সেটি হচ্ছে-‘কবে একটি কার্যকর ভ্যাকসিন আমাদের হাতে এসে পৌঁছবে।’ বিশ্ববাসী অনেকটা হতাশায় নিমজ্জিত। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ-মৃত্যু কোনটিই কমছে না। চীনের অভিজ্ঞতা থেকে অনেকেই আশা করেছিলেন ৪-৫ মাসের মধ্যেই হয়তো নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। কিন্তু বিশ্ববাসী করোনা সংক্রমণের ৯ মাস অতিক্রম করছে- কোথাও হ্রাস পেয়ে আবার বেড়ে যাচ্ছে, কোথাও লেখচিত্রের সর্বোচ্চ ধাপে পৌঁছেনি, কোথাও আবার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে, কোন কোন দেশ নতুন করে সংক্রমিত হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের ভয়াল থাবা বেড়েই চলেছে। একের পর এক সংক্রমিত হচ্ছে দেশ-অঞ্চল। প্রতিদিন বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। সত্যিকার অর্থে কোন কার্যকরী ওষুধ পাওয়া যায়নি- যা কিছু সব মুমূর্ষু করোনা রোগীদের জন্য। এখন বিশ্ববাসীর সামনে একটিই আশার আলো ‘একটি নিরাপদ, কার্যকর করোনা ভ্যাকসিন’এর জন্য। বিশ্বের নামী-দামী চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা হিমশিম খাচ্ছে কত দ্রুত ভ্যাকসিন তৈরি করে করোনাকে প্রতিরোধ করা যায়। চলছে কূটনীতি, চলছে বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতা, চলছে রাজনীতি, চলছে গণমাধ্যমের সংবাদ পরিবেশনের প্রতিযোগিতা। যাই চলুক, বিশ্ববাসী চায় একটি নিরাপদ, কার্যকর, দীর্ঘস্থায়ী ভ্যাকসিন। এ নিয়ে অতিসম্প্রতি বেশ কিছু নতুন তথ্য যুক্ত হয়েছে ১) করোনার টিকা সংগ্রহ-বিতরণে নেতৃত্ব দেবে ইউনিসেফ (৬ সেপ্টেম্বর, ২০) ২) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মুখপাত্র মার্গারেট হ্যারিস বলেছেন- বিশ্বজুড়ে ব্যাপক আকারে টিকাদান আগামী বছর মাঝামাঝির আগে নয় (৪ সেপ্টেম্বর, ২০) ৩) নোভাভ্যাক্সের টিকা (২ সেপ্টেম্বর, ২০) ৪) রাশিয়ার টিকা করোনা প্রতিরোধ করেছে (৫ সেপ্টেম্বর, ২০)। তাছাড়া অন্যান্য খবর তো আছেই। এর আগে ১১ জুলাই পত্রিকার পাতায় যে আশার খবরটি পেয়েছি- ‘অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন অক্টোবরে, দাম থাকবে নাগালে’। খবরটি অবশ্যই আমাদের কিছুটা আশ্বস্ত করেছে। ভ্যাকসিনের ইতিহাস : বিজ্ঞানের ইতিহাসে একটি বিস্ময়কর আবিষ্কার হচ্ছে ভ্যাকসিন যা মানুষকে দীর্ঘায়ু এবং সুস্বাস্থ্য দিয়েছে। ভ্যাকসিন মূলত ভাইরাসের প্রতিরূপ বা ভাইরাসের অংশ যা সুরক্ষার কাজে ব্যবহার করা হয়। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে জাগিয়ে এন্টিবডি উৎপন্ন করে। তবে ভ্যাকসিন তৈরিতে অন্য ওষুধের চেয়ে উন্নত নিরাপত্তা মান বজায় রাখতে হয়। কারণ, এটি লাখো মানুষের শরীরে দেয়া হয়ে থাকে। রোগ প্রতিষেধক (টিকার) ব্যবহারের চর্চা কয়েক শ’ বছর আগের। বৌদ্ধ ভিক্ষুরা সাপের কামড় থেকে রক্ষা পাবার জন্য সাপের বিষ পান করতেন। গুটিবসন্তকে প্রতিরোধ করার জন্য চামড়া কেটে কাউপক্সের ঘায়ের পুঁজ ঢুকিয়ে দিতেন। ১৭৯৬ সনে এ্যাডওয়ার্ড জেনার কাউপক্সের উপাদান ব্যবহার করে গুটিবসন্ত (স্মলপক্স) এর প্রতিষেধক আবিষ্কার করেন যা খুব দ্রুত প্রসার লাভ করে। এ জন্য জেনারকে ভ্যাকসিনেশন বা ইমিউনোলজির প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়। ভ্যাকসিন শব্দটি ভ্যাকা (ঠধপপধ) মানে গরু থেকে আসে। তার উদ্ভাবন পরবর্তী দু’শ’ বছর ধরে চিকিৎসা প্রযুক্তিগত পরিবর্তন করে যার ফলে গুটিবসন্ত নির্মূল হয়। লুইস পাস্তুরের পরবর্তীতে ১৯৮৫ সালে কুকুর কামড়ানোর প্রতিষেধক (রাবিস ভ্যাকসিন) আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে মানব দেহে রোগ প্রতিরোধের ব্যাপক প্রভাব পড়ে। তখন অণুজীব বিজ্ঞানের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে ১৯৩০ সালের মধ্যে দ্রুত ডিপথেরিয়া, টিটেনাসস, এনথ্রাক্স, কলেরা, প্লেগ, টাইফয়েড, যক্ষ্মাসহ অনেক প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়। করোনা মহামারীর আট মাস অতিক্রম করেছে বিশ্ব। গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের উহানে শনাক্ত হয়েছিল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগী। এরপর সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপী। সংক্রমণ ও মৃত্যুর ভয়ানক পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খায় অধিকাংশ দেশ। এখনও দিন দিন পরিস্থিতি অবনতির দিকেই যাচ্ছে। সংক্রমণ বৃদ্ধির সঙ্গে বেড়ে চলেছে মৃত্যু। ভ্যাকসিন ছাড়া এই ভাইরাসের নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন সংস্থার সর্বশেষ তালিকা অনুযায়ী এখন বিশ্বে ভ্যাকসিন প্রস্তুত করতে ১৭৬টি উদ্যোগ চালু আছে। এর মধ্যে ৩৪টি মানবদেহে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে আছে যার মধ্যে ৩য় ধাপে ৮টি সবচেয়ে এগিয়ে আছে। অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন : অক্সফোর্ড ও এস্ট্রাজেনেকার তৈরি ভ্যাকসিনটির তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা চলছে যাতে ৩০ হাজার স্বেচ্ছাসেবী যুক্ত করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যের পাশাপাশি ব্রাজিলে পাঁচ হাজার স্বেচ্ছাসেবী এ ভ্যাকসিনের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছেন। দুটি ধাপ সফল হওয়ার পর এই ভ্যাকসিনের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ চলছে মানবদেহে। ইতোমধ্যে বিশ্বের ১০টি সংস্থার সঙ্গে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করার চুক্তি সই হয়েছে। জুনের শুরুতে এস্ট্রাজেনেকার সিইও বলেছেন, এই টিকার করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেবে এক বছরের জন্য। তারা আরও বলেছেন, ইতোমধ্যে ২০০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন তৈরির ফরমাশ পেয়েছেন। প্রতি ডোজ ভ্যাকসিনের দাম ৩ ডলার বা এক কাপ কফির দাম হতে পারে। ভ্যাকসিনের ফলের অপেক্ষার পাশাপাশি ভ্যাকসিন উৎপাদন চলছে। তারা দাবি করছে সব কিছু ঠিকঠাকই থাকলে অক্টোবরেই ভ্যাকসিন সরবরাহ করা যাবে। গত ২০ জুলাই চিকিৎসা সাময়িকী ‘ল্যানসেট’-এ প্রথম ভ্যাকসিন হিসেবে প্রবন্ধ প্রকাশ করা হয় অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের পক্ষ থেকে। এতে মানবদেহে প্রথম/দ্বিতীয় পর্যায়ের ফলাফলসহ টিকার নিরাপত্তা ও কার্যকারিতার প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়। চীনের ক্যানসিনোর ভ্যাকসিন : চীনে মোট আটটি ভ্যাকসিন মানবদেহে পরীক্ষার অনুমতি পেয়েছে। চীন ও চীনের বাইরে ভ্যাকসিনগুলো নিয়ে পরীক্ষা চালানোর পর এ্যাড ৫- এনকোভ নামের এ ভ্যাকসিন নিরাপদ প্রমাণিত হয়েছে। এ ভ্যাকসিনটি কানাডাতেও মানব পরীক্ষার জন্য অনুমতি পেয়েছে। চীনের সেনাবাহিনী পরীক্ষামূলকভাবে এ ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমতি পেয়েছে। ব্যাপক ব্যবহারের আগে ভ্যাকসিনটির আরও কিছু অনুমোদনের প্রয়োজন রয়েছে বলে জানিয়েছে উৎপাদনকারী সংস্থা ক্যানসিনো। রাশিয়ার ভ্যাকসিন : গত ১১ আগস্ট অনুমোদনের পর দ্রুতগতিতে এ টিকা অনুমোদন দেয়া নিয়ে পশ্চিমা গণমাধ্যম এর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। খ্যাতিমান মেডিক্যাল জার্নাল ‘দ্য ল্যানসেট’ এর গত ৪ সেপ্টেম্বরের সংখ্যায় রাশিয়ার গবেষকরা টিকাটি নিয়ে তাঁদের গবেষণা সংক্রান্ত প্রথম নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন। এতে দেখা গেছে, টিকার প্রাথমিক পরীক্ষায় এটি প্রতিরোধে সক্ষমতা প্রমাণ করেছে। শরীরে তাদের টিকা দেয়ার পর সক্ষম এন্টিবডি তৈরি হয়েছে এবং টিকাটির বড় কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। সেপ্টেম্বরের ২য় সপ্তাহে ৪০ হাজার স্বেচ্ছাসেবীদের ওপর এই ভ্যাকসিনের ৩য় পর্যায়ের ট্রায়াল শুরু হবে। চূড়ান্ত ধাপে মডার্নার ভ্যাকসিন : যুক্তরাষ্ট্রের মডার্নার তৈরি ভ্যাকসিন জুলাই মাসে ৩০ হাজার স্বেচ্ছাসেবীদের প্রয়োগের মধ্য দিয়ে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শুরু করেছে। মডার্নার এমআরএনএ-১২৩৩ ভ্যাকসিন তৈরি প্রতিযোগিতায় অক্সফোর্ডের পরের অবস্থানেই আছে। ইতোমধ্যে এই সংস্থা উৎপাদনের চুক্তিও করে ফেলেছে যুক্তরাষ্ট্রেরই ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা ক্যাটালেন্টের সঙ্গে। প্রথম ব্যাচেই ক্যাটালেন্ট ১০ কোটি টিকার উৎপাদনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। সম্প্রতি মডার্নার সিইও স্টিফেনন বানসেল বলেছেন, পরীক্ষামূলক প্রয়োগের ফল আগামী নবেম্বরের মধ্যে পাওয়া যাবে বলে আশা করা যায়। ফাইজার : আমেরিকার ফাইজার ও জার্মানির বায়োএনটেকের যৌথ উদ্যোগে তৈরি বিএনটি-১৬২ ভ্যাকসিনের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের পরীক্ষামূলক ট্রায়ালে সুরক্ষা এবং কার্যকারিতায় সফল হয়েছে। সম্প্রতি ৬০ হাজার মানুষের দেহে প্রয়োগ শুরু করার মাধ্যমে চূড়ান্ত ধাপের পরীক্ষা শুরু করেছে ফাইজার-বায়োএনটেক। ফাইজার আশা করছে, ট্রায়ালে সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী শরতে জরুরী ব্যবহারের জন্য কয়েক মিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে। নোভাভ্যাক্সের ভ্যাকসিন : যুক্তরাষ্ট্রের টিকা প্রস্তুতকারী কোম্পানি নোভাভ্যাক্সের টিকা চিও কার্যকর ও নিরাপদ। চিকিৎসা বিজ্ঞানবিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের সাময়িকী ‘দ্য নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন’- এ এক নিবন্ধে টিকাটি নিরাপদ ও কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে বলে বলা হয়েছে। এছাড়াও প্রতিযোগিতায় রয়েছে চীনের সিনোফার্ম, সিঙ্গাপুরের ডিউক-এনইউএস মেডিক্যাল স্কুলের গবেষকদের ভ্যাকসিন, ফ্রান্সের সানোফির ভ্যাকসিন, লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজ, জনসন এ্যান্ড জনসনসহ বেশকিছু বিশ্বের নামী-দামী প্রতিষ্ঠান। ভারতীয় ভ্যাকসিন : ভারতের সেরাম ইনস্টিউট বিশ্বের বৃহত্তম টিকা উৎপাদক সংস্থা যা বিশ্বের বছরে ৬০ ভাগ টিকার চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম। সংস্থাটি অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের ৪০ কোটি ডোজের এবং নোভাভ্যাক্সের ১০ কোটি ডোজের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করে চলেছে। ভারতের হায়দরাবাদভিত্তিক ভারত বায়োটক ‘কোভ্যাক্সিন’ নামের একটি ভ্যাকসিন উদ্ভাবনে সফল হওয়ার দাবি করেছে। এ ভ্যাকসিন তৈরিতে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর) ও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি (এনআইভি) একত্রে কাজ করছে। সেরাম ইনস্টিটিউটকে বিল এ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন গরিব দেশগুলোকে ভ্যাকসিন সরবরাহের জন্য ১৫০ মিলিয়ন ডলার দিচ্ছে। বাংলাদেশ ও করোনা ভ্যাকসিন : ইতোমধ্যে ভারতের সেরাম ইনস্টিউটের সঙ্গে গত ২ জুলাই বাংলাদেশের ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকোর টিকা গ্রহণের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। পাশাপাশি চীনের সিনোভ্যাকের সঙ্গে বাংলাদেশের আইসিডিডিআরবি ভ্যাকসিন ট্রায়াল শুরু করতে যাচ্ছে। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেক করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের ঘোষণা দিয়েছে এবং দাবি করেছে তাদের প্রাথমিক পরীক্ষা সফল হয়েছে। এতে দেশের মানুষ আনন্দিত ও আশান্বিত হয়েছে। গ্লোবের গবেষকদের খুব আত্মবিশ্বাসী মনে হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কূটনৈতিক সফলতায় বাংলাদেশ ভ্যাকসিন পাওয়ার জন্য সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। তাঁর কল্যাণে বাংলাদেশ প্রথম সুযোগটাই পাবে। বাংলাদেশ কোভ্যাক্স ফ্যাসিলিটি থেকেও টিকা পাওয়ার কথা রয়েছে। জাতিসংঘ শিশু তহবিল ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর ৪ সেপ্টেম্বর ঘোষণা করেছে যে, কোভিড-১৯-এর টিকা সংগ্রহ ও বিতরণে নেতৃত্ব দেবে ইউনিসেফ। সংস্থাটি বলেছে, টিকা যখন পাওয়া যাবে, তখন যেন সব দেশ নিরাপদে, দ্রুত ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে টিকা পেতে পারে। এটি কোভিড-১৯ মোকাবেলায় সব সরকার, উৎপাদক ও বহুপক্ষীয় অংশীদারদের অংশীদারিত্ব। ইউনিসেফ জানিয়েছে, কোভ্যাক্স গ্লোবাল ভ্যাকসিন ফ্যাসিলিটির পক্ষে ৯২টি নিম্ন ও নিম্নমধ্যম আয়ের দেশগুলোর জন্য কোভিড-১৯ টিকা ক্রয় ও সরবরাহের নেতৃত্ব দেবে। এছাড়া ৮০টি উচ্চ আয়ের দেশগুলোর টিকা সংগ্রহের এবং তহবিল সংগ্রহের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করবে। ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত করোনাভাইরাসে বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা ২ কোটি ৭৩ লাখ ৩ হাজার ৩৭১জন আর মৃত্যুর সংখ্যা ৮ লাখ ৯৩ হাজার ১৭৩ জন। বাংলাদেশে সংক্রমণের সংখ্যা ৩ লাখ ২৭হাজার ৩৫৯ জন এবং মৃত্যুর সংখ্যা ৪ হাজার ৫১৬ জন। ভারতের সংক্রমণের সংখ্যা ৪২ লাখ ৮ হাজার ৬৪৫ জন আর মৃত্যুর সংখ্যা ৭১ হাজার ৭১১ জন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, ‘করোনার নতুন ও বিপজ্জনক ধাপে আমরা’। বিশ্ব করোনা আগ্রাসনের আট মাস অতিক্রম করেছে আর আমরা বাংলাদেশে করেছি ছয় মাস। এতদিন মানুষকে আটকে রাখা কঠিন এক কাজ- কোন দেশই পারছে না। বিশ্ব অর্থনীতি অনেকটাই বিপর্যস্ত। জীবন-জীবিকা মুখোমুখি- একটি ছাড়া আরেকটি চলে না। সব তথ্য-উপাত্ত-আলোচনায় উঠে আসে- এই বছরের শেষের দিকে বাজারে ভ্যাকসিন আসবে আশা করি। এর আগে চলে আসলে সবাই খুশি। এছাড়া করোনা এন্টিবডির ধরন- কার্যকাল নিয়েও চলছে নানা গবেষণা। এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ভ্যাকসিন ১ বছরের বেশি প্রতিরোধ ক্ষমতা দেবে না আবার কিংস কলেজ, লন্ডনের গবেষণায় এসেছে ৩ মাসে এন্টিবডি কমে যায়, ২৩ ভাগের ১ ভাগে নেমে আসে। চলছে করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে প্রথম সংবাদ পরিবেশনের প্রতিযোগিতা, চলছে বাজারে প্রথম নিয়ে আসার মানবিক-ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতা। চিকিৎসা বিজ্ঞানে খুব তাড়াহুড়োর সুযোগ নেই। আমরা চাই মানসম্পন্ন করোনা ভ্যাকসিন যা আমাদের করোনাভাইরাসের হিংস্র থাবা থেকে মুক্তি দেবে। যারাই প্রথম বাজারজাত করুক বাংলাদেশ প্রথম ধাপেই পেয়ে যাবে এ ভ্যাকসিন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা, বিভিন্ন দেশের সরকার সরব রয়েছে যেন স্বল্প আয়ের দেশের মানুষেরা সময়মতো এ ভ্যাকসিন থেকে বঞ্চিত না হয়। যাই হোক, আমাদের সুস্থ জীবন নিয়ে বাঁচতে হবে। স্বাস্থ্য বিধি মেনে জীবিকার সর্বোচ্চ ব্যবস্থা করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি আর করোনাভাইরাস সঙ্গে নিয়েই হয়তো চলতে হবে অনাদিকাল তাতে যদি পাল্টে যায় অতীত জীবনের সকল অভ্যাস-বদঅভ্যাস, যাক না- নতুন করে শুরু হোক জীবন-যাপন। অপেক্ষায় আছি-থাকব যদি করোনা ভ্যাকসিন পাশে এসে নবশক্তি জোগায়। লেখক : সাবেক উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়
×