ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কৃত্রিম জলাবদ্ধতায় ২শ’ বিঘা জমি ফসলহীন

প্রকাশিত: ২১:১৯, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২০

কৃত্রিম জলাবদ্ধতায় ২শ’ বিঘা জমি ফসলহীন

নিজস্ব সংবাদদাতা, নওগাঁ, ৫ সেপ্টেম্বর ॥ কৃষিজমিতে অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খনন ও বাড়ি নির্মাণ করায় পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ৩ বছর যাবত কৃত্রিম জলাবদ্ধতায় নওগাঁ সদর উপজেলার বর্ষাইল ইউনিয়নের মল্লিকপুর গ্রাম। চরম বিপাকে পড়েছে শতাধিক কৃষক ও গ্রামবাসী। তাদের ৩ ফসলি ও ৪ ফসলি প্রায় ২শ’ বিঘা জমিতে কোন আবাদ না হওয়ায় অর্ধাহারে-অনাহারে কাটছে গ্রামের কৃষিনির্ভর কৃষকদের। এ বিষয়ে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে গত ৩ বছর যাবত সমাধানের আবেদন করেও কোন প্রকার ফল পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, নওগাঁ সদর উপজেলার মল্লিকপুর গ্রামের এম এম জে বি পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত প্রায় ২শ’ বিঘার ফসলি জমির মাঠের তিন দিকে রয়েছে উঁচু জমি। শুধু পশ্চিম দিকে ছিল প্রায় ৫০ বছরের পুরনো পানি নিষ্কাশনের জন্য একমাত্র রাস্তা। হঠাৎ করে গত ২০১৮ সালে পানি নিষ্কাশনের ওই রাস্তা ও ধানি ফসলি জমি ক্রয় করে সরকারের বিনা অনুমতিতে মৃত গোলক সরদারের ছেলে প্রভাবশালী সিরাজুল ইসলাম স্থানীয়দের বাধা উপেক্ষা করে জোরপূর্বক পুকুর খনন ও বাড়ি নির্মাণ করেন। পানি নিষ্কাশনের বিকল্প পথ তৈরি করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও পরবর্তীতে সিরাজুল তা বাস্তবায়ন না করার কারণে মাঠে পানি জমে সৃষ্টি হয় কৃত্রিম জলাবদ্ধতার। এতে করে পুরো গ্রাম জলাবদ্ধতায় আবদ্ধ হয়ে পড়ে। পানি ঢুকে পড়ে গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে। যার কারণে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে থাকে শিশুসহ বয়স্ক মানুষ। বহুবার স্থানীয়ভাবে বিষয়টি সমাধান না হওয়ার কারণে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর স্থানীয় প্রায় ১শ’ জন কৃষক একাধিকবার লিখিত আবেদন করেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত কেউই বিষয়টি স্থায়ীভাবে সমাধান করতে পারেনি। উপার্জনের একমাত্র জমিতে কোন চাষাবাদ করতে না পারায় চরম বিপাকের মধ্যে বসবাস করছে কৃষকসহ পুরো গ্রামবাসী। স্থানীয় বর্ষাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সামসুজ্জোহা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, জলাবদ্ধতার কারণে একপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নওগাঁ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মহোদয়ের নির্দেশনা মোতাবেক উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সাময়িকভাবে একটি সমাধানের চেষ্টা করেছি। তবে এ বিষয়টির দ্রুত এবং স্থায়ী সমাধানের জন্য প্রশাসনের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মির্জা ইমাম উদ্দিন বলেন, বিষয়টি সমাধানের জন্য উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ৩/৪ ফসলি জমি বর্তমানে ১ ফসলি জমিতে পরিণত হয়েছে। যার কারণে অনেক গরিব কৃষক জমিতে ফসল ফলাতে না পারায় পথে বসেছেন। তাই দ্রুত প্রশাসনের হস্তক্ষেপে মাঠের পানি নিষ্কাশনের জন্য স্থায়ী পথ সৃষ্টি করে কৃষকসহ গ্রামবাসীকে কৃত্রিম জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষার দাবি স্থানীয়দের।
×