অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বেসরকারী গবেষণা সংস্থা সিপিডির কঠোর সমালোচনা করে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, তারা আন্দাজনির্ভর তথ্য দিতে আমাদের তথ্য-উপাত্তকে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করছে। গত দশ বছর ধরে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডি এই কাজটি করে আসছে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকার বাজেট দিলেই তাদের একটি অনুষ্ঠান করার সময় এসে যায়। সারা বছর কোন অনুষ্ঠান নেই, কয়টা অনুষ্ঠান করে? কাঁচামাল এখান থেকে নিয়ে বিদেশে সেগুলো রফতানি করে, এটাই হলো তাদের ব্যবসা। রাজস্ব আদায় সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় হবে, এজন্য কাজ করা হচ্ছে। নতুন আইন অনুযায়ী মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আদায়ের জন্য ইলেক্ট্রনিকস ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) মেশিন বসানো হবে। এই মেশিন বসানো হলে ভ্যাট আদায় বাড়বে বলেও জানান অর্থমন্ত্রী।
সোমবার চলতি অর্থবছরের রাজস্ব আদায় পরিকল্পনা ও বিবিধ সংক্রান্ত ভার্চুয়াল সভা শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। ভার্চুয়াল বৈঠকে সংযুক্ত হন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মোঃ রহমাতুল মুনিম। এছাড়া অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআরের উর্ধতন কর্মকর্তারা বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। এদিকে, জিডিপির প্রবৃদ্ধি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হিসাব যারা করেন তাদের দুটি ভিত্তির ওপর নির্ভর করতে হয়। এর একটি হচ্ছে, তথ্য অন্যটি হচ্ছে অনুমাননির্ভর। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) তথ্যের ওপর ভিত্তি করে জিডিপির প্রবৃদ্ধি হিসাব করে। সিপিডি যদি আন্দাজনির্ভর তথ্য দিয়ে জিডিপি নিয়ে কথা বলে তাহলে সেটা কতটা গ্রহণযোগ্য সেটা নিজেরাই বুঝতে পারেন।
তিনি বলেন, গত ১০ বছর ধরে দেখেছি তারা (সিপিডি) আমাদের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করছে। আমাদের তথ্যের ওপর ভর করে তারা সব সময় অনুমাননির্ভর তথ্য দিয়ে থাকে। এ হলো তাদের ব্যবসা। এর আগে রবিবার সদ্য সমাপ্ত ২০১৯-২০ অর্থবছরের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি নিয়ে বিবিএস যে তথ্য দিয়েছে তার সমালোচনা করে সিপিডির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ ধরনের পরিসংখ্যান দেয়ার কারণে বাংলাদেশের পরিসংখ্যান বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে এবং জিপিডির প্রবৃদ্ধি এখন একটা রাজনৈতিক সংখ্যায় পরিণত হয়েছে। এজন্য পরিসংখ্যানের সঠিক চিত্র তুলে ধরতে একটি স্বাধীন কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এদিকে, বিবিএস থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ অর্জিত হয়েছে বলে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। তবে এর আগে সিপিডির পক্ষ থেকে পূর্বাভাস দেয়া হয় ২০১৯-২০ অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৫ শতাংশ হতে পারে। অর্থাৎ সিপিডি যে পূর্বাভাস দেয় সরকারী হিসেবে জিডিপির প্রবৃদ্ধি তার দ্বিগুণের বেশি হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, সিডিপির ব্যবসা সহজ। তবে আমি তাদের বিরুদ্ধে কিছু বলব না। তারা আছে বলেই আমরা আরও অনুপ্রাণিত হই, আরও বেশি শক্তিশালী হওয়ার জন্য আত্মপ্রত্যয়ী হই এবং আমরা কাজ করে প্রমাণ করার চেষ্টা করি। আমরা যখন যা বলেছি তখন তাই সঠিক হয়েছে। সুতরাং এরা কি বলবে সেটা দেখে লাভ নেই। তিনি বলেন, তাদের তথ্য কোথায় আছে? কোন তথ্য তারা রাখে, তাহলে তারা এসব কিসের ভিত্তিতে বলছে? আন্দাজ, আন্দাজ করে এসব বলছে। তারা কি রাস্তাঘাট দেখে না। আমাদের পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো দেখে না, আমাদের মেগা প্রজেক্টগুলো দেখে না, সব কিছু তারা দেখতে পায়, তারা যদি আমাদের রাজস্বের দিকে তাকাতো।
মুস্তফা কামাল বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে যে পরিমাণ আমরা রাজস্ব আহরণ করেছি গত ২০১৯-২০ অর্থবছরেও তার কাছাকাছি রাজস্ব আহরণ হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকা রজস্ব আয় হয়েছিল। আর এ করোনাকালেও ২০১৯-২০ অর্থবছরে রাজস্ব আহরণ হয়েছে ২ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা। মাত্র ৫ হাজার কোটি টাকা কম। সুতরাং এ থেকেই তো বুঝা যায় জিডিপির প্রবৃদ্ধি কেমন হওয়ার কথা। তিনি বলেন, আমি যদি আগের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ৮ দশমিক ২ শতাংশ বলতাম তাহলেও তারা বলতে পারতো এটা কিভাবে হলো। আমি তো ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বলিনি। আমি ৫ দশমিক ২ ভাগ বলেছি। সুতরাং ৫ দশমিক ২ ভাগের পরে তারা প্রশ্ন করবে।
ভ্যাট আদায়ে ইএফডি মেশিন বসানো হবে ॥ নতুন আইনে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আদায়ের জন্য ইলেক্ট্রনিকস ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) মেশিন চলতি মাসে উদ্বোধন করা হবে। গত ২০১৯ সালের জুলাইয়ে বসানোর কথা থাকলেও তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি এনবিআর। তাবে দোকানে দোকানে ইএফডি বসানোর কাজ চলতি মাসের ২৫ তারিখ উদ্বোধন করা হবে বলে জানিয়েছেন এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মোঃ রহমাতুল মুনিম। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে ২৫ আগস্ট ১০০টি ইএফডি মেশিন বসানো হয়েছে। সেগুলোর অপারেশন অবজার্ভ করা হচ্ছে। আগামী ২৫ তারিখ এগুলোর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে। এর পরে পর্যায়ক্রমে আরও মেশিন বসানো হবে। মেশিনগুলো বসানো হলে ভ্যাট আদায় বাড়বে।
