ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

দীপক চৌধুরী

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে শেখ হাসিনা

প্রকাশিত: ১৯:০৫, ৭ আগস্ট ২০২০

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে শেখ হাসিনা

আগস্ট মানে বাঙালীর শোকের মাস, বেদনার মাস, ব্যথার মাস। আগস্ট মানেই বাঙালী জাতির বেদনাবিধূর শোকের মাস। এ মাসেই বাঙালীর স্বাধীনতার স্থপতির বুকের তাজা রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল স্বাধীন শ্যামল বাংলার মাটি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, ত্যাগ, দূরদর্শিতা এবং অকুতোভয় আপোসহীন নেতৃত্বে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর কবল থেকে দেশমাতৃকা মুক্ত হয়েছিল। বাঙালী জাতি পেয়েছিল হাজার বছরের আকাক্সিক্ষত প্রিয় স্বাধীনতা, স্বাধীন পতাকা, স্বাধীন মানচিত্র। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একেবারে শেষ পর্যায়ে বাংলা সাহিত্যের খ্যাতিমান লেখক অন্নদাশঙ্কর রায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটি কবিতা লিখেছিলেন। কবিতার চরণ চারটি নিম্নরূপ: যতকাল রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান। দিকে দিকে আজ অশ্রুমালা রক্তগঙ্গা বহমান তবু নাই ভয় হবে হবে জয়, জয় মুজিবুর রহমান। শোকের মাসে বঙ্গবন্ধুর জীবনী পড়ার অঙ্গীকার হোক দলীয় নেতা-কর্মীদের। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনাচার, চিন্তা, আদর্শ ও ভালবাসা জানা দরকার। অতীতের দিকে চোখ ফেরালে বঙ্গবন্ধুর কথা আর স্বপ্ন যেন আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে। ১৯৭৫-এর ২৬ মার্চ সোহরাওয়াদী উদ্যানে জনসভায় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমার কৃষক, আমার শ্রমিক দুর্নীতি করে না। সকল শিক্ষিত লোককে বলব, কৃষক শ্রমিকদের সঙ্গে ইজ্জত ও সম্মান রেখে কথা বলবেন। কারণ, দেশের মালিক ওরাই। ওদের দ্বারাই আপনার সংসার চলে। তোমরা আজ লেখাপড়া করেছ, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার অফিসার হয়েছ তাদের শ্রম আর ঘামের টাকায়।’ সকল শ্রেণীর মানুষেরই প্রিয়- জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের মধ্যে নেই। কিন্তু একটি আদর্শ, একটি প্রত্যয়, দীর্ঘ সংগ্রাম আর মানুষের ভালবাসা আছে তাঁর নির্দেশে। বজ্রকণ্ঠে তিনি ডাক দিয়েছিলেন স্বাধীনতার। রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে রক্তনদী পেরিয়ে অর্জিত হয়েছিল মহার্ঘ স্বাধীনতা। বিশাল হৃদয়ের যে মানুষকে কারাগারে বন্দী রেখেও স্পর্শ করার সাহস দেখাতে পারেনি পাকিস্তান হানাদার বাহিনী, অথচ স্বাধীন বাংলার মাটিতেই তাকে নির্মমভাবে জীবন দিতে হয়েছে। একবার শোক দিবস উপলক্ষে এক আলোচনায় বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা পরিষ্কার বলেছেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা ষড়যন্ত্রে শুধু জিয়াউর রহমানই নয়, খালেদা জিয়াও জড়িত। এটা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই।’ এটা প্রমাণ করে এমন বহু আচরণ দেখা গেছে বিএনপির রাজনীতিতে। ২০১৮-তে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের অপচেষ্টার অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের দেশের উন্নয়ন সহ্য হচ্ছে না। তাঁর ভাষায়, ‘যারা শিশুদের নিয়ে খেলতে চায়, তাদের ঘাড়ে বন্দুক রেখে উদ্দেশ্য হাসিল করতে চায়, তারা বাংলাদেশের জনগণের ভবিষ্যতকেই অন্ধকারে ঠেলে দিতে চায়। আলোর পথে যাত্রায় বাধা দিতে চায়।’ বিএনপি সরকার আমলে শিশুদের মুখে ছিল ডাণ্ডি, বিড়ি, ফেন্সিডিল, ইয়াবা, কিশোরদের হাতে নাইন এমএম পিস্তল, কাটাবন্দুক। যুবকদের ধ্বংস করার জন্য এমন কিছু বাকি ছিল না যা তাদের হাতে ধরিয়ে দেয়া হয়নি। শিক্ষাঙ্গনে আগ্নেয়াস্ত্র-বোমা ছিল নিত্যদিনের অপসংস্কৃতি। আমরা সেই দুঃসময় থেকে বের হতে পেরেছি। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সরকার কি না করেছে দেশের অগ্রগতির জন্য। বছরের প্রথম দিনে বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের হাতে বই, গরিব শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি, হাজার হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ, পদ্মা সেতু নির্মাণ, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী-রাজাকার ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার (হয়েছে ও হচ্ছে), বিদ্যুত উৎপাদনের সফলতা, সমুদ্রসীমানা বিজয়, ফ্লাইওভার নির্মাণ, জেলেদের খাদ্যসহায়তা প্রদান, বয়স্ক ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা, কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, প্রতিটি ইউনিয়নে ডিজিটাল তথ্যসেবা স্থাপন, ইকোনমিক জোন নির্মাণ, জঙ্গী ও সন্ত্রাস দমনে সফলতা, নারীর ক্ষমতায়ন, কৃষিতে সফলতা, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, অনলাইন- মোবাইল ও ইন্টারনেটে বিপ্লব, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি, ছিটমহল সমস্যার সমাধানসহ সহস্রাধিক ইস্যুতে সরকারের ইতিহাস সৃষ্টি মানুষকে আকৃষ্ট করেছে। ছিটমহল নিয়ে এরশাদ-বিএনপি-জামায়াত অর্থাৎ, আওয়ামী লীগ বিরোধী সকল শক্তি একজোট হয়েছিল। সেসব দল প্রচার করত- এটি নাকি গোলামী চুক্তি। যদিও তারা ক্ষমতায় থেকেও এর সমাধান করতে পারেনি। কিন্তু ৬৮ বছর পর এক ঐতিহাসিক বিজয় নিয়ে এলো শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। ছিটমহল বিনিময় প্রকৃতপক্ষে এক ঐতিহাসিক অর্জন। ২০১১ সালের যৌথ জনগণনা অনুযায়ী, বাংলাদেশের ভেতরে থাকা ভারতের ১১১টি ছিটমহলের মানুষের সংখ্যা ৩৭ হাজার ৩৮৩ জন এবং আয়তন ১৭ হাজার ১৬০ দশমিক ৬৩ একর। ভারতে থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলে মানুষের সংখ্যা ১৪ হাজার ৯০ জন এবং আয়তন ৭ হাজার ১১০ দশমিক শূন্য ২ একর। ২০১৬ সালের ৩১ জুলাই মধ্যরাতে তা কার্যকর হয়। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার বীজ বপন করার মাধ্যমে বাঙালী জাতিকে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখিয়ে তা বাস্তবে পরিণত করেছিলেন। আর এই স্বাধীনতার স্বপ্নপুরুষ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার মাধ্যমে বীর-বাঙালীর ইতিহাসে কলঙ্কিত এক অধ্যায় সূচিত হয়েছে এই আগস্ট মাসেই। সুস্পষ্টভাবেই শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘জিয়াউর রহমানের স্ত্রী (খালেদা জিয়া) জাতির পিতার আত্মস্বীকৃত খুনীদের ভোট চুরির মাধ্যমে জাতীয় সংসদে জায়গা করে দেন। এর অর্থ কী দাঁড়ায়? জাতির পিতা হত্যা ষড়যন্ত্রে (১৫ আগস্ট) শুধু জিয়াউর রহমানই নয়, খালেদা জিয়াও জড়িত। এটা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই।’ আমরা ইতিহাসে দেখেছি, খুনীরা সব সময় খুনীই হয়। এরাই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়েছে। বার বার বঙ্গবন্ধুকন্যাকে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে ঘাতকরা। এটা আজ প্রমাণিত যে, আওয়ামী বিরোধীদের হাতে দেশের ক্ষমতা গেলে দেশের কেমন উন্নতি হবে? দেশের মানুষ কি ধরনের ন্যায়বিচার পাবে- এটা অনেকটাই পরিষ্কার। বর্তমানের কঠিন সময়েও গরিব, এতিম ও অসহায়দের মুখে খাবার তুলে দেয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। ২ আগস্ট বাংলাদেশ কৃষক লীগের অনুষ্ঠানে এক পর্যায়ে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ঘটনা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘স্বাধীনতার পরে জাতির পিতার গতিশীল নেতৃত্বে দেশ যখন আর্থসামাজিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছিল ঠিক সে সময়ই তাঁকে হত্যা করা হয়।’ তিনি দলের প্রত্যেক নেতা-কর্মীকে বঙ্গবন্ধুর জীবনী পড়ার এবং তাঁর আদর্শ বাস্তবায়নে ব্রতী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘এ জন্য জাতির পিতা সম্পর্কে সবাইকে জানতে হবে। বঙ্গবন্ধুর জীবনী পড়লে তাঁর আদর্শ বাস্তবায়নে কাজ করতে পারবেন।’ জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের বিচার এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রসঙ্গে যদি আমরা তাকাই, তাহলে দেখি খুনীরা নানারকম চক্রান্ত করেছিল। দেশে-বিদেশে বসে তারা চক্রান্ত করেছে। বংশপরম্পরায় তারা এই চক্রান্ত করে যাচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হলে এবং রায় কার্যকর হতে শুরু হলে এদের রক্ষা করতে বিভিন্ন দেশের ক্ষমতাবানরা শেখ হাসিনার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিল। বিভিন্ন দেশের নেতা মন্ত্রী বাংলাদেশেও এসেছে। আমরা যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে ফাঁসি দিচ্ছিলাম, তখন পাকিস্তানের সরকার নির্লজ্জের মতো এর বিরোধিতা করেছে। মাঠে, ঘাটে এমনকি সংসদে শোক প্রস্তাব এনেছে, সমালোচনা করেছে। এটা আমাদের স্বাধীনতা, বিচার ব্যবস্থা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি নগ্ন হস্তক্ষেপ ছিল। সেগুলো এদেশের মানুষ ভুলে যায়নি। জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রক্ষমতায় আসা এবং বিএনপির প্রতিষ্ঠার একটা বিশেষ উদ্দেশ্য ছিল। বাংলাদেশকে পুনরায় পাকিস্তান বানানো। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে স্বাধীনতার ১০ বছরের মধ্যে বাঙালী জাতি ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত জাতি হিসেবে গড়ে উঠত। উন্নত জাতি হিসেবে বিশ্বে মর্যাদা পেত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গঠন করতে দিনরাত নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছিলেন, তখনই ঘটানো হয় এ নৃশংস ঘটনা। পরিসমাপ্তি ঘটে একটি ইতিহাসের। বঙ্গবন্ধুর নাম বাংলার আকাশ-বাতাস ও মানুষের মন থেকে মুছে ফেলতে চেয়েছে ষড়যন্ত্রকারী ঘাতকরা, যা কোনদিন হয়নি, হবেও না। পৃথিবীতে বাঙালী জাতি যতদিন থাকবে, ততদিনই থাকবে বঙ্গবন্ধুর নাম, তাঁর কর্ম। লেখক : সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক
×