ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ২৩:০০, ২৪ জুলাই ২০২০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ ভাল বৃষ্টি হলো গত কয়েকদিন। অবশ্য এই ‘ভাল’ কথার কথা। প্রকৃতপক্ষে বৃষ্টি এখন আর ‘ভাল’র পর্যায়ে নেই। মন্দের চূড়ান্ত করছে। ক’দিন আগেও বৃষ্টি হলে ঘরের জানালা বা বারান্দা থেকে হাত বাড়িয়ে দিত রাজধানী ঢাকার ছেলেমেয়েরা। শ্রাবণধারা স্পর্শ করে রোমাঞ্চিত হতো। সেই আগ্রহ-আবেগ সবই এখন তলানীতে। কারণ, বৃষ্টি আর গল্প-কবিতার বৃষ্টি হয়ে নেই। নাগরিক দুর্ভোগের বড় কারণ হয়েছে। টানা বর্ষণে শহর ঢাকা, যাকে বলে, কুপোকাত। গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু রাস্তা ডুবে যায়। অলিতে-গলিতে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। লেকগুলো থেকে জল উপচে পড়ে। ধানম-ি লেকের কথাই যদি বলি, কেউ এখন লেকটি দেখলে চিনতে পারবেন না। লেকসংলগ্ন ওয়াকওয়ে পানিতে সম্পূর্ণ ডুবে গেছে। কাছাকাছি থাকা গাছগুলোর উপরের অংশ দৃশ্যমান হচ্ছে শুধু। খোলা আকাশ আর প্রকৃতির মাঝে অবস্থিত রবীন্দ্রসরোবর মঞ্চ চোখে পড়ে না। লেকের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে মহাদুর্ভোগে পড়েছে নগরবাসী। গত কয়েকদিন বাসা থেকে কর্মস্থলে বা কর্মস্থল থেকে বাসায় ফেরা কঠিন হয়ে যায়। জলে নেমে সিএনজি বিকল হয়ে যায়। ছিটকে পড়ে রিক্সাযাত্রী। এখন সময়টা অনেক বেশি বৈরী। করোনাকাল চলছে। প্রতিদিন বাড়ছে সংক্রমণ। মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। এ অবস্থায় যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করে ঘর থেকে বের হতে হয়। আর তার পর এমন নাকানিচুবানি খাওয়া সত্যি মেনে নেয়া যায় না। অবশ্য এ জলাবদ্ধতার সমস্যা নতুন নয়। বহুকাল ধরে এভাবেই চলছে। বৃষ্টির পানি নেমে যাওয়ার পথ করে দিতে পারছে না ঢাকা ওয়াসা। এ ক্ষেত্রে প্রধান বাধা দখলে থাকা খালগুলো। কিছু বেদখল হয়ে আছে। কিছু খননের অভাবে মরা। বিপরীতে কিছুই করতে পারছে না ঢাকা ওয়াসা। তাহলে আর এ দায়িত্ব ধরে রাখার কী মানে? প্রশ্ন উঠেছে এবার। ঢাকার দুই মেয়র সরাসরি এ প্রশ্ন তুলেছেন। ফজলে নূর তাপস ঢাকা দক্ষিণের একাধিক খাল দখল ও অকার্যকর করে ফেলে রাখায় ওয়াসার তীব্র সমালোচনা করেছেন। তার সমালোচনা প্রকাশ্যে এসেছে। আতিকুল ইসলামও কয়েকদিন আগে ঢাকা উত্তরে একটি খাল স্বল্প সময়ের নোটিসে পুনরুদ্ধার করে দেখিয়েছেন। এখন তারা বৃষ্টির পানি ড্রেন থেকে খালে, খাল থেকে নদীতে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব নিতে চান। এবং বেশ আত্মবিশ্বাসী মনে হয়েছে দু’মেয়রকেই। এ সংক্রান্ত আলাপে মেয়ররা তাদের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনাও তুলে ধরেছেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীকেও বিস্তারিত জানানো হয়েছে। এখন উপরের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা। নগরবাসীর অনুূকূলে আসবে তো এ সিদ্ধান্ত? বন্যা পরিস্থিতি দীর্ঘ হওয়ার আশঙ্কাও আছে। কী হবে ঢাকাবাসীর? উদ্বেগ বাড়ছে ঢাকাবাসীর। ঈদের কথায় আসা যাক। দিন-তারিখ ঠিক হয়ে গেছে। আগামী ১ আগস্ট ঈদ-উল-আজহা। তবে আগের সেই তোড়জোড় চোখে পড়ছে না। করোনারকালে সব কিছুই থমকে আছে। নানা সঙ্কটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে নগরবাসী। বিশেষ করে অর্থনৈতিক কারণটি বড় হয়ে সামনে এসেছে। লকডাউনের ফলে সামর্থ্য কমেছে মানুষের। চড়া দামে কোরবানির পশু কেনা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে অলিতে-গলিতে পশুর দামদর নিয়ে মুখরোচক আলোচনা নেই। হাটের সংখ্যাও এবার সবচেয়ে কম। দূরের হাট থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পশু ক্রয় করতে হবে। জবাই ও মাংস কাটাকাটির সময়ও ভুল করা যাবে না। সামাজিক দূরত্ব মানতে হবে। অন্যথায় করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ভয়। কেউ তাই স্বস্তিতে নেই। এবার ঈদে গ্রামে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারেও আগ্রহ কম। বাস-ট্রেন-লঞ্চের অগ্রিম টিকেট সংগ্রহে কোন হুলস্থুল দেখা যাচ্ছে না। হয়ত ঈদ-উল-ফিতরের মতোই উদ্যাপনহীন যাবে ঈদ-উল-আজহা। শেষ করা যাক ডাঃ আজাদ প্রসঙ্গ টেনে। নাম বললেই সবাই এখন চিনে ফেলবেন তাকে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক। সদ্য সাবেক হয়েছেন তিনি। করোনা হানা দেয়ার আগে থেকে দায়িত্ব পালন করছিলেন। ক্রমে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে আসেন। নানা ইস্যুতে সমালোচনা শুরু হয় তার। চিকিৎসকদের নিম্নমানের মাস্ক সরবরাহ, রিজেন্ট হাসপাতাল ও জেকেজি হেলথ কেয়ারের জালিয়াতিসহ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে নামটি জড়িয়ে আছে বলে অভিযোগ ওঠে। তদুপরি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ অধিদফতরের মহাপরিচালক হয়ে মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধেই কামান দাগানোর চেষ্টা করেন তিনি। সঙ্গত কারণেই ইস্যুটি মানুষের মুখে মুখে ফিরতে থাকে। পদত্যাগের মধ্য দিয়ে আলোচনাটি শেষ হলো বলা যায়। কিন্তু চিকিৎসা ব্যবস্থায় যে বিশৃঙ্খলা গত কয়েকমাসে দৃশ্যমান হয়েছে, তা কি দূর হবে? হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরে কত নন-কোভিড রোগীর নির্মম-নিষ্ঠুর মৃত্যু হয়েছে। হচ্ছে। চিকিৎসকদের অমানবিক ফাঁকিবাজ অংশটি শুরু থেকেই হাত গুটিয়ে বসেছিল। এখনও অবস্থার বিশেষ উন্নতি হয়নি। কবে হবে? হবে তো?
×