ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিটিআরসি কয়েক দফা চিঠি দিলেও বন্ধ হয়নি

মোবাইল অপারেটররা অফারের নামে বিপুল টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে

প্রকাশিত: ২৩:১৪, ১৯ জুলাই ২০২০

মোবাইল অপারেটররা অফারের নামে বিপুল টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে

ফিরোজ মান্না ॥ করোনা মহামারীতেও অফারের নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে বিপুল টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে মোবাইল অপারেটররা। এ পরিস্থিতিতে বিভিন্ন অপারেটর ইন্টারনেট বোনাস হিসাবে দিচ্ছে। এই বোনাস ইন্টারনেট শুভঙ্করের ফাঁকি হিসেবে দেখছেন তথ্যপ্রযুক্তিবিদরা। নানা কায়দায় অফার দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়ার বিষয়টি নিয়ে বিটিআরসি বেশ কয়েক দফা অপারেটরদের চিঠি দিয়েছে। এরপর গত বছরের শুরুতে ৩৫টির বেশি অফার গ্রাহকদের দিতে পারবে না বলে মোবাইল অপারেটরদের নির্দেশ দেয়। কিন্তু বিটিআরসির এই নির্দেশ কোন অপারেটর মানছে না। তারা ইচ্ছেমতো নতুন নতুন অফার দিয়েই যাচ্ছে। টেলিভিশনে নানা অফারের বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। মোবাইলে অফারের এসএমএস দেয়া হচ্ছে। অফারের বিষয় নিয়ে বিটিআরসি দু’একটি অপারেটরকে সতর্কও করলেও তারাও নির্দিষ্ট অফারের বাইরে অফার দিয়েই যাচ্ছে। অফার গ্রহণ করতে গিয়ে গ্রাহকরা প্রতিনিয়ত প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। ইন্টারনেট, কল ও এসএমএস নিয়ে ৩৫টির বেশি অফার দিলে বিটিআরসি অপারেটরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল গত বছরের শুরুতে। কিন্ত এখন পর্যন্ত কোন অপারেটরের বিরুদ্ধে এ বিষয়ে কোন ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বিটিআরসি বলছে, মোবাইল অপারেটরদের বিভিন্ন অফার ও ইন্টারনেট প্যাকেজ থেকে শুরু করে কলড্রপ সব কিছু মনিটর করা হবে। অপারেটররা অফার ও ইন্টারনেট প্যাকেজের নামে প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার বিষয়ে গ্রাহকদের কয়েক হাজার অভিযোগ বিটিআরসিতে জমা পড়েছে। এগুলো আমলে নেয়া হবে। গত বছরের মার্চে বিটিআরসির বোর্ড মিটিংয়ে মনিটরিং সেল স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। এবার ফোর জি চালু পর এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে বিটিআরসি। মনিটরিং সেল যে কোন অপারেটরের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে তদন্ত করবে। তদন্তে প্রতারণার অভিযোগ প্রমাণিত হলে, আইন অনুযায়ী গ্রাহককে বড় অংকের টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে সংশ্লিষ্ট অপারেটরকে। মোবাইল অপারেটরগুলোকে এ বিষয়ে বিটিআরসি কয়েক দফা চিঠি দিয়ে সতর্ক করলেও অপারেটররা তার কোন গুরুত্ব দেয়নি। এবার বিটিআরসি নিজ উদ্যোগে ব্যবস্থা নেবে। বিটিআরসি সূত্র জানিয়েছে. অপারেটররা নানা ধরনের অফার দিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা হাতিয়ে নেয়ার কারণে বিটিআরসি ৩৫টি অফার নির্দিষ্ট করে দেয়। মোবাইল অপারেটররা ২০টি রেগুলার অফার ও ১৫টি প্রমোশনাল অফার দিতে পারবে। এর বাইরে অপারেটররা কোন অফার ঘোষণা করলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়ে দিয়েছে বিটিআরসি। কিন্তু বিটিআরসির দেয়া নির্দেশ মোবাইল অপারেটররা মানছে না। তারা ৩৫টির বেশি অফার এখনও দিয়ে যাচ্ছে। অফারের নামে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। বিটিআরসির নির্দেশ অমান্য করে মোবাইল অপারেটরা গ্রাহকদের নানা অফার দিয়েই যাচ্ছে। অফারের প্রলোভনে পড়ে গ্রাহকরা ওইসব অফার গ্রহণ করছেন। এতে গ্রাহকরা নানাভাবে প্রতারিত হচ্ছেন। অফার গ্রহণ করতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট মোবাইল অপারেটরকে ফিরতি এসএমএস পাঠাচ্ছে। এতে বেশির ভাগ অফার অকার্যকর হচ্ছে। গ্রাহক কোন সুবিধা পাচ্ছেন না। কিন্তু গ্রাহক থেকে এসএমএস’র টাকা কেটে নিচ্ছে অপারেটররা। এমন প্রতারণা বন্ধ করতেই বিটিআরসি উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু বিটিআরসির উদ্যোগের কোন তোয়াক্কা করছে না মোবাইল অপারেটররা। তারা তাদের কাজ করেই যাচ্ছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক কমিশন (বিটিআরসি) জারি করা নির্দেশে উল্লেখ করা হয়েছিল, কমিশনের তত্ত্বাবধানে মোবাইল সেবা বিষয়ক অনুষ্ঠিত গণশুনানির আলোকে এবং গ্রাহকের স্বার্থ বিবেচনা করে এখন থেকে প্রতি মোবাইল অপারেটর একসঙ্গে সর্বোচ্চ ২০টি রেগুলার অফার এবং ১৫টি প্রমোশনাল অফার বাজারজাত করতে পারবে। এছাড়াও মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে গ্রহাকদের বিল শক থেকে রক্ষা করতে ‘পে পার ইউজ’ ৫ টাকার বেশি কাটা যাবে না। তবে কোন গ্রাহক ৫ টাকার বেশি লিমিট নিতে চাইলে তার কাছ থেকে এসএমএস বা ইউএসএসডির মাধ্যমে কনসান্ট নিতে হবে যাতে গ্রহক পরবর্তীতে অভিযোগ করলে অপারেটর দৃশ্যমান প্রমাণ তুলে ধরতে পারেন। এ সিদ্ধান্ত গত বছরের মার্চ থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। কোন অপারেটর বিটিআরসির নির্দেশ অমান্য করলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিটিআরসির এই নির্দেশ ১৫ মাস পার হয়ে গেলেও বাস্তবায়ন হয়নি। গ্রাহক স্বার্থের কথা মাথায় রেখে বিটিআরসি বোর্ড সভায় বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। বিটিআরসির অনুমোদন ছাড়াই বিভিন্ন প্যাকেজ ও অফার দিচ্ছে মোবাইল অপারেটররা। দিনের কোন অংশে কত পয়সা মিনিট বা সেকেন্ড, আবার কোন নির্দিষ্ট অংকের টাকা রিচার্জ করলে ‘এত মিনিটি ও এত এসএমএস ফ্রি’। এসব অফার পাঠিয়ে গ্রাহকদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলছে। গ্রাহকরা এসব অফার গ্রহণ করে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। একইভাবে ইন্টারনেটের ক্ষেত্রেও অফার দিয়ে গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। মোবাইল গ্রাহকরা এসব এসএমএস’র কারণে এখন অতিষ্ঠ। এরপরও অপারেটররা কাজটি করেই যাচ্ছে। বিটিআরসি অপারেটরদের চিঠি দিয়ে সতর্ক করলেও অফার দিয়েই যাচ্ছে। সাধারণ গ্রাহক কোন না কোনভাবে প্রতারিত বা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে (নূন্যতম সম্ভবনা) বা আশঙ্কা রয়েছে এমন কোন প্যাকেজ বা অফার অনুমোদন দেয়া হবে না। গ্রাহকদের ফিটব্যাক ব্যবস্থা রাখতে হবে। কোন প্যাকেজ বা অফারের মেয়াদ সর্বনিম্ন ৭ দিন হতে হবে। তবে ঈদ, পূজা, বড়দিন ও নববর্ষ এসব ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যবস্থা আলাদাভাবে স্বল্প সময়ের জন্য (নূন্যতম তিন দিন) অনুমোদন দেয়া হবে। যদি কোন অপারেটর বিশেষ দিনগুলোতে নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে কম অফার দেয় তাহলে ওই অপারেটরের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোন অফার বা প্যাকেজ গ্রাহকের অনুমোদন ছাড়া স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হবে না। কোন অফার শেষ হওয়ার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। মাসিক অফার হতে হবে নূন্যতম ৩০ দিন। মাসিক অফার ৩০ দিনের এক ঘণ্টা কম হলেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। যে সব গ্রাহক বিটিআরসিতে অভিযোগ দিয়েছেন, তারা সমাজের সচেতন ও শিক্ষিত মানুষ। তারা বিটিআরসি পর্যন্ত আসার মতো সুযোগ তাদের রয়েছে। যারা খুব সাধারণ গ্রাহক তারা নানাভাবে প্রতারণার শিকার হলেও বিটিআরসি পর্যন্ত আসতে পারছেন না। দেশে বর্তমানে ১৪ কোটির ওপরে মোবাইল গ্রাহক। প্রতিদিন যদি মোবাইল অপারেটররা এক টাকা করেও হাতিয়ে নিলে প্রতিদিন ১৬ কোটি টাকা গ্রাহকদের কাছ থেকে কত কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছে।
×